X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সরকারি জমিতে গাছ কেটে আ. লীগের অফিস

রাফসান জানি
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:১২আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:০৯

 

সরকারি জমির গাছ কেটে করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের অফিস ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জায়গা ও ওয়াসার খালের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এ কারণে কেটে ফেলা হয়েছে বেশ কয়েকটি পুরনো গাছ। পল্লবী ১২ নম্বর সেকশনের ‘ই’ ব্লকে ওয়াসা পাম্প সংলগ্ন খাল ও জায়গা দখল করে নিজেদের কার্যালয় বানাচ্ছে ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ।

সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, কয়েকটি ওয়ার্ডের পানি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এই খালই একমাত্র পথ। এটি ধীরে ধীরে দখলের কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই কার্যালয় নির্মাণ হয়ে গেলে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।

পাশেই ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ। দলীয় কার্যালয় নির্মাণের  কাজ শুরুর পর থেকে নেতাকর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে এখানে। এ কারণে কলেজছাত্রীদের স্বাভাবিক চলাফেরায় ভাটা পড়েছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়— খালটি ২, ৩, ৫ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড হয়ে বয়ে গেছে বায়োনিয়া খালে। এটি স্থানীয়ভাবে ‘সাংবাদিক খাল’ নামে পরিচিত। খালের পাশ দিয়ে একটি রাস্তার জন্য জায়গা রাখা হয়েছিল। রাস্তাটি ‘ই’ ও ‘ধ’ ব্লকের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। কিন্তু ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় তা আলোর মুখ দেখার আগেই অন্ধকারে চলে গেলো বলে মন্তব্য এখানকার বাসিন্দাদের।

  গাছ কেটে ফেলা হয়েছে শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ সংলগ্ন একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘সাংবাদিক খালটি আগে অনেক বড় ছিল। দিনে দিনে এটি দখল হচ্ছে। সবশেষ যতটুকু খাল অবশিষ্ট ছিল তারও প্রায় অর্ধেক দখল করে নিয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়।’

রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, খালের পাশে তৈরি হচ্ছে ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়। দোতলা ভবনের প্রায় আশি ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের সুবিধার্থে দখল করা হয়েছে খাল ও সিটি করপোরেশনের জায়গা। এছাড়া কেটে ফেলা হয়েছে অন্তত পাঁচটি বড় গাছ। এগুলোকে এই জায়গাটিকে ছায়ানিবিড় করে রেখেছিল বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

পল্লবী ১২ নম্বর সেকশনের ‘ই’ ব্লকের একজন বাসিন্দা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আওয়ামী লীগের নির্মাণাধীন কার্যালয়ের ঠিক উল্টো পাশে রয়েছে একটি ফার্মেসি। এখানে নিয়মিত বসে সময় কাটাতেন ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মোল্লা সজল। হঠাৎ এই জায়গাটি তার নজরে পড়ে। এরপর এখানকার একটি ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করে তিন মাস আগে ক্ষমতাসীনদের দলীয় কার্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ সময় কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আজও (১৭ ডিসেম্বর) একটি বড় গাছ কাটা হয়েছে বলে জানা গেলো।

ডিএনসিসি ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন, যে জায়গা দখল করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় তৈরি হচ্ছে তা ডিএনসিসির। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

  সরকারি জমিতে গাছ কেটে আ. লীগের অফিস কার্যালয়টির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে তিন মাস আগে। এতদিনেও কেন কাজ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বিএনপির। আর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ। এ কারণে মূলত ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনের বিরুদ্ধে কিছু বলার সক্ষমতা কাউন্সিলরের নেই। তাই হয়তো দেখেও চুপ হয়ে আছেন তিনি।’

এদিকে সরকারি জায়গা ও খাল দখল করে দলীয় কার্যালয় নির্মাণকে অবৈধ বলে মনে করছেন না ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মোল্লা সজল! তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই জায়গাটা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমরা উদ্যোগ নিয়ে ১৭ বাই ৩৪ বর্গফুট স্থানে কার্যালয় স্থাপন করছি। সরকার চাইলে ভবনটি যে কোনও কাজে ব্যবহার করার জন্য আমরা ছেড়ে দেবো।’

দোতলা এই দলীয় কার্যালয়টি নির্মাণে কত খরচ হচ্ছে ও কে বা কারা সেই খরচ বহন করছেন জানতে চাইলে ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হচ্ছে তা বলা যাবে না। আর এই খরচ বহন করছি আমরা নেতাকর্মীরাই।’

তবে গাছ কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘এখানে বড় কোনও গাছ কাটা হয়নি। যেটি কাটা হয়েছে তা জংলা গাছ।’

  আওয়ামী লীগের নির্মাণাধীন অফিস সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তমিজ উদ্দিন চৌধুরী মন্টু। তিনি দাবি করেন, খাল সংলগ্ন স্থানটি অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। এলাকায় অপরাধ কমানো ও কলেজে ছাত্রীদের চলাফেরা স্বাভাবিক রাখতে এই স্থানে দলীয় কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সরকারি জায়গায় দলীয় কার্যালয় নির্মাণের বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে স্বীকার করেছেন ৯১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার ভাষ্য, ‘জায়গাটা সিটি করপোরেশনের। আমরা এখানে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করছি। কারণ এই জায়গা অপরাধের আখড়া হয়ে গিয়েছিল। আমাদের কার্যালয় পুরোপুরি চালু হলে এখানে অপরাধ কমতে পারে।’

 

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

 

 

/জেএইচ/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিঙ্গাপুর থেকে আসবে ৫৮৪ কোটি টাকার এলএনজি
সিঙ্গাপুর থেকে আসবে ৫৮৪ কোটি টাকার এলএনজি
রংপুরে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রংপুরে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
কমলো বিমানের জ্বালানি তেলের দাম
কমলো বিমানের জ্বালানি তেলের দাম
আগামী দিনেও গণমানুষের সাংবাদিকতা করবে বাংলা ট্রিবিউন: শুভেচ্ছাবার্তায় সাইফুল হক
আগামী দিনেও গণমানুষের সাংবাদিকতা করবে বাংলা ট্রিবিউন: শুভেচ্ছাবার্তায় সাইফুল হক
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি