X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ইজিপ্টএয়ার থেকে আনা বিমানের লোকসানে মন্ত্রী-সচিবের ক্ষোভ

চৌধুরী আকবর হোসেন
২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:২৫আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৪১

বৈঠকে বিমানমন্ত্রী ও সচিব

২০১৪ সালে ৫ বছরের জন্য ইজিপ্টএয়ার থেকে দু’টি উড়োজাহাজ ‘বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর’ লিজে এনেছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ দুই উড়োজাহাজের জন্য মাসে ১০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই এয়ারলাইন্সকে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও সচিব মহিবুল হক।

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর রবিবার (২০ জানুয়ারি) প্রথমবারের মতো বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় যান বিমান প্রতিমন্ত্রী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক। পরে এক বৈঠকে লিজের উড়োজাহাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

বৈঠকে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বিমানের ব্যবস্থাপক (পরিচালনা) ও সিইও মোসাদ্দিক আহমেদের কাছে জানতে চান, লিজে আনা উড়োজাহাজের জন্য কত দিন বিমানকে লোকসান গুণতে হবে?

জবাবে মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘এটা (দু’টি উড়োজাহাজ) নেওয়ার পর থেকেই ইঞ্জিন মেরামতের জন্য আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ইঞ্জিন যখন সপে গেলো, সপে স্পেয়ার্সপাস পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে ইঞ্জিনগুলো ফেরত আসছিল না।’

তখন মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রশ্ন তুলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যে টেকনিশিয়ান যাচ্ছেন, তারা মিশরে ইজিপ্টএয়ারের সঙ্গে মিলে গেলো কিনা কিংবা ইজিপ্ট নিজেরাই কোনও  অনৈতিক কাজ করছে কিনা –এসব বিষয় দেখার কথা তো বলেছিলাম। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে আর কিছু জানতে পারিনি। এ দুই উড়োজাহাজ অনাধিকাল ধরে যদি এভাবে থাকে, তবে বিমানের ভিটায় ঘু ঘু চড়তে সময় লাগবে না। একবছর ১২ মাসে ১০ কোটি টাকা করে ১২০ কোটি টাকা কোনও কারণ ছাড়া লস গুণছে বিমান এবং  আরও কতদিন লস গুণবে তারও কোনও ইয়াত্তা নেই।’

বৈঠকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমেদ জানান, ইজিপ্টের সঙ্গে হওয়া চুক্তি ‘স্টান্ডার্ড’ ছিল।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে  মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘এ উড়োজাহাজ নিয়ে এত সমস্যা হচ্ছে, আমি জানলাম না কেন?  আমি প্রয়োজনে ইজিপ্টএয়ারের সঙ্গে কথা বলতাম। আপনারা (বিমান) যখন কোনও সমস্যায় পড়েন, তখন ছুটে যান মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু যখন সমস্যা থেকে উতরে যান, তখন আপনারা কোম্পানি হয়ে যান, তখন মন্ত্রণালয় কিছুই না। এ মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে আপনাদের।’

বিমান সূত্রে জানা গেছে, মিশরের ইজিপ্টএয়ার থেকে ৫ বছরের চুক্তিতে ড্রাই লিজে ২টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বিমান। ২০১৪ সালের মার্চে একটি উড়োজাহাজ (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইসএল, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬৩০) বিমানবহরে যু্ক্ত হয়। অন্য উড়োজাহাজটি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইসকে, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬২৯) যুক্ত হয় একই বছরের মে মাসে। চুক্তি অনুসারে উড়োজাহাজ দু’টি যাত্রী পরিবহন করুক আর না করুক, মাসে উড়োজাহাজ প্রতি ৫ লাখ ৮৫ হাজার ডলার (৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা) ভাড়া দিতে হবে। সব ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করতে হবে। ৫ বছর আগে চুক্তি বাতিলের করতে পারবে না বিমান। লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দু’টি আগের অবস্থায় (ভাড়া নেওয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল) ফেরত দিতে হবে।

২০১৪ সালের বিমানবহরে যু্ক্ত হওয়ার একবছর পরই লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজটির (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএইসএল, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬৩০) একটি ইঞ্জিন বিকল হয়। পরবর্তী সময়ে ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ার ইঞ্জিন দিয়ে সচল করা হয় উড়োজাহাজটি। নষ্ট ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় লন্ডনভিত্তিক ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সে। সেই ইঞ্জিন মেরামত করে ফেরত আনার আগেই ৩ বছরের মাথায় আবারও নষ্ট হয় ইঞ্জিন। তখনও ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। বিকল ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কাছে। বিমান দু’টি ফেরত দিতে গত বছর ২৯ আগস্ট পরামর্শ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক পরিসরে দরপত্র আহ্বান করে। সর্বনিন্ম খরচে লিজের চুক্তি পর্যবেক্ষণ করে উড়োজাহাজ দু’টি ফেরত দেবে পরামর্শ প্রতিষ্ঠান।

বিমানের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা না করে চুক্তি করায় লিজে আনা উড়োজাহাজ দু’টি বিমানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত কমিশনের জন্য বিমানের স্বার্থ না দেখে চুক্তি হয়ে থাকতে পারে। ফলে বিমান এখন উভয় সংকটে।’

টানা তিন ঘণ্টা বিমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এ মাসের মধ্যেই যাদের কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে বসবেন বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তারা দায়দায়িত্ব মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করবেন। বিমানগুলো ভিয়েতনামে পাঠানো হয়েছে। কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও এ দায় থেকে আমাদের অব্যাহতি পেতে হবে।’

বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মো. মোকাব্বির হোসেন, যুগ্ম-সচিব (সিএ) জনেন্দ্র নাথ সরকার, বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল, পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস) মমিনুল ইসলাম, পরিচালক (প্ল্যানিং) মো. মাহবুব জাহান খান, পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট) খন্দকার সাজ্জাদ রহিম, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মো. আশরাফুল ইসলাম, পরিচালক (ফাইন্যান্স) বিনিত সুধ প্রমুখ।

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘সরকারের অতি সুবিধাভোগীদের’ ইজ্জত রক্ষা করতে বললেন ইসি রাশেদা
‘সরকারের অতি সুবিধাভোগীদের’ ইজ্জত রক্ষা করতে বললেন ইসি রাশেদা
‘কমিউনিকেশান অ্যাসোসিয়েশানের’ আহ্বায়ক কমিটি গঠন
‘কমিউনিকেশান অ্যাসোসিয়েশানের’ আহ্বায়ক কমিটি গঠন
দীপকের গোলে অবশেষে রাসেলের হাসি
দীপকের গোলে অবশেষে রাসেলের হাসি
দিয়াবাড়ি লেকে পানিতে ডুবে ২ স্কুলছাত্রের মৃত্যু
দিয়াবাড়ি লেকে পানিতে ডুবে ২ স্কুলছাত্রের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ