‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) যে পদ্ধতি ব্যবহার করে সেটি স্বচ্ছ নয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিসূচক তৈরির পদ্ধতিটার মধ্যেই ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা) নেই। তাদের কাজের পদ্ধতি ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ) নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বুধবার (৩০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি আমলে টিআই -এর দুর্নীতি প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, এখন প্রত্যাখ্যান করছেন কেন? জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন যথেষ্ট কারণ ছিল। রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতি হয়েছে, সেটি প্রমাণিতও হয়েছে। খালেদা জিয়া নিজে কালো টাকা সাদা করেছেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা মনে করি এই প্রতিবেদন একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন। দুর্নীতির সূচক নির্ণয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) কাজের পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ ও বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে তাদের প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ তারা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি প্রতিবেদন দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) সারা বিশ্বে একযোগে দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করে টিআই। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের চার ধাপ অবনতি হয়েছে। ২০১৭ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম। ২০১৮ সালে এটা হয়েছে ১৩তম।
প্রতিবেদনের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, টিআই কোন পদ্ধতিতে এই ধারণাসূচক তৈরি করেছে সেটি তারা সুনির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার করেনি। আমরা জানি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিসূচক নিরূপণের মেথডোলজি হচ্ছে কিছু তথাকথিত বিশেষজ্ঞ ব্যবসায়ীর মতামত গ্রহণ করা। তাদের বিভিন্ন জায়গায় নানা নামে কিছু কমিটি আছে, সেই কমিটিগুলোর মাধ্যমে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। অর্থাৎ তাদের মেথডোলজিটাই ত্রুটিপূর্ণ।’
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচনের পর নতুন সরকার যখন গঠিত হলো তখন নির্বাচন নিয়ে টিআইবি একটি গবেষণা প্রতিবেদন নাকি উপস্থাপন করেছিল। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটি গবেষণা প্রতিবেদন। অথচ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নির্বাচনে অবজারভার ছিল না। তাদের বক্তব্য আর বিএনপির বক্তব্যে ৮০ শতাংশ মিল ছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্য দেখে মনে হয়েছে, বিএনপির হয়ে যেন একটা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। সেটি যখন হালে পানি পায়নি তখন গতকাল (মঙ্গলবার) দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করেছেন। এটি করে আন্তর্জাতিকভাবে দেশ, দেশের জনগণ ও সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন মাত্র।’
টিআই -এর কাছে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ চাইবেন কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) ইতোমধ্যে তাদের কাছে তথ্য চেয়েছে, কোন পদ্ধতিতে এটি (দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ) করেছে সেই ব্যাখ্যা চেয়েছে। তারা দুদককে সেই ব্যাখা দিতে ব্যর্থ হলে আশা করবো তারা তাদের কাজের পদ্ধতির মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি আনবেন এবং এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বৈদেশিক ফান্ড পাওয়ার উদ্দেশে এবং নিজেদের সংগঠনকে আলোচনায় টিকিয়ে রাখতেই তারা এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেটি সমীচীন নয়। দুদকের চাওয়া জবাব তারা দেবেন এবং এ জবাব দিতে ব্যর্থ হলে দুদক নিশ্চয়ই কোনও একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’