X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৯ বৈশাখ ১৪৩২

আমি দেশবাসীকে ভিক্ষুক বানাতে চাই না: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
১০ মার্চ ২০২০, ১০:৫০আপডেট : ১০ মার্চ ২০২০, ১০:৫৪

আমি দেশবাসীকে ভিক্ষুক বানাতে চাই না: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীকে ভিক্ষুক বানাতে চান। তিনি বলেছেন,আমি তাদের কাজ দিতে চাই। মার্কিন জরুরি সাহায্য তহবিলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু বলেন,‘আমি আপনাদের বলছি— বিদেশ থেকে সাহায্য আসুক আর নাইবা আসুক, বাংলাদেশের যেসব সম্পদ আছে, তা নিয়ে সে টিকে থাকবে।’ দেশের বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী যারা আছেন, তারা যে যেখানে থাকুক বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে— জাতির সেবা করা বলেও বঙ্গবন্ধু স্মরণ করিয়ে দেন।

নিক্সন স্বীকার করুন আর না-ই করুন

বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্টভাবে বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতাকে নিক্সন স্বীকার করুন আর নাইবা করুন, বাংলাদেশ টিকে থাকার জন্যই এসেছে এবং চিরদিন তা টিকে থাকবে। বিশ্ব বাংলাদেশকে এরমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছে। বিশ্বের কোনও শক্তি আর  বাংলাদেশের বাস্তবতাকে নস্যাৎ করতে পারবে না।’ বাসসের খবরে প্রকাশ, ১০ মার্চ মার্কিন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু এই অভিমত ব্যক্ত করেন। ৭০ সদস্য বিশিষ্ট মার্কিন প্রতিনিধি দলটি সেসময়ে বাংলাদেশ সফর করছিল। তারা ১০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দিয়েছে ২০ বছর পর, চীনকে দীর্ঘ ২৩ বছর পর। কিন্তু নিক্সনকে পিকিং যেতেই হয়েছে।’

বাংলাদেশের প্রত্যেক অধিবাসী সমান

বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে যে বহুমুখী ঐতিহ্যবাহী আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি রয়েছে, তার প্রতি প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিগ্রোদের ব্যাপারে আপনারা যা করেছেন, এদেশে আমি কখনও তা করবো না। জাতি, ধর্ম ও সামাজিক প্রথা নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি অধিবাসী এদেশে সমান অধিকার ভোগ করবে।’ ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের ঘোষিত নীতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে দেখে আপনাদের খুশি হওয়া উচিত। কেননা, যে পাকিস্তানের সঙ্গে আপনাদের নিক্সন সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, সেই পাকিস্তানের চেয়েও বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি সুখী, স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক।

আমি দেশবাসীকে ভিক্ষুক বানাতে চাই না: বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যে আমার সরকার গ্রাম পর্যায়ে প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। নতুন জাতিকে গড়ে তোলার কাজ সর্বত্রই চলছে অবিরাম গতিতে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আরও  ট্রাক ফেরি-লঞ্চ দরকার।’ তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলেন, ‘পাকিস্তান হেলিকপ্টার ও অন্যান্য যানবাহনসহ আমাদের সম্পদ নিয়ে গেছে। নিয়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, বিমান ইত্যাদি। যা তারা নিয়ে যেতে পারেনি,তা এখানে ধ্বংস করে রেখে গেছে। তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে যোগাযোগ ব্যবস্থার।’

তিনি তার সাম্প্রতিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা আমাদের চারটি হেলিকপ্টার দিয়েছে। এগুলো দিয়ে বিভিন্ন স্থানে আমরা খাদ্যশস্য পাঠাতে পারবো। ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণকে মুক্ত হস্তে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে।’

বিদেশে বাংলাদেশের যেসব ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বিজ্ঞানী ও দক্ষ শ্রমিক রয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চেষ্টা করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। যে যেখানে থাকুক বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে জাতির সেবা করা। যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করার জন্য দেশে ফিরে আসা তাদের কর্তব্য। তাদের জন্য এদেশের দ্বার চিরদিন উন্মুক্ত।’

একাত্তরে অসহযোগ চলছে

১৯৭১ সালের এই মাসে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার লক্ষ্য সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। সেদিন ছিল ১০ মার্চ, বুধবার। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ সংগ্রামের নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী তৃতীয় দিনের মতো সবকিছু ছিল বন্ধ, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু খোলা ছিল নেতার নির্দেশে ব্যাংক ও ট্রেজারিগুলো। ১০ মার্চ তৎকালীন সামরিক শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন— ‘বাংলার মানুষকে দমন করা যাবে না। মুক্তির লক্ষ্য অর্জনে তারা যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।’ শাসকচক্র বৃহত্তর শক্তি গড়ে তোলায় তুষ্ট ছিল না। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসেরও ষড়যন্ত্র ছিল। এমনকি ঘূর্ণি দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল।

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
তিব্বতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত
তিব্বতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত
দিনাজপুরের সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
দিনাজপুরের সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করাতে ভোগান্তির শিকার রোগীরা
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল হাসপাতালে ফিল্ম সংকটএক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করাতে ভোগান্তির শিকার রোগীরা
টিভিতে আজকের খেলা (১২মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১২মে, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল