X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবারহীন জীবনে নিম্নবিত্তের মানুষ

উদিসা ইসলাম
২২ আগস্ট ২০২০, ১৪:০০আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২০, ০৮:৫০

করোনা দুর্যোগে কর্মহীন নিম্নবিত্তের মানুষ খাদ্য সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছেন করোনাকালে দীর্ঘ ছুটি, ঘরে বাইরে সব কাজ বন্ধের কারণে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া শ্রমজীবী নিম্নবিত্তের মানুষ গত জুন থেকে ঢাকায় ফিরলেও পরিবার সঙ্গে নিয়ে  ফিরতে পারেনি এখনও। নতুন করে ঘরভাড়া করা, এখনও কাজের অনেক জায়গা বন্ধ থাকার কারণে খরচ বাঁচাতেই পরিবারহীন জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন সাহেব আলী। মার্চে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেলে এক মাসের ভেতর বাসার জিনিসপত্র গুছিয়ে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ গ্যাস বিল দেওয়ার  উপায় নেই, তিনবেলা ভাত জোগাড় করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। জুন থেকে সব আবার খুলতে শুরু করলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি ফিরে আসেন ঢাকায়। প্রথমে এক বন্ধুর ঘরে উঠে পাশেই আরেকটা ঘরে সাবলেট হিসেবে থাকছেন এ মাস থেকে। আগের রেস্টুরেন্ট খুললেও অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই হওয়ায় শুরু হয় কাজ খোঁজার যুদ্ধ। কোরবানির ঈদের পর থেকে পাড়ার একটা রেস্টুরেন্টে রান্নার কাজ নিয়েছেন। সাহেব আলী বলেন, ফিরে এসে কীভাবে থাকবো না থাকবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই স্ত্রী সন্তানকে রেখেই এসেছি। কাজ করে কিছু টাকা জমলে একটা আলাদা ঘর ভাড়া করে তবেই নিয়ে আসবো।

এই শহরে প্রায় একযুগ ধরে ডাব, ভাদ্রমাসে তাল, কখনও সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেন রমিজ মিয়া। মার্চ থেকে মে তিনমাস উপার্জন বন্ধ থাকায় বউ বাচ্চাদের গ্রামে পাঠিয়ে দেন। জুনে নিজেও চলে যান। রমিজ মিয়া বলেন, দেশেও কোন কাজ নাই। তার ওপর বর্ষার মৌসুম। সবমিলিয়ে যা জমানো কিছু টাকা ছিল। ভাইয়ের বাড়িতে বসে খেলাম। কিছু দাদন নিয়ে একটা ঘর তুলে দিয়ে জুলাইয়ের শেষে  ঢাকায় এসে পড়েছি। কিন্তু এসে দেখি লোকজন সবকিছুতেই ভয় পায়। ভ্যানের কিছু কিনতে চায় না এখনও। মার্চের থেকে এখন আয় কমে অর্ধেকের কম হয়েছে। আর কবে পরিবার নিয়ে থাকতে পারবেন সেই চিন্তাও করছেন না এখন।

মার্চের ২০তারিখ পর্যন্ত কাজ পেতেন রাজমিস্ত্রি আলামিন হোসেন। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর আর কাজের প্রশ্নই ওঠে না। কোনও বাসাবাড়িতে ঢোকা নিষেধ, নিজের বাসা থেকে বাইরে বের হওয়া নিষেধ। কয়দিনে হাঁড়িতে টান ধরে। এরপর বাকি পড়তে থাকে বাড়ি ভাড়া। দুই মাস পরে কবে নাগাদ সব স্বাভাবিক হবে আন্দাজ করতে না পেরে চলে যান গ্রামে। সেখানে অন্তত তিনবেলা খাওয়ার জন্য দৌড়াতে হচ্ছে না। ছোট ছোট গয়না যা ছিল তা বন্ধকে গেছে। এরপর ঢাকার পরিস্থিতি বুঝতে এই মাসের শুরুতে ঢাকায় আসেন। এখনও নিয়মিত কাজ  পাচ্ছেন না। এই পরিবার বিচ্ছিন্ন জীবন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কোনোদিন ভাবিনি, এই বয়সে একা একা ভাত ফুটিয়ে খেতে হবে, মেসে থাকতে হবে।

ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২ হাজার ৩৭১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্র্যাক মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে দেখা যায়, কেবল ঢাকা জেলার মানুষের আয় কমেছে ৬০ ভাগ। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যারা কাজ করেন, তাদের ৬২ ভাগই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। ৩৬ শতাংশ লোক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন।

পুরোপুরি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আসলে এই পরিবারগুলো এক হতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এখনও ফিরছি। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না স্বাভাবিক অবস্থায় চলে যাচ্ছি। এখনও প্রতিদিন করোনায় ৩৫ থেকে ৪০ জন মারা যাচ্ছেন। অথচ আমার জীবিকার তাগিদে বসে থাকার উপায় নেই বলে বের হতে হচ্ছে। সামনে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বের হবে। স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং তার সঙ্গে জড়িত যে অর্থনীতি সেটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে  যায়নি। তিনি আরও বলেন, ভুলে গেলে চলবে না যে মানুষগুলো পরিবার রেখে এসে আয় রোজগার করতে চেষ্টা করছেন তারা গত ৫ মাস বেকার ছিলেন। ফলে হুট করে সবাই মিলে ঢাকায় ফিরেই আবার আগের মতো বসবাস করতে পারবেন, টিকে যাবেন সেই আত্মবিশ্বাস তাদের নেই। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঢাকা ছেড়ে গিয়েছেন সপরিবারে, কিন্তু ঢাকায় ফিরেছেন একা। আবার তারা কখন সপরিবারে থাকার মতো পরিস্থিতি পাবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি কাটিয়ে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক  কার্যক্রমে ফিরবো যখন আমরা তখন এই নিম্নবিত্তের মানুষদের জীবন সহজ হবে।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু