(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ জানুয়ারির ঘটনা।)
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে যে জয়লাভ করবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের রাজনৈতিক সংবাদদাতা বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য প্রতিবেদনে এ কথা বলেন। বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো বিচ্ছিন্ন এবং তাদের কোনও ক্ষমতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল জয়লাভ করবেন তা-ই নয়, বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, তবে তা আওয়ামী লীগের জন্যই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের এই জয়লাভের সম্ভাবনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানের দীর্ঘ সামরিক শাসন ও নির্যাতন এর কারণ। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসনামলে নির্যাতন এমনই ছিল যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অন্তত ১০ বছর কারাভোগ করতে হয়।’
তরুণ কান্তি ঘোষ ঢাকায়
১৯৭৩ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের বাণিজ্য, শিল্প ও পর্যটনমন্ত্রী তরুণ কান্তি ঘোষ। সাক্ষাৎকালে তাদের মাঝে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এনা’র খবরে বলা হয়, এদিন তিন দিনের সফরে তরুণ কান্তি ঘোষ বাংলাদেশে আসেন। এর আগে তিনি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি তার সৌজন্যমূলক সাক্ষাতের একটি অংশ।
বঙ্গবন্ধু নিজ বাড়িতে যাচ্ছেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ জানুয়ারি বিকালে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে হেলিকপ্টারযোগে রওনা দেবেন বলে পত্রিকায় জানানো হয়। সেখানে এক জনসভায় তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার কথা। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার নিজস্ব বাড়িতেও যাবেন। সংক্ষিপ্ত সফর শেষে পরের দিন তিনি ঢাকায় ফিরে আসবেন বলে বাসসের খবরে নিশ্চিত করা হয়। এ সফরে অন্যদের মধ্যে তার সঙ্গে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ।
দৈনিক বাংলার কর্মীরা গণভবনে
দৈনিক বাংলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এদিন মৌন মিছিল নিয়ে গণভবনে যান এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে আলোচনা করে তারা তাদের সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান ও নির্বাহী সম্পাদক তোয়াব খানের প্রতি জারি করা নির্দেশ বাতিল করে তাদের দৈনিক বাংলায় বহাল রাখার অনুরোধ জানান। বঙ্গবন্ধু বিস্তারিত আলোচনা শেষে আবার তিনদিন পর আলোচনায় বসার কথা জানান।
পল্টন ময়দান থেকে বিরোধীদের হুঁশিয়ারি
পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের জনসভা থেকে আহ্বান জানানো হয়, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যকারীদের সক্রিয়ভাবে রুখে দেওয়া এবং মুজিববাদ প্রতিষ্ঠায় কাজ করার। বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনও নাম নয়, এটি বাঙালি জাতির মর্যাদা ও স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক। তার বিরুদ্ধে কোনও অশালীন মন্তব্য বাংলাদেশের জাগ্রত জনতা সহ্য করবে না। ছাত্রলীগের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম। ছাত্রলীগের এই জনসভায় যোগ দিতে দূরদূরান্ত থেকে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। ‘বঙ্গবন্ধুর অবমাননাকারীদের বাঙালি জাতি সইবে না’, ‘বঙ্গবন্ধুর যেখানে আমরা আছি সেখানে’, ‘রব-ভাসানী-মোজাফফর বাংলার মীরজাফর’ প্রভৃতি স্লোগানে মিছিলকারীরা আকাশ-বাতাস মুখর করে তোলে।
জনসভায় নূরে আলম সিদ্দিকী বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসুন।’ মোজাফফর আহমেদ, আসম আব্দুর রব, মওলানা ভাসানীর সাম্প্রতিক সময়ের কার্যক্রমের সমালোচনা করে তিনি ঘৃণা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘এরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভয়ঙ্কর অশালীন মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। এরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের গোপনে হত্যা করছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই এতদিন এদের সহ্য করেছেন। এটা তার দুর্বলতা নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, তাই নির্বাচন দেখলে পিলে চমকায়।’ এরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে নেমেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।