(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১২ মার্চের ঘটনা।)
নির্বাচনে জয়ের পর হালকা মেজাজে একটি ব্যস্ততম দিন পার করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এইদিনে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন তিনি। সহকারী নেতা নির্বাচিত হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের নেতা ও সহকারী নেতা নির্বাচন করা হয়। সরকারি দলের চিফহুইপ নির্বাচনের ক্ষমতা দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। বৈঠক থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে দেশ থেকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
স্বপ্নের কথা জানালেন
সদস্যদের বিরাট দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন দেশবাসীর ম্যান্ডেট তারা পেয়েছেন। এখন দলের ইস্তেহার পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত করা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। তিনি তাদের সর্বান্তকরণে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।
দেশ ও জাতির সর্বোচ্চ স্বার্থে বঙ্গবন্ধু ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করারও আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর বলেন বাংলার মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ বিধান করা ও তাদের মুখে হাসি ফোটানো তার সারা জীবনের স্বপ্ন এবং এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রয়োজনে তিনি সকলের আত্মশুদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেন বঙ্গবন্ধু। আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কোরবান আলী এই প্রস্তাব সমর্থন করেন।
শপথ গ্রহণ ১৬ মার্চ
নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রস্তাব গ্রহণ বৈঠকের শুরুতেই তাজউদ্দিন আহমেদ প্রস্তাব পেশ করেন। একটি প্রস্তাবে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের যত ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দ্বিতীয় প্রস্তাবে পাবনার মরহুম বগা মিয়ার আত্মার কল্যাণ কামনা করা হয় এবং যারা গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন তাদের সকলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। তৃতীয় প্রস্তাবটিতে গুপ্ত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করা হয় এবং এই ধরনের কার্যকলাপ প্রতিরোধের ঘোষণা করা হয়। প্রস্তাব শেষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নতুন মন্ত্রিসভার শপথ
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৬ মার্চ নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নির্বাচিত নেতা হিসেবে এইদিন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার পর বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য প্রকাশ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভাকে নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
১২ মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধু তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবেন। এইদিন সাড়ে পাঁচটায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে যান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতির প্রধান সচিব। এরপর প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কক্ষে উপস্থিত হন। বঙ্গবন্ধু সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় সংবাদে নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কেউ থাকছেন কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু পাল্টা প্রশ্ন করেন- আপনি কি প্রতিমন্ত্রী হতে চান? সাংবাদিক বলেন, আমি তো সদস্য না। প্রধানমন্ত্রী তখন কৌতুক করে বলেন, আপনি ইচ্ছে করলে উপনির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন।
এর আগে দুপুরে পার্লামেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে এতে কোনও উপমন্ত্রী থাকবে না।