স্বাধীনতা লাভের ৫০ বছর হয়ে গেলেও এখনও সেই স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে যারা বিতর্ক তৈরি করতে চায় তারা বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি’ বলে নানা সময় অপপ্রচারের চেষ্টা করে। কিন্তু মিথ্যাচারের জবাব খোদ বঙ্গবন্ধুর বয়ানেই পাওয়া যায়।
১৯৭৩ সালে নির্বাচনি প্রচারণায় জেলায় জেলায় যখন বক্তৃতা করছেন বঙ্গবন্ধু, তখনই তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ২৫ মার্চ আটক হওয়ার মুহূর্তে তিনি কীভাবে স্বাধীনতার বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু তার নির্বাচনি গণসংযোগ সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং পটিয়ায় আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে বলেন, ২৫ মার্চের সেই রাতে শত্রুর হাতে আটক হওয়ার আগমুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। জনগণকে শত্রুর মোকাবিলা করে স্বাধীনতা অর্জনের আহ্বানও জানিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম বিডিআর ক্যাম্পে তিনি তাঁর বাণী দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের নির্দেশ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত এগারোটায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন কামান ও ট্যাংক নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, মেতে ওঠে খুনের উন্মত্ততায়, ঠিক তার পরেই রাত সাড়ে এগারোটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে নির্দেশ পাঠালেন স্বাধীনতা যুদ্ধের। বললেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে হবে। কোনও আপস নয়। হানাদারদের তাড়িয়ে দিতে হবে। জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে পাঠানো বার্তায় তিনি পুলিশ, আনসার, ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের জওয়ানদের হাতিয়ার তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
আপস নয়, জয় হবেই
বঙ্গবন্ধু তার নির্দেশবার্তায় বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিত হামলায় পিলখানায় ইপিআর বাহিনীর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণ করেছে। নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। বিশ্ববাসীর কাছে আমার আকুল আহ্বান, আমাদের সাহায্য করুন, মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরবিক্রমে লড়াই করছে। আমি আপনাকে আহবান করছি, আদেশ দিচ্ছি, আল্লাহর নামে যুদ্ধ করুন। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশকে মুক্ত করুন। পুলিশ, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসার বাহিনীকে হাতিয়ার তুলে নিয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলুন। কোনও আপস নয়। জয় আমাদের হবেই। মাতৃভূমির পবিত্র মাটি থেকে শেষ শত্রুকে তাড়িয়ে দিন। সমস্ত আওয়ামী লীগের কর্মী এবং সকল দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের ঘরে ঘরে আমার এই নির্দেশ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।’
এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি অংশ ছিল মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতির ইঙ্গিত। পরে নিয়মিত যেসব বৈঠক তিনি করেন তার সবকটিরই লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই ও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার।
গত ২১ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। ইতিহাস বিকৃত করে একজনকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ গঠনসহ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে এখন বঙ্গবন্ধুর অবদানের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। বিভিন্ন জায়গায় রেজুলেশন হচ্ছে- ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্বনেতারা তা দেখছেন এবং প্রচারও করছেন। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মিথ্যা দাবি আর কেউ গ্রহণ করবে না।’