X
সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলবে না: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
৩০ মার্চ ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২১, ০৮:০০

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩০ মার্চের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবারও সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। এ দেশে সবারই পূর্ণ ধর্মীয় অধিকার রয়েছে। কেউ কাউকে এতে বাধা দিতে পারবে না। তবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা এ দেশে চলবে না। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি’ ও ‘ইসলামি শিক্ষা সংস্কার সংস্থা’র যৌথ জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দলীয় স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করে ইসলামের চরম অবমাননা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ধর্মকে মূলধন করে যারা রাজনীতি করেছে, তাদের ধর্মপ্রীতি ছিল নিতান্তই লোক দেখানো। ধর্মীয় অনুশাসনকে এরা কখনোই অন্তর দিয়ে গ্রহণ করেনি এবং অনুশাসন মেনে চলেনি।’

পাকিস্তান মুখেই ইসলামিক রিপাবলিক

সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মুখে ইসলামিক রিপাবলিক হিসেবে নিজেদের খুব ফলাও করে প্রচার করলেও পাকিস্তানে কোনও দিনই ইসলামবিরোধী তৎপরতা, মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি।’ ইসলামের নামে বাংলাদেশের বুকে তারা যে নারকীয় বর্বরতা চালিয়েছে তার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু আবেগ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘কোন ধর্ম আছে এ ধরনের অত্যাচারের কথা? কোন ধর্মে আছে মানুষের ওপর এমন শোষণের নজির?’ তিনি বলেন, ‘ইসলামের নামে এখানে চলেছে গণহত্যা, মা বোনের ওপর চলেছে পাশবিক অত্যাচার, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম, চলছে লুটতরাজ।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নির্যাতিত মানুষের পক্ষে তখন আমরা যা কিছুই করতাম, সেসবকে অনৈসলামিক বলে অভিহিত করতো।’ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পরিণতি প্রসঙ্গে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কোটি কোটি মুসলমান সেখানে মার খাচ্ছে।’

শিক্ষাব্যবস্থা বদলে নয়া কমিশন

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শুধু মাদ্রাসা শিক্ষায় নয়, দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করতে হবে। ইংরেজরা শোষণের সুবিধার জন্য এদেশে যে কেরানি তৈরি করার শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে গেছে, তা একটি স্বাধীন জাতির পক্ষে কিছুতেই কল্যাণকর হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা এমন হতে হবে, যাতে কাউকে আর বেকার থাকতে না হয়। সবাই যাতে দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োগ করতে পারে।’ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ে তোলার উপযোগী একটি শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য তিনি এরইমধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছেন বলে জানান।

বাংলাদেশ অবজারভার, ৩১ মার্চ ১৯৭৩ ধর্মীয় অধিকারের সঙ্গে ধর্ম শিক্ষার অধিকারও থাকবে

মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কিত দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, এ বিষয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি তিনি দিতে অপারগ। কারণ, শিক্ষা কমিশনের ওপর কোনও বক্তব্য তিনি চাপিয়ে দিতে চান না। তবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ধর্মীয় অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম শিক্ষার অধিকারও এদেশে থাকবে। মুসলমানরা যেমন তাদের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে, তেমেই অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার থাকবে— তাদের নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের।’

আমাদের চরিত্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে এ দেশের মানুষের ধর্মীয় অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে বলে একসময় ধর্মীয় নেতারা যে অপপ্রচার চালিয়েছিল, আজ  তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় অধিকার খর্বতো হয়ইনি, বরঞ্চ এদেশে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব এখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও এবছর এদেশ থেকে ৬ হাজারের বেশি লোককে হজে যেতে দেওয়া হয়েছে।’ জাতীয় চরিত্র উন্নত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সম্পদ গেলে সম্পদ পাওয়া যায়, কিন্তু চরিত্র গেলে তা ফিরে পাওয়া যায় না।’ গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এত রক্ত ঝরার পরও আমাদের চরিত্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা সম্পদ লুটে নিয়ে গেছে। কিন্তু যে চরিত্র তারা রেখে গেছে, তাকে কত দিনে উৎখাত করতে পারবো জানি না।’

/ইউআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
চোখে ক্রোধ, গালে ক্ষতচিহ্ন, কী বলতে চায় ইরফান সাজ্জাদ?
চোখে ক্রোধ, গালে ক্ষতচিহ্ন, কী বলতে চায় ইরফান সাজ্জাদ?
এনবিআরের ভাঙন ঘিরে অর্থনীতিতে স্থবিরতা
এনবিআরের ভাঙন ঘিরে অর্থনীতিতে স্থবিরতা
মোবাইল চোর সন্দেহ ফল ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
মোবাইল চোর সন্দেহ ফল ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
বড় ধরনের রুশ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ‘নীরবতায়’ ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি
বড় ধরনের রুশ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ‘নীরবতায়’ ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি
সর্বাধিক পঠিত
রাস্তার পাশাপাশি মেট্রোস্টেশনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাস্তার পাশাপাশি মেট্রোস্টেশনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে সব ধরনের আমদানি-রফতানি
সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে সব ধরনের আমদানি-রফতানি
বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন: যুক্তরাষ্ট্র
বিক্ষোভে উত্তাল সচিবালয়
বিক্ষোভে উত্তাল সচিবালয়
নিজ জেলায় জামায়াত আমির, দিনব্যাপী কর্মসূচি
নিজ জেলায় জামায়াত আমির, দিনব্যাপী কর্মসূচি