(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২০ মে’র ঘটনা।)
ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এশীয় শান্তি সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এই দিন বিভিন্ন স্পট ঘুরে পত্রিকাগুলো সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরে। বিশ্ব শান্তির তিন সম্মানিত ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতিতে শেষবার তুলির কাজ করছেন শিল্পীরা। এই তিন জন সংগ্রামী নেতা হচ্ছেন—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হো চি মিন ও বিশ্ব শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র। ‘শান্তির সপক্ষে সংগ্রাম’ এই স্লোগানে শহরজুড়ে প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল। অধিবেশন স্থল হোটেল পূর্বাণীর প্রাঙ্গণে একটি প্রচার স্তম্ভ করা হয়। শান্তি নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয় এতে। এদিকে সম্মেলন স্থলে নির্মাণাধীন প্যান্ডেলের কাজের অগ্রগতি ঘুরে ঘুরে দেখেন বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি আব্দুস সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক আকসার। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা আগেই জানানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ঢাকায় আগত ভিয়েতনাম ও লাওসের শান্তি প্রতিনিধিদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে এক অভিনন্দন বার্তা দেন। এদিন জিল্লুর রহমান তার বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এশিয়ার দুই মহান দেশের প্রতিনিধিদের আগমনে খুবই আনন্দিত।’
জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এদিন বলেন, ‘শান্তিকামী জনতার একতায় বিশ্ব শান্তি সংগ্রামকে জোরদার করবে। এশীয় শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য রাজধানী ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আসন্ন শান্তি সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাটিতে শান্তিকামী মানুষের সমাবেশ আমাদের জন্য গর্ব ও গৌরবের বিষয়। আমি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের পক্ষ থেকে ভিয়েতনাম ও লাওসসহ সম্মেলনে আমন্ত্রিত শান্তি প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাই।’ এদিন বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে এই সাক্ষাৎকার পর্বে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রতিনিধি দলের নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সংযোগের পরিকল্পনা
ভারতের সেচ ও বিদ্যুৎ দফতরের মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতকে উভয় দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বণ্টনের ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যবস্থা সমন্বিত চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।’ ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, ‘উভয় দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোকে ভিত্তি করে উভয় দেশের যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্যই এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক এবং এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। তবে উভয় দেশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক নির্দেশ পাওয়ার পরেই বিশেষজ্ঞরা আলোচনা নিয়ে অগ্রসর হবেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের অধিকাংশ পানি অপচয় হয়। পানিসম্পদ ব্যবহারের জন্য ভারতের জাতীয় মহাপরিকল্পনায় ব্রহ্মপুত্র নদের একটি খালের সাহায্যে গঙ্গা নদীর সঙ্গে যুক্ত করার উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি রয়েছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে খাল কাটা হবে। অবশ্য এই কর্মসূচি বাংলাদেশের অনুমোদন সাপেক্ষে করা সম্ভব। বলা হয় যে, দুই নদীর মধ্যে সংযোগ সাধনের ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশও উপকৃত হতে পারবে।’
খাদ্য নিয়ে পাঁচটি জাহাজ নারায়ণগঞ্জে
আনরডের পাঁচটি জাহাজ ৮ হাজার ২২০ টন খাদ্যশস্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এদিন শীতলক্ষ্যার তীরে ঘাটে এসে পৌঁছায়। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ বরিশাল-পটুয়াখালী-চাঁদপুর ও কুমিল্লায় তার সফর বাতিল করেন। বলা হয়, ঢাকায় ব্যস্ততার কারণে তার এই সফর বাতিল হয় এবং পরিবর্তিত তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে।
যুদ্ধবন্দিরা রেডিও পাকিস্তান শুনতে পারবেন
ভারতের ৫০টি শিবিরে অবস্থানকারী ৯০ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি ও বেসামরিক মানুষ পাকিস্তান রেডিও ও বিবিসির সংবাদ শুনতে পারবেন। যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে কর্নেল থেকে এর ওপরের র্যাংকের সব সামরিক অফিসারকে ট্রানজিস্টার রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনও স্টেশন শুনতে পারবেন। পাকিস্তানের অপপ্রচার শোনার জন্য যুদ্ধবন্দিদের অনুমতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রতিনিধিরা কয়েক দফা এসব বন্দিশিবির পরিদর্শন করেছেন এবং এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি ও বেসামরিক ব্যক্তিদের সঙ্গে এসব শিবিরে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা সন্তোষজনক।