(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৭ জুনের ঘটনা।)
১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুরু হয়। ৫৫০ কোটি টাকার সাবসিসটেন্স ইনভেস্টমেন্ট বা আগাম বিনিয়োগসহ এর আকার ৫ হাজার কোটি টাকার মতো বলে আশা করা হয়। দেশের প্রথম এ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বার্ষিক উন্নয়নের লক্ষ্য ধরা হয় শতকরা ৫ দশমিক ৫ ভাগ।
এদিন জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন দেশের ১৯৭৩-৭৪ সালের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রকাশ করে এবং এ পরিকল্পনায় দেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এদিন প্রকাশিত বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় ১৯৭৩-৭৪ সালকে প্রথম ভিত্তি বছর ধরা হয়। ৫৫০ কোটি টাকার সাবসিসটেন্স বিনিয়োগ বাদে বাকি ৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার মধ্যে বেসরকারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৫শ’ কোটি টাকা এবং সরকারি খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয় তিন হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।
বন্যা সমাধানে সরকার ওয়াদাবদ্ধ
দেশের বন্যা পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করেছে, জাতীয় অর্থনীতির ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের শঙ্কা দেখা দিয়েছে- জাতীয় সংসদে এদিন একথা বলেন বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ।
বন্যাকবলিত এলাকার অবস্থা খুবই বেদনাদায়ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর সপ্তাহখানেক সময় পেলেই কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারতো। জাতীয় সংসদে বিবৃতি দেওয়ার সময় মন্ত্রী এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, দেশের বেশকিছু জেলা প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। সেবারের অকাল বন্যায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেটের এলাকাগুলো প্লাবিত হয়।
১৯৫৪ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই দেশে বন্যা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিবছর বন্যায় দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ভেঙে যাচ্ছে। কারণ জনগণ একটি বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার তার শিকার হচ্ছে।
সম্পর্কোন্নয়নের আভাস ইন্দিরা গান্ধীর
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষের কারণগুলো দূর হবে এবং এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। যুগোস্লাভিয়া ও কানাডা সফরশেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে কাজ করছি।
প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় ভারত-পাকিস্তান বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ইন্দিরা গান্ধী। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সর্বশেষ পত্রটি ভারতের হাতে পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি। যা ভারত ও বাংলাদেশে এখন পর্যালোচনা করে দেখছে। ভারত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না এই মর্মে অঙ্গিকার করা ভারতের পক্ষে বিচক্ষণতার পরিচয় হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে শ্রীমতি গান্ধী বলেন, আমাদের যখন একটা সুস্পষ্ট নীতি রয়েছে তখন একথা আমরা কেন বলবো না।
দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ১০৪ ভাগ
দেশে খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, চিনি, মাছ-মাংস ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের মূল্য শতকরা ১০৪ ভাগ বেড়েছে। এইদিনে ১৯৭৩-৭৪ সালের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকাশিত পরিকল্পনা কমিশনের এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানানো হয়। সমীক্ষায় পণ্যমূল্য আকাশচুম্বী হওয়ার মূল কারণ হিসেবে বলা হয়- মুদ্রা সরবরাহ শতকরা ৮৩ ভাগ বৃদ্ধি ও পণ্য সরবরাহ হ্রাস পাওয়া, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হ্রাস, খাদ্যশস্যের স্বল্প উৎপাদন, যোগাযোগের অসুবিধা, সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা অভাব, উপযুক্ত বাজার ব্যবস্থার অভাবে মুষ্টিমেয় মধ্যস্বত্বভোগীর মুনাফা অর্জন।