(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৭ আগস্টের ঘটনা।)
ব্রিটেনের ইউরোপীয় সাধারণ বাজারে যোগদানের পর বাণিজ্য শুল্ক সম্পর্কিত ব্যাপারে উন্নয়নশীল দেশসমূহের ওপর যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে সেসব প্রশ্নাবলী সমাধানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। এটি ছিল কমনওয়েলথে তার দ্বিতীয় বক্তৃতা।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে আরও কিছুকালের জন্য বাণিজ্য শুল্ক সম্পর্কিত ব্যাপারে বিশেষ সুবিধা ভোগের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কমনওয়েলথের ৩২ জন সরকারপ্রধান বিশ্ব শক্তির সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনা শেষ করে অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা শুরু করেন। অটোয়া থেকে এনার খবরে বলা হয়, ঘরোয়া পরিবেশে আলাপ-আলোচনার পর এই দিন সকালে পুনরায় অধিবেশন শুরু হয়।
কমনওয়েলথ সম্মেলনে এ অধিবেশনে বিশ্বের বর্তমান মুদ্রার সংকট ও জটিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেl এ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন বক্তব্যে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। অধিবেশনে বক্তব্য অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বর্তমান সংকট এবং উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে দেশের স্বার্থের পরিপন্থী বর্তমান বাণিজ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের মতামতের সাবলীল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ব্যাখ্যা করেন।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো উন্নয়নশীল দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয় উপস্থাপন করে উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাণিজ্য সম্পর্কিত বিশেষ সুবিধা ভোগের ব্যবস্থার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন। অটোয়ায় অসুস্থতার পর বঙ্গবন্ধু এ অধিবেশনে যোগদান করেন। সম্মেলনে যোগদানকারী উন্নয়নশীল দেশের নেতৃবৃন্দ ১৯৭৪ সালের পরেও বাণিজ্য সম্পর্কিত বর্তমানে চালু বিশেষ সুবিধা ভোগের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে ব্রিটেনকে অনুমতি দানে ইউরোপীয় সাধারণ বাজার অংশীদারদের পর অবশ্যই প্রভাব বিস্তার করবে বলে সুপারিশ করা হয়।
খবরে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়কমন্ত্রী শরম সিং আন্তঃবাণিজ্য বিষয়ে কমনওয়েলথ সম্মেলনে বিতর্কের অবতারণা করে। তিনি বলেন, এটাই বাঞ্ছনীয় যে ৩২ জাতিগোষ্ঠী সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ বাজারকে এর মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানাবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেন, ইউরোপীয় সাধারণ বাজারে যোগদানের পর মুক্ত দেশসমূহের বাণিজ্যিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য ভারতের অনুরোধ তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তবে তিনি প্রস্তাব করেন যে ১২ মাস সময় শেষে কমনওয়েলথভুক্ত কোন উন্নয়নশীল দেশ অসুবিধা ভোগ করে থাকলে তখন ব্রিটেনের সে ব্যাপারে কী করতে পারবে তা বিবেচনা করে দেখবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলন
সে বছর ১১ আগস্ট ইউরোপে নিযুক্ত বাংলাদেশের ১২ জন রাষ্ট্রদূতের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন জেনেভায় শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনে ভাষণ দান করবেন এবং উপমহাদেশে পরিস্থিতিসহ আন্তর্জাতিক ঘটনা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সেক্রেটারি তোফায়েল আহমেদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৩ আগস্ট দেশে ফিরবেন। তিনি কমনওয়েলথ অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে যোগদান করছেন। মঙ্গলবার বিপিআই জানায়, সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণ জাতির পিতাকে সংবর্ধনার জন্য অপেক্ষা করছে।
দুই বছরের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা
কৃষিমন্ত্রী আব্দুস সামাদ বলেন, প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশকে আগামী পাঁচ বছরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার কথা বলেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সকলে মিলে সামগ্রিক প্রচেষ্টা চালালে মাত্র দুই বছরের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যাবে। এই দিন কারিগরি মিলনায়তনে কৃষি দফতরে আয়োজিত জাতীয় শস্য উৎপাদন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ উপলক্ষে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী নজরুল ইসলাম এক বাণীতে বলেন, শস্য উৎপাদন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিজয়ীদের ‘সবুজ বিপ্লব’ সফল করে তোলার আহ্বান জানানো হচ্ছে।