(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্টের ঘটনা।)
১৮ আগস্ট নয়াদিল্লিতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলোর আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত পিএন হাকসারের ঢাকায় আসার দিন নির্ধারণ হয়েছে। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন এবং বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ফিরে যাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
দিল্লি বৈঠকে পাকিস্তানের আন্তরিকতার পরীক্ষা হবে
এ দিন (১৪ আগস্ট) বিকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন দিল্লিতে আসন্ন পাক-ভারত আলোচনাকে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন বলেন, ‘আসন্ন দিল্লি বৈঠকে পাকিস্তানের আন্তরিকতার সত্যিকারের পরিচয় হবে। জনৈক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের মানবীয় সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে বড় রকমের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শান্তি কামনা করে। তাই যুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে দ্বার উন্মুক্ত করেছে। পাকিস্তান এখন ইচ্ছে করলে দরজা বন্ধ করে দিতে পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রে দায়িত্ব তার ওপর বর্তাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার অনুষ্ঠান বিরোধ মীমাংসার পথে অন্তরায় হতে পারে না। আসন্ন বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে তিনি আশাবাদী কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সমস্যার সমাধান চাই। এজন্য আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করেছি। সকলে আমাদের প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করেছে। কিন্তু পাকিস্তান যদি আলোচনা ব্যর্থ করে দেয়, তাহলে তাদের আন্তরিকতার অভাব প্রমাণিত হবে।’ পাকিস্তানে ২০৩ জন বাঙালির বিচার সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, এটা ব্ল্যাকমেইল, আমরা এর নিন্দা করি।’
কামাল হোসেন আটক বাঙালিদের বিচারের প্রহসনের হুমকিকে ‘নৃশংস’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি জানান, ইসলামাবাদ বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণের জন্য ভারতীয় প্রতিনিধি ঢাকায় আসছেন।
ইউএনআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ২৩ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই রাওয়ালপিন্ডিতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের মধ্যে যেআলোচনা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এ ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে অবগত আছেন। খবরে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃক ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার অনুষ্ঠান এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে পাকিস্তানের অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করলেও বাংলাদেশ আলোচনাসাপেক্ষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে। বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের সম্পর্ক বলতে গেলে পাকিস্তান তাদের মাত্র ৫০ হাজার নাগরিককে ফেরত নিতে রাজি আছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সরকারের বিশ্বাসের অঙ্গ
এদিন তথ্যমন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিশেষ অংশ।’ তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন থাকবে।’ তথ্যমন্ত্রী সংবাদ সংস্থা এনার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন।’ তথ্যমন্ত্রী আজিজ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না বলেও জানান।
এ দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় ভুট্টোকে এ দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর অভিনন্দন পাঠান। নয়াদিল্লিতে পাক-ভারত পরবর্তী দফা বৈঠক শুরু হওয়ার ঠিক আগে এই বার্তায় গান্ধী আশা প্রকাশ করেন, সদিচ্ছা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উপমহাদেশের সমস্যাবলীর সমাধান হবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ফজলে এলাহীর কাছে পাঠানো এক অভিনন্দন বাণীতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি আস্থা প্রকাশ করেন যে, ভারত ও পাকিস্তান সদিচ্ছা ও সমঝোতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যকার সকল সমস্যার সমাধান এবং উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারবে।