X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া সেক্টর কমান্ডার কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর নজির নেই: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩১ আগস্ট ২০২১, ১৩:২৩আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২১, ১৮:২৯

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনও গুলি চালিয়েছে এ রকম কোনও নজির নেই। সরকার প্রধান বলেন, সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ যখন আহত হন তখন দায়িত্ব পান জিয়া।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এখনও যুদ্ধাপরাধী, পরাজিত শক্তি এবং ১৫ আগস্টের খুনি, ফাঁসি যাদের হয়েছে তারা তো বটেই, তাদের ছেলেপেলে যারা এবং যুদ্ধাপরাধী, যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদেরও ছেলেপেলে, দোসর বা বংশধর তারা এখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে, ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল তাদের কিছু কিছু এদের মদত দিয়ে থাকে। কাজেই এ ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, পদে পদে সতর্ক থাকতে হবে।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় যারা স্থানীয় দালালচক্র, যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর, তারা কোনও দিন চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। তারপরও যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, বিজয় অর্জন করলো, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হলো, তখন সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৫ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ড তারা চালিয়েছিল। এরপরে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান‑ যে স্লোগান দিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে, সেই স্লোগান নিষিদ্ধ করলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছিল। ভাবখানা এমন হয়েছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আবার সেই পাকিস্তানের একটা প্রদেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন সৃষ্ট এবং সেই পাকিস্তান এসে আবার আমাদের ওপর খবরদারি করবে, অনেকের এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পরে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে, সেখানে আমাদের দলের কিছু বেইমান-মোনাফেক-মীরজাফর ছিল। যেমন খন্দকার মোশতাক গং। আর তার শক্তিটা ছিল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে একটা সেক্টর কমান্ডার অর্থাৎ সেখানে খালেদ মোশাররফ আহত হলে জিয়াকে সেক্টর কমান্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জিয়াউর রহমান কখনও গুলি চালিয়েছে‑ এ রকম নজির নেই। এ রকম কোনও নজির কেউ দেখাতে পারবে না।

তিনি বলেন, যখন মোশতাক বা রশীদ-ফারুক বিবিসিতে ইন্টারভিউ দিয়েছে ১৫ আগস্টের পর, সেই ইন্টারভিউতে তারা স্বীকার করেছে। শুধু তা-ই না, অনেক পত্রিকায়ও তাদের বক্তব্য এসেছে। জিয়াউর রহমান এই খুনিদের সঙ্গে সব সময় ছিল এবং জিয়াউর রহমানই ছিল মূল শক্তির উৎস। সে-ই বেইমানিটা করেছিল। অথচ জিয়াউর রহমান ছিল একটা মেজর। স্বাধীনতার পর মাত্র তিন বছরের মধ্যে মেজর থেকে একটা প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করা হয়েছিল। সেটা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব‑ সমস্ত সেনাবাহিনী যখন তিনি পুনর্গঠন করেন।

সরকার প্রধান বলেন, কাজেই সেটাও তাদের ভোলা উচিত না, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বদৌলতেই জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হয়েছিল। পাকিস্তান দেশটা থাকলে ওই মেজর হিসেবেই তার রিটায়ার্ড করতে হতো। তার ওপরে আর উঠতে পারতো কিনা সন্দেহ। কিন্তু সেই বেইমানি-মোনাফেকি তারা করেছিল। তখন যে ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল‑ কেউ নেয়নি। জাতির পিতার লাশ, সবার লাশ ১৬ তারিখ পর্যন্ত ওই বত্রিশ নাম্বারের বাড়িতেই ছিল। কাফন-দাফনের ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত করা হয়নি।

তিনি বলেন, যারা বেইমানি করে এবং এই বেইমানির ইতিহাস যদি দেখা যায়‑ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন‑ সেই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা, হাজার হাজার সেনাবাহিনীর সদস্যকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এমন এমন রাত গেছে যে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি হয়েছে। ১০ জন, ২০ জন‑ এ রকম করে একেক রাতে ফাঁসি, শত শত লোককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কে দিয়েছে? জিয়াউর রহমান দিয়েছে। শুধু ঢাকা জেলে না, খুলনা, রাজশাহী বিভিন্ন জায়গায় এই হত্যাকাণ্ড সে চালিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মেধাবী ছাত্র, তাদের হাতে একদিকে যেমন মেধার জন্য পুরস্কার তুলে দিয়েছে অপর দিকে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, অর্থ তুলে দিয়েছে, মাদক তুলে দিয়েছে এবং তাদের ব্যবহার করেছে। তাদের বিপথে নিয়ে গেছে। এ রকম বহু মেধাবী ছাত্রকে জিয়াউর রহমান বিপথে ঠেলে দিয়েছে। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষার কোনও পরিবেশ ছিল না। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় আসে তখনও সে হুমকি দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে তার ছাত্রদলই নাকি যথেষ্ট। তার কারণ ছাত্রদলের হাতে তারা অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তাদের লেখাপড়া করতে উৎসাহিত করেনি।

তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম‑ লেখাপড়া শিখতে হবে। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি‑ এই আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগকে তৈরি হতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান, এরপরে এরশাদ, তারপরে খালেদা জিয়া‑ তারা কি করেছে? তারা ছাত্র সমাজকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক এই জাতি এটা তারা কখনও চায়নি। অবশ্য চাইবেই বা কী করে, নিজেদের কী অবস্থা সেটাও তো দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে ১৫ আগস্টের যে হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে, এরপরে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। এছাড়াও বহুবার আমার ওপরে হামলা। এমনকি চুয়াত্তর সালে কামালের ওপর হামলা হলো। তাকেও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হলো। যখন দেখলো সে বেঁচে গেছে তখন তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হলো। মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হলো। অর্থাৎ যারা পরাজিত শক্তি তারা সব সময় সক্রিয় ছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের ভূমিকা রয়েছে। আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জন‑ সেই মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বা মিলিটারি ডিক্টেটরশিপের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা যেকোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সব সময় ছাত্ররাই করেছে। ছাত্ররাই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। এ ধরনের বাধাবিঘ্ন আসতে থাকবে। সৎ পথে থাকলে, সত্যের পথ সব সময় কঠিন হয়, সে কঠিন পথকে যারা ভালোবেসে এগিয়ে যেতে পারে, তারাই সাফল্য আনতে পারে।

/পিএইচসি/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
স্যামসন-জুরেলের ব্যাটে লখনউকে সহজে হারালো রাজস্থান
স্যামসন-জুরেলের ব্যাটে লখনউকে সহজে হারালো রাজস্থান
মুগদায় তীব্র গরমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মৃত্যু
মুগদায় তীব্র গরমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মৃত্যু
কাপ্তাই হ্রদে নাব্য সংকট, ৫ উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ
কাপ্তাই হ্রদে নাব্য সংকট, ৫ উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু