বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনা দিলেও দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। ১৩ জানুয়ারি থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করার কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের করোনার ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের। বিমানবন্দরে জায়গার স্বল্পতা, বিপুল সংখ্যক যাত্রীর টেস্ট করার সক্ষমতা না থাকায় সহসা টেস্ট চালুর উপায় খুঁচ্ছে অধিদফতর।
করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। এর ব্যত্যয় হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটে ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালিত হয় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দিনে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ হলেও আকাশপথে চলাচলে নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে ২ ডিসেম্বর রাতে জারি করা নির্দেশনা পালন করা হচ্ছে। শুধু সাউথ আফ্রিকাসহ সাত দেশ থেকে বাংলাদেশে আসলে ১৪ দিন হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। সাত দেশ হচ্ছে বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, ঘানা, লেসোথো, নামিবিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে।
এই দেশগুলো থেকে আসলে ১৪ দিন নিজ খরচে হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সেখানে সাত দিন পর এক বার এবং ১৪ দিন পর আবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার খরচ যাত্রীকেই বহন করতে হবে। এছাড়া পৃথিবীর বাকি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরটি পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট থাকতে হবে। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে আসলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। আর যার ভ্যাকসিন না নিয়ে আসবেন তাদের ১৪ দিন বাড়িতে যেয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দিনে ১০ হাজার যাত্রী দেশে আসেন। তাদের করোনার ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই করতে হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের। একইসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা, অন্যান্য গন্তব্যের যাত্রীদের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই করতে হিমশিম খেতে হয়। নতুন করে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে বিমানবন্দরে রয়েছে জায়গা স্বল্পতা, জনবল সংকট। প্রস্তাব করা হচ্ছে, সব যাত্রীর বদলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা করে শুধু সেসব দেশে থেকে আসা যাত্রীদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ বিমানবন্দরে জায়গা নির্ধারণ, পরীক্ষার উপকরণ ও জনবল চেয়ে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে। এমন পরিস্থিতিতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালুর কৌশল খুঁজছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এজন্য ২৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হবে।
জায়গার সংকটের কথা উল্লেখ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, প্রতিদিন ১০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন। তাদের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই করতে যে লাইন হয় সেটির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। জায়গার সংকটের কারণে বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে আমিরাতগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার ৫০০ যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা কঠিন।
শাহজালাল বিমানবন্দরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর প্রচেষ্টা থাকলেও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে সেই তৎপরতা নেই। এই বিমানবন্দরটিতে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট না থাকায় শিগগিরই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর কথা ভাবছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনার টিকা ও পরীক্ষার সনদ যাচাই করছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে এখনও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে জায়গার সংকট রয়েছে। করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা কিভাবে করা যায় সেটি যাচাই করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি, বিমানবন্দরগুলোতে সব যাত্রীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করতে।