X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাগরের ইলিশ নদীতে নেই কেন

শফিকুল ইসলাম
২৪ জুলাই ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ০৮:০০

সাগরে ইলিশ ধরা পড়ার সংবাদ আসছে কয়েক দিন ধরে। কিন্তু রাজধানীর বাজারে ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে যা মিলছে সেগুলোও পুরনো— ফ্রিজে সংরক্ষণ করা। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। উঠে গেছে সরকারি বিধিনিষেধ। বেড়েছে পানি-বৃষ্টি। যার প্রভাবে গভীর সাগরে ধরা পড়তে শুরু করেছে ইলিশ। কিন্তু রাজধানীর বাজারে সহজলভ্য হয়নি এখনও। সাগরে ধরা পড়া ইলিশগুলো আকারে ছোট বলেও জানিয়েছেন জেলেরা।

আবার জেলেরা জানিয়েছেন, সাগরে কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও নদীতে একেবারেই মিলছে না ইলিশ। বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুরের নদীতেও নেই প্রত্যাশা অনুযায়ী। এতে শুধু জেলেরাই নন, ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আড়তদাররাও।

নদীতে কেন ইলিশ নেই

জানা গেছে, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ হলেও ডিম ছাড়ার সময় নদীতে আসে। আবার সাগরে লবণের পরিমাণ বাড়লে বা পানি বেশি গরম হয়ে গেলেও ইলিশ নদীতে আসে। কিন্তু নানা কারণে নদীতে এখন আর ইলিশ স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছে না। নদীতে ডুবোচর বেড়ে যাওয়া ও দূষণকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

ইলিশের ধর্মই হচ্ছে সোজা পথে চলা। ডুবোচরে বাধা পেলে ওরা বিকল্প পথ না খুঁজে ফিরে যায় সাগরে। তবে শ্রাবণ মাসে সাগর-নদী সবখানেই পানি বাড়ার কথা রয়েছে। তাই সামনের দিনগুলোতে নদীতে ইলিশের দেখা মিলবে, এমন আশায় আছেন নদীর জেলেরা।

জেলেরা জানিয়েছেন, শুধু ডুবোচরই নয়, নদীতে অত্যাধিক পলির কারণে পানিও ঘোলা। ঘোলা পানিতে ইলিশ বিচরণ করতে পারে না। আবার বৈরী আবহাওয়ার কারণেও উত্তাল সাগর থেকে নদীতে আসতে পারছে না ইলিশের ঝাঁক। যে কারণে হিজলা, কালিগঞ্জ, মেঘনা, ঢালচর, সোনারচর, রূপারচর নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদ-নদী দূষণমুক্ত না রাখলে ইলিশের উৎপাদন ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

এদিকে কয়েকজন জেলের অভিযোগ, ‘মা ইলিশ রক্ষার নামে চলে অভিযান। আবার ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন জাটকা রক্ষায় নদীতে ইলিশ ধরায় থাকে নিষেধাজ্ঞা। মাছের ডিম ছাড়ার জন্য এলাকাভিত্তিক অভিযানও চলে দুই মাস। এসব সময় বাদ দিলে বছরে ইলিশ ধরার জন্য সময় থাকে কতটুকু?’

বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, এখন ইলিশের দেখা মিলছে গভীর সমুদ্রে। মোংলা পোর্টের বাইরে যেখান থেকে জাহাজ চলাচল করে সেই খাড়িতে এবং সোনারচর থেকে ৬-৭ ঘণ্টা বোট চালানো দূরত্বে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এখন লম্বা জাল ও লাল জালে ধরা পড়া ইলিশ যা আসছে তা বরিশালের মোকামে যাচ্ছে। সেগুলোর দামও বেশি।

চলছে না সংসার

পিরোজপুরের পাড়ের হাটের ইলিশ ব্যবসায়ী মান্নান হওলাদার জানিয়েছেন, শুনেছি সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু নদীতে পাচ্ছি না। গত বছরের এই সময়ে বেশ ধরা পড়লেও এবার হাতেগোনা। এ দিয়ে সংসার চালানো দায়।

ভোলার ইলিশ ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, ইলিশের অভয়ারণ্য খ্যাত মেঘনা, কালাবদর, ইলিশা, তেঁতুলিয়া, পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর, সন্ধ্যা এসব নদীতেই ইলিশের দেখা নেই।

পটুয়াখালীর মহিপুরের আকরাম মাঝি জানিয়েছেন, স্থানীয় নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে তার। ইলিশের আকালে এখন অচল হওয়ার পথে তার পাঁচ সদস্যের সংসার।

আকরাম জানান, ভোরে ফজরের আজানের আগে ৪-৫ জন মিলে নদীতে জাল ফেলেন। জাল তোলার পর মাত্র দুই-তিনটি ইলিশ ধরা পড়ে। ওগুলো বিক্রি করে যা পাওয়া যায় সেটাও আবার চার ভাগ করতে হয়।

মাছে মাইলফলক

‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২২’ শিরোনামে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চাষের মাছ উৎপাদনে তিনটি দেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকায় মিসর এই সাফল্য দেখিয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে স্বাদুপানির মাছের ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যার পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ টন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাদুপানির পাখনাযুক্ত মাছ (ফিনফিশ) উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। এর মধ্যে ইলিশও আছে।

বাংলাদেশে মুক্ত জলাশয় থেকে মোট ১৩ লাখ টন মাছ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে ইলিশই আছে প্রায় ছয় লাখ টন।

ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনও বিশ্বে এক নম্বরে আছে। পাখনাযুক্ত অন্য প্রধান সাতটি মাছ হচ্ছে রুই, কাতল, পাঙাশ, তেলাপিয়া, গ্রাসকার্প ও সিলভার কার্প।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬৫ হাজার টনে।

আরও জানা গেছে, গত ১২ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতিও পেয়েছে। এমনকি দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এখন এক শতংশেরও বেশি।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ইলিশ জিআই সনদ পেয়ে নিজস্ব পরিচয়ে বিশ্ববাজারে হাজির হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, প্রাণিজ আমিষের যোগান ও দারিদ্র্য বিমোচনে ইলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সরকার নানামুখী সমন্বিত কার্যক্রম নিয়েছে।

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিরপুরে ট্রাফিক বক্সে আগুন দিলো অটোরিকশাচালকরা
মিরপুরে ট্রাফিক বক্সে আগুন দিলো অটোরিকশাচালকরা
অচিরেই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে
অচিরেই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে
রাজস্ব আদায়ে সব মাইলফলক অতিক্রম করবে: মেয়র তাপস
রাজস্ব আদায়ে সব মাইলফলক অতিক্রম করবে: মেয়র তাপস
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হ্যান্ডগ্রেনেড ও অস্ত্রসহ ৪ আরসা সদস্য আটক
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হ্যান্ডগ্রেনেড ও অস্ত্রসহ ৪ আরসা সদস্য আটক
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক