জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবেলা করে উদ্যোগ না নিলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনও সুন্দরী গাছ থাকবে না।
শনিবার রাজধানীতে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ‘আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বিষয়ক কর্মশালার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এ সমস্যার সমাধান তাই অতীব জরুরি। প্রয়োজন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস তহবিল গঠনের। ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের সব আলোচনা এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় দরকষাকষিতে ক্ষয় ও ক্ষতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।’
পরিবেশ ও জলবাযু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবেলায় যদি সঠিকভাবে কাজ না করা হয়, তবে আগামী ২০ অথবা ৩০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনও সুন্দরী গাছ থাকবে না। এখনই ওই এলাকার মানুষকে লবণাক্ততার কারণে পানি কিনে খেতে হয়। যে কারণে যতটুকু পানি তাদের পান করা দরকার, সেটি তারা পারছে না। এরকম চলতে থাকলে, তারা কিডনি সমস্যাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় পড়বেন।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সেটি এখনও নিরূপিত হচ্ছে না। নেই সম্মিলিত কোনও উদ্যোগ। মানুষের আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানুষিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের একটা দাবি ছিল, দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা করা। ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মত জলবায়ু ও ক্ষতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের, এত বছর পরও আমরা আমাদের ক্ষতির মাত্রা নিরূপণ করতে পারিনি। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে এটা করা খুবই জরুরি।’
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘জলবায়ু ও দুর্যোগ নিয়ে সবার মধ্যে স্পষ্ট ও শক্ত ধারণা তৈরি করতে হবে। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে। সেটি না করতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা অর্থনৈতক, সামাজিক ও শারীরিকভাবে আরও বেশি সমস্যায় পরবেন।’
বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জলবায়ু দুর্যোগ তীব্র আকার ধারণ করছে। এর বিরূপ প্রভাব পরবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর মানুষের জীবন, অর্থনীতি এবং পরিবেশের ওপর।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব উত্থাপনের উদ্দেশ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, এনএসিওএম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ দু’দিনের এই কর্মশালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি ছিলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। খবর: বাসস।
/এসটি/