X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করুন

মানুষের ভাগ্য নিয়ে দুর্বৃত্তদের ছিনিমিনি খেলতে দেবো না: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:১১আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৪৪

কেউ দোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বিএনপি এমন স্বপ্নে বিভোর—মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেছেন, দেখি দেশে-বিদেশে গিয়ে হাহাকার করে বেড়ায়। কেঁদে বেড়ায়। মনে হচ্ছে বাইরের থেকে কেউ এসে একেবারে দোলায় করে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। এই স্বপ্নে তারা বিভোর। হয়তো একসময় সেটা করতে পেরেছে দালালি করে। এখন আর দালালি করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই। পারবে না।

বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা কোনোদিন যেন এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমরা সেটা খেলতে দেবো না। আর যা-ই হোক, দানবদের হাতে বাংলাদেশের জনগণকে ফেলে দিতে পারি না।’

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা এ দেশের মানুষের কোনোদিন কল্যাণও চায় না। মঙ্গলও চায় না। ওরা দেশটাকে ক্ষমতায় থাকতে খুবলে খুবলে খেয়ে গেছে। সংবিধানকে কলুষিত করেছে। স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। বিএনপির জন্মই হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে। যার ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে যে সংগঠন গড়ে উঠেছে, সেটাও তো অবৈধ। কাজেই দেশবাসী যেন সেটাকে অবৈধ বলেই প্রত্যাখ্যান করে। দেশবাসীর কাছে আমার সেটাই আবেদন।’

সরকারের উন্নয়ন ধরে রেখে সামনে এগোতে হবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন কাজগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারলে ভোটের কোনও সমস্যা আমাদের থাকবে না। ক্ষমতাও কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। আর যাহোক, দানবদের হাতে বাংলাদেশের জনগণকে ফেলে দিতে পারি না। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান সুরক্ষা ও উন্নত করা… উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ঠিক রেখে, উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ওদের হাতে ক্ষমতা গেলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাটাও ধ্বংস করে দেবে। সেটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। সেভাবে সংগঠনটাতে গড়ে তুলতে হবে। মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। নিজেদেরও তৈরি করতে হবে।’

বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তারা আন্দোলন করবে। সরকার উৎখাত করবে। অনেক কিছু বলে যাচ্ছে। অনেক আয়োজনও করেছে। আর আমাদের দেশে কিছু মানুষ থাকে। অসময়ে নীরব, সময়ে সরব হয়ে ওঠে। যখন এই ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপি খুব হম্বিতম্বি করছে, আমরাও দেখছি। যারা মিটিং করছে। মিছিল করছে। আমরা কিন্তু বাধা দেইনি। কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ তো একটা মিটিং মিছিল করতে পারেনি। সব জায়গায় বাধা। রাস্তায় ফেলে মেয়েদের পিটিয়েছে। একদিকে ছাত্রদল অপরদিকে পুলিশ। সে কথা আমরা ভুলি কী করে? তারপরও প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকেই নজর দিয়েছি। উন্নয়ন করার জন্য কাজ করছি। ওরা আমাদের ওপর যেটা করেছে, আমরা তো তার কিছুই করি না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। নিজের দেশ সম্পর্কে মানুষ অনেক জানে। ইতিহাস সম্পর্কে জানে। আমাদের লক্ষ্য কী সেটাও মানুষ জানে। আমরা তো জনগণের জন্য কাজ করেছি—এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আজকে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে গেছে। আত্মসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।’

২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপির-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা আগুন নিয়ে খেলেছিল, বাংলাদেশের মানুষ যদি তাদের বেলায় এই আগুনের খেলাটা খেলে, তখন তাদের অবস্থাটা কী হবে? সেটা কি বিএনপি ভেবে দেখে? অগ্নিসন্ত্রাসীদের ব্যাপারে দেশের মানুষকে আরও সজাগ থাকতে হবে। সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলবো—ওদের (বিএনপি-জামায়াত) অপকর্মটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। ওরা লুটপাট করতে আসে। ওরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে।’

তিনি বলেন, ‘কোকো-তারেক যে টাকা পাচার করেছিল, তার ৪০ কোটি টাকা আমরা উদ্ধার করে ফেরত এনেছি। তাদের আরও অনেকের টাকা বিভিন্ন দেশে ফ্রিজ করা আছে। আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যারা টাকা পাচার করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কীভাবে? সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’

ভাষা আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আমরা পুস্তক আকারে প্রকাশ করছি। ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের অবদানের বিষয়টি এখানে স্পষ্ট আছে। এই তথ্য বের না করলে এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী না বেরুতো তাহলে...। তাঁকে তো ভাষা আন্দোলন থেকে একেবারে মুছেই ফেলে দেওয়া হয়েছিল। নামটাই মুছে ফেলা হয়। এটাই দুর্ভাগ্য, যখনই যে কাজ করেছেন, তাঁর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ভাষার অর্জন একে একে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নাম তো ভাষা আন্দোলন থেকে মুছেই ফেলা হয়। এমনকি স্বাধীনতার ইতিহাসও বিকৃত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা বিকৃত করা হলো। একটা জাতির স্বাধীনতা, একজন বাঁশি ফুকলো আর হয়ে গেলো, এভাবে তো হয় না।’

তিনি বলেন, ‘১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা করে। সেই সময় শহীদ মিনার তৈরির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার পর সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’

ভিন দেশীয় ভাষায় বাংলা উচ্চারণের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘অন্য ভাষা শিখতে কোনও অসুবিধা নেই। যে যতটা পারেন ভাষা শিখুন। কিন্তু মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ, মাতৃভাষায় শিক্ষা নিলে যতটা উপলব্ধি করতে পারবে, শিখতে পারবে, অন্য ভাষার ভেতর থেকে তা আসবে না। বর্তমান যুগে গ্লোবাল ভিলেজে অন্য ভাষাও শেখা যাবে। কিন্তু মাতৃভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়াটা একান্ত দরকার। ইদানীং ইংরেজি একসেন্টে বাংলা বলার প্রবণতা দেখা যায়। এটা আরও জঘন্য বলে আমি মনে করি। কারণ, আমি বাংলা ভাষা বাংলার মতো করে বলবো। আমাদের ভাষাটারও বৈচিত্র্য আছে। একের অঞ্চলে একেক ভাষা। কথার মধ্যে আঞ্চলিক টান থাকবে। প্রত্যেক ভাষারই নিজস্ব একটা টান থাকে। এটা বিশ্ব স্বীকৃত। আমাদের দেশে কোত্থেকে এলো জানি না, কিছু মানুষ ছেলেমেয়েদের ইংরেজি স্কুলে পড়াতে গিয়ে সবার আগে মাতৃভাষার আসল ধ্বনিটা পরিবর্তন করে, একটা বিজাতীয় ভাষার ধ্বনির সঙ্গে মিলিয়ে ইংরেজি একসেন্টে বলার প্রবণতা। এটা কেন? আমার নিজের এলাকার ভাষা, নিজের কথা কেন বলবো না? সেটা বলাতে লজ্জার কী আছে? যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে যায়, তাদের মাঝে তো এই দৈন্য থাকা উচিত নয়।’

জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর যে মিলিটারি ডিকটেটর ক্ষমতা নিয়েছিল, অবৈধভাবে তার জন্ম ছিল কলকাতায়। বড় হয়েছে করাচিতে। নিজেও ভালো করে বাংলা বলতে পারতো না। চাকরি সূত্রে তার পূর্ববঙ্গে আসা।’

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ছাত্রনেতাদের ডেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের নির্দেশ শেখ মুজিব দিয়েছিলেন। এটাও বলেছিলেন—এখানে যে কমিটি হবে তা যেন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে করা হয়। আর সেটাই করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কেবল আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়ে যাননি। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় পেয়েছি। স্বীকৃতি পেয়েছি।’

বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে ফেলেছেন, তখনই স্বাধীনতাবিরোধীদের মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানা প্রকার অপপ্রচার। যে ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, এখন অনেকে তা জানেও না। পাটের গুদামে আগুন দেওয়া, থানা লুট, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হত্যা করা। যেখানে সেখানে লুট করাসহ নানা অপকর্ম করে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। এসব মোকাবিলা করেও স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেন।  অপপ্রচার করেও থামাতে না পেরে ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটানো হলো।

/ইএইচএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
সর্বশেষ খবর
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ