X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০২৬ সালের পরেও বিআরআই’তে থাকবে বাংলাদেশ?

শেখ শাহরিয়ার জামান
২৯ মার্চ ২০২৩, ২৩:৫৯আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০:১৪

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ২০১৬ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে ওই সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ শেষ হবে এবং পুনর্নবায়নের জন্য তার আগেই দুই পক্ষকে আলোচনা করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক কারণে ২০২৬ সালে বিআরআইতে যুক্ত হওয়া কিছুটা কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের রসায়ন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক—ওই সমঝোতা স্মারক নবায়ন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিকরা।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বিআরআই’র সবচেয়ে বড় চারটি প্রকল্পের মধ্যে অন্তত দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সেজন্য চীনের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণে পশ্চিমা বিশ্ব অনেক সময় ধারণা করে থাকে যে বাংলাদেশ চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।’

বিশ্বে অনেক মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় উদীয়মান রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পক্ষে যা করা অনেক সহজ ছিল, ২০২৬ সালে পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেটি করা তত সহজ হবে না বলে মনে করেন শহীদুল হক।

ভারতের বিরোধিতা

চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর হচ্ছে বিআরআই-এর অন্যতম বড় প্রকল্প। এর মোট খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে অমীমাংসিত আজাদ কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করছে চীন। ভারত মনে করে, ওই প্রকল্প তাদের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, কাশ্মীর নিয়ে যেকোনও ধরনের প্রকল্পে বাধা দেবে ভারত এবং এটিই স্বাভাবিক। আজাদ কাশ্মীর নিয়ে চীনের প্রকল্প ভারত কোনোদিন মেনে নেবে না। সবসময় তারা বিআরআই-এর বিরোধিতা করবে।

তাদের মতে, এটি বাংলাদেশের জন্য হয়তো ভবিষ্যতে উভয় সংকট তৈরি করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভালোভাবেই ভারসাম্য বজায় রেখেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময়ে পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ওই সময় সমঝোতা স্মারকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম পাঁচ বছর পরে স্বয়ংক্রিয় নবায়ন এবং পরবর্তীকালে পাঁচ বছর পর পর আলোচনার ভিত্তিতে নবায়নের প্রস্তাব করা হয়। সেই হিসেবে ২০২৬ সালে নবায়ন করতে হলে দুই পক্ষের সম্মতি আছে, এমন চিঠি আদান-প্রদান করতে হবে।

বর্তমান বিশ্ব

বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে চীনের উত্থান। বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তৈরি চীন। যখন দুই নম্বর শক্তি এক নম্বর শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন স্বাভাবিকভাবে একটি উত্তেজনা দেখা দেয়। তার বড় ধরনের প্রকাশ হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, যার মাধ্যমে এই অঞ্চলে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ক্রমশই চীনের বিআরআই এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএস একটি দ্বন্দ্বের জায়গায় উপনীত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।

এ বিষয়ে মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এটি হচ্ছে দুই মতবাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। পশ্চিমা বিশ্ব অনুসরণ করছে ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’ মতবাদ। অপরদিকে চীন অনুসরণ করে ‘বেইজিং কনসেনসাস’। দুটি মতবাদ সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী।’

ওয়াশিংটন কনসেনসাসের ভিত্তি হচ্ছে গণতন্ত্র ও উদার মূল্যবোধ। অপরদিকে বেইজিং কনসেনসাসের ভিত্তি হচ্ছে—একটি দল গোটা দেশ শাসন করবে এবং সমাজবাদ নীতি ও মূল্যবোধ অনুসরণ করা হবে।

শহীদুল হক বলেন, ‘দুটি বড় শক্তি যখন ভিন্ন ধরনের মতবাদ অনুসরণ করে, তখন বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর পক্ষে ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিআরআই একটি প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগ, কিন্তু এর পাঁচটি ফোকাস এরিয়ার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে চীন ও যে দেশ বিআরআইতে যুক্ত হচ্ছে–সেই দুই পক্ষের মধ্যে নীতির সামঞ্জস্য থাকতে হবে বলে তিনি জানান।

তিরি আরও বলেন, ‘এ কারণে ২০১৬ সালে যা অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল, সেটি ২০২৬ সালে অর্জন করতে কিছুটা বেগ পেতে হতে পারে।’

বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশে বিআরআই’র অধীনে বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং এর অনেকগুলো হয়তো ২০২৬ সালের পরে বাস্তবায়িত হবে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘২০২৬ এখনও দেরি আছে। তবে বর্তমান অবস্থা অনুধাবন করে বলা যায়, ২০১৬ এবং ২০২৬ এক হবে না।’

তিন বছর পর চুক্তি নবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিআরআইর গুরুত্ব, সুবিধা এবং ওই সময়ে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’

এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘এটি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রকল্পভিত্তিক কানেক্টিভিটি উদ্যোগ। ২০১৬ সালে যখন বাংলাদেশ এটি সই করে, তখন যে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা ছিল, এখন সেটি পরিবর্তন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ২০২৬ সালের আগে বিআরআই থেকে বাংলাদেশ কী অর্জন করতে পারলো এবং ভবিষ্যতে কী পারবে, সে বিষয়ে একটি যথাযথ মূল্যায়ন হবে। সেটিকে ভিত্তি ধরে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
ঢাকায় চীনের ভিসা সেন্টার, প্রয়োজন হবে না দূতাবাসে যাওয়ার
দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা