X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘ইউটিউবাররা সাংবাদিক নন, তাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অধিকার নেই’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ জুলাই ২০২৩, ২১:১৭আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩, ২১:২১

নির্বাচনি কেন্দ্রে ইউটিউবারদের প্রবেশের কোনও আইনগত অধিকার নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। কেবল বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন বলে তিনি জানান। কোনও ইউটিউবারের কেন্দ্রে প্রবেশের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, ইউটিউবাররা কোনও মূল ধারার গণমাধ্যমকর্মী নয়। তাদের নির্বাচনি কেন্দ্রে প্রবেশের আইনগত কোনও অধিকার নেই। নির্বাচনি কেন্দ্রের মতো স্পর্শকাতর স্থানে প্রবেশ করে সাংবাদিকতার নামে তাদের লাইভ-ভিডিও বন্ধে ইসিকে আরও কঠোর হতে হবে। 

সোমবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অনেকগুলো কেন্দ্রে ইউটিউবারদের প্রবেশ করে ভিডিওসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনি কেন্দ্রে প্রবেশে ইসি সচিবালয় সরবরাহকৃত বৈধ কার্ড না থাকলেও তারা বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ভোটের দিন শেষ বেলায় নির্বাচনি এলাকার একটি কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলম বেশ কয়েকজন ইউটিউবার নিয়ে একটি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চান।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্যরত সদস্যরা হিরো আলমকে প্রবেশে অনুমতি দিলেও তার সঙ্গে থাকা ইউটিউবারসহ অন্যদের প্রবেশে বাধা দেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তার তর্কবিতর্কও হয়। পরে হিরো আলম প্রবেশ না করে ফিরে যাওয়ার সময় দৃষ্কৃতিকারীদের হামলার শিকার হন।

সোমবার ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট শেষে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ও বিভিন্ন কেন্দ্রে ইউটিউবার প্রবেশের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন নির্বাচন কমিশন আলমগীর। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের বক্তব্যেরও জবাব দেন তিনি।

হিরো আলমের ওপর হামলা প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী (হিরো আলম) অনেক সমর্থকসহ কেন্দ্রের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। ওনার সঙ্গে অনেক ইউটিউবার ছিলেন। সেখানে কেবল আপনাদের মতো বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিকরাই  ঢুকতে পারেন। ইউটিউবাররা তো ঢুকতে পারেন না। কিন্তু তিনি প্রচুর ইউটিউবার নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ৭০ জনের মতো। তখন পুলিশ তাদের আটকে দিয়েছেন। বলেছেন, প্রার্থী ঢুকতে পারবেন। তার সঙ্গে যারা আছেন, তারা ঢুকতে পারবেন না।’

ইউটিউবারকে কেন ঠেকানো গেলো না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউটিউবারদের অবশ্যই পুলিশ ঠেকিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রের মধ্যে ইউটিউবাররা ঢুকতে পারেন না। যারা বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক তারাই ঢুকতে পারেন।’

ইউটিউবার ভেতরে অনেক কেন্দ্রে ঢুকেছে, তাদের কাছে কোনও কার্ডও ছিলো না, এমন ফুটেজ রয়েছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, ইউটিউবারদের কেন্দ্রে প্রবেশের কোনও সুযোগ নেই। ইউটিউবাররা যদি কোথাও কেন্দ্রে প্রবেশ করে থাকে, এ রকম তথ্য থাকলে তার প্রমাণ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলবো— তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

এদিকে নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখা সূত্রে জানা গেছে, ইসির নীতিমালা অনুযায়ী, তারা সাংবাদিকদের কার্ড সরবরাহ করেছে। ইসি থেকে মূলধারার গণমাধ্যমের বাইরে কাউকে কার্ড দেওয়া হয়নি। কোনও ইউটিউবার ইসির কার্ড পায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউটিবারকে আমরা কোনোভাবেই মূল ধারার সাংবাদিক বলতে পারি না। একজন ব্যক্তি একটি ডিভাইস নিয়ে ঢুকলেন। ছবি তুললেন ভিডিও করলেন প্রচার করলেন, এটা তো হতে পারে না। তিনি তো উসকানিও দিতে পারেন। মাঠে লাইভ করা, এটা কিন্তু সাংবাদিকতা নয়। এখন প্রচুর মানুষ কনটেন্ট ক্রিয়েট করেন। তাদের সাংবাদিক বলা হলে তো লাখ লাখ  মানুষ সাংবাদিক হবে।’

পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের চিত্র দেখা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেকোনও প্রতিষ্ঠান যেগুলোকে আমরা মূলধারার গণমাধ্যম বলছি, তাদের সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র পাওয়া ব্যক্তিরাই সাংবাদিক। তারা সংবাদ কাভার করতে পারেন।’

নির্বাচনি কেন্দ্রে ইউটিউবারদের প্রবেশের প্রসঙ্গ টেনে এই সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, ‘তাদের লাইভের কারণে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হয়। নির্বাচন কমিশন যখন কোনও ব্যক্তিকে কার্ড দিচ্ছে, তখন তাকে দেখতে হবে— ওই ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তিনি সত্যি সাংবাদিকতা করেন কিনা? নির্বাচন কমিশনের বেশি বুঝেশুনে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের অ্যালাউ করতে হবে।’

ইউটিউবারদের সাংবাদিক বলার কোনও সুযোগ নেই উল্লেখ করে ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে কেউ টিউটিউব করুক তাতে আপত্তি করবো না। কিন্তু তারা সাংবাদিকতার পরিচয় দিতে গেলে যেন এটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি নেই। এটা চলতে পারে না। এই ইউটিউবারদের অত্যাচার থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বাঁচাতে হবে। সাংবাদিকতা বাঁচাতে হবে।’

তিনি জানান, সরকার আইপি টেলিভিশনকে অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু তারা কেউ সংবাদ প্রচার করতে পারবে না— এমন শর্তে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাজেই এর সঙ্গে জড়িতদের সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান বলেন, ‘ইউটিউবার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যার তথ্য সরবরাহ করে, তাদেরকে আমরা গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিক বলতে পারি না। গণমাধ্যমকর্মী হবেন প্রাতিষ্ঠানিক। গণমাধ্যমকর্মী হতে হলে কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। তারা কোনও  প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করবেন।’

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
এক শতাংশ ভোটার এলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য: ইসি হাবিব
প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল, প্রকাশ্যে ভোটের জন্য এমপির ‘দুঃখ প্রকাশ’
সর্বশেষ খবর
নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না মার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদনির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না মার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বিদায়ের পর চেন্নাই অধিনায়ক বললেন, ‘মোস্তাফিজকে মিস করেছি’
বিদায়ের পর চেন্নাই অধিনায়ক বললেন, ‘মোস্তাফিজকে মিস করেছি’
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
বন্ধুর শোবার ঘর থেকে কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
বন্ধুর শোবার ঘর থেকে কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক