দুর্নীতি দমনের জন্য দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা একটি বড় ‘অস্ত্র’। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সোমবার (৭ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের গ্লোবাল অ্যান্টি-করাপশন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ’র সঙ্গে ঢাকায় বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
নতুন করে ১১ জন বাংলাদেশির ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের খবর ছাপা হয়েছে—এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রিচার্ড নেফিউ একসময় নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক অফিসার ছিলেন। তিনি কোনও ব্যক্তির বিষয়ে বলেননি। কিন্তু বলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নিষেধাজ্ঞা একটি ‘অস্ত্র’ এবং এটি চিন্তাভাবনা আছে হয়তো।’
বিনিয়োগ বা বড় ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার জন্য ওইসিডির ব্লু ডট ব্যবহারের বিষয়ে রিচার্ড নেফিউ আলোচনা করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তারা বলার চেষ্টা করেছে যে বিনিয়োগ বা বড় ধরনের অবকাঠামো প্রকল্প যখন গ্রহণ করা হবে, তখন ওইসিডির একটি ব্লু ডট প্রকল্প আছে, যেখানে হাতে নেওয়া প্রকল্পের বিভিন্ন দিকগুলো বিবেচনা করে অর্থায়নের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। সুতরাং, আগামীতে হয়তো এ ধরনের একটি পরিস্থিতি আসবে এবং আমাদেরও সেরকম প্রস্তুতি থাকা উচিত।’
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বর্তমানে সব মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। সেগুলো সমাজের সবার কাছে, যেমন- যারা কন্ট্রাক্টর আছে, বা যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে এটি চর্চা করতে হবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
অর্থপাচার
পররাষ্ট্র সচিব জানান, অর্থপাচার দুর্নীতির একটি অংশ। সুতরাং, অর্থপাচার নিয়ে আলাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যেসব ব্যাংক বা ছোট ছোট অনেক দেশ আছে, সেখানে অর্থপাচারের অনেক সহজ সুবিধা আছে। আমরা হুন্ডি ও হাওয়ালা সিস্টেমের কথা বলেছি। সুতরাং, এগুলোতে আরও স্বচ্ছতা বাড়ানো দরকার, আরও দায়বদ্ধতা থাকা দরকার। কিন্তু এটি একটি দেশ বা সংস্থার পক্ষে শতভাগ করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি সহযোগিতার ওপরে জোর দিয়েছি। যাতে করে কোনও ধরনের দায়মুক্তি না থাকে। কারণ, এর ফলে সমাজে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যদি দেখা যায়, একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি বিচারের আওতায় নেই, তাহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।’
যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় পাঠানো অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ফেরত আনা পরের বিষয়। প্রথম কাজ হচ্ছে কোন রুটে যাচ্ছে সেগুলো বন্ধ করা।’
তবে তিনি বলেন, ‘এগুলো সব অবৈধ অর্থ নাও হতে পারে। আমরা দেখেছি যে কানাডা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বাংলাদেশি আছেন—যারা ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার। তারা অনেক কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে সেখানে (কানাডা) গেছেন।’
এস আলমের এক বিলিয়ন ডলার অর্থপাচার সংক্রান্ত খবর ছাপা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় আছে কিনা প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত নির্দেশ নেই। যদি থাকে বা দুর্নীতি দমন কমিশন যদি আমাদের অনুরোধ করে, তবে আমাদের যেটি করা দরকার সেটি আমরা করবো।’
দুর্নীতিবিরোধী অনুষ্ঠান
আগামী ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টায় ইউএন কনভেনশন এগেনেস্ট করাপশনের ২০ বছরপূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তাদের আশা হচ্ছে, বাংলাদেশ সেখানে অংশগ্রহণ করবে। সেখানে অনেক সেমিনার হবে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন এজেন্সি, যারা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছে, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেখানে সবার কাছে একটি অঙ্গীকার নতুন করে চাইবে তারা—যাতে আন্তর্জাতিকভাবে বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে কীভাবে দুর্নীতি কমানো যায় বা কীভাবে দমন করা যায়।’
তবে আমি তাদের বলেছি, অনেক ক্ষেত্রে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের যে বিষয়গুলো আছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে, সেগুলোতে আমরা সবসময় সমান সাড়া পাই না। কিছু দিন আগে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে কথা উঠেছিল। আমি সুইসদের কাছে যে ধরনের তথ্য চেয়েছিলাম, তারা সেটি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।