রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ দুই দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা আসছেন। প্রথমবারের মতো রাশিয়ার কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করছেন। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার এই সফরকে ঘিরে সবার কৌতূহল। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে চীনের উত্থান এবং ওইদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভূরাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সময়ে উদীয়মান বাংলাদেশের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক রাশিয়া আশা করে এবং এর বিপরীতে ঢাকার অবস্থানকে সংশ্লিষ্ট সবাই পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ‘নিরপেক্ষ’ একটি অবস্থান বজায় রাখার প্রয়োজন আছে বাংলাদেশের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জ্বালানি-খাদ্য-সার নিরাপত্তা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের তিক্ততার বিষয়টি যেমন কোনও গোপন বিষয় নয়, তেমনি ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে অস্বস্তিকর সম্পর্কের বিষয়টিও সবার নজরে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে ভারসাম্যের ছদ্মবেশে বাংলাদেশকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে হয়তো পাশে চাইতে পারে রাশিয়া।’
তিনি বলেন, ‘কূটনীতিতে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে। এ সময়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর তাদের বিবেচনায় সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ।’
মেরুকরণের ভূরাজনীতি
বর্তমান ভূরাজনীতিতে মেরুকরণের একটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তৈরি হওয়া বিশ্ব ব্যবস্থা বর্তমানে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সবদেশ পরিবর্তিত ব্যবস্থায় কী অবস্থান নেবে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পরে যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়। ওই শক্তিকে এখন চ্যালেঞ্জ করছে রাশিয়া, চীনসহ অন্যান্যরা।‘
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে রাশিয়া বিভিন্নমুখী চাপের মধ্যে আছে এবং সেখান থেকে দেশটি বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে এবং এজন্য তার বন্ধুর প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ও নাক গলানো নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিবৃতিও দিয়েছে। ওয়াশিংটনের মনোভাবকে ঢাকা ভালো মতো দেখছে না– এ বিষয়টি মস্কোর নজর এড়িয়ে যায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আপাতদৃষ্টিতে ভুল সিদ্ধান্তের সুযোগ নিতে চাইবে রাশিয়া।’
এ প্রেক্ষাপটে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন হবে বাংলাদেশের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিৎ হবে না এমন কিছু বলা বা এমন কিছু শোনা যা ঢাকাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে।’
ঢাকার অবস্থান কী হবে
গত আগস্টে জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে একটি পক্ষ বেছে নেওয়ার জন্য বড় শক্তিগুলোর যে কৃত্রিম প্রচেষ্টা রয়েছে সেটিকে না বলা উচিৎ গ্লোবাল সাউথের। সর্বজনীন প্রথা ও মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেটিকে অবশ্যই আমাদের বন্ধ করা প্রয়োজন। বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে সেটিকে বিশ্বের জনগণের মঙ্গলের জন্য ব্যয় করার আহ্বান আবারও জানাচ্ছি।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘ব্রিকস প্লাস শীর্ষ সম্মেলনে ক্রমবর্ধমান মেরুকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি এ প্রেক্ষাপটে দেখা যেতে পারে।’
ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে এবং এটির দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় ঢাকা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সবদেশের ওপর চাপ বাড়ছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দ্রুত যুদ্ধ বন্ধে অবশ্যই বাংলাদেশের আহ্বান থাকবে।’