X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধারা জেনে গেছেন এ দেশ আমার, চলছে অনানুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ

উদিসা ইসলাম
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০

১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর রাও ফরমান আলী এক ফরমান জারির পর তৎকালীন বাংলাদেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তুলে দেন হন্তারক বাহিনীর হাতে। পরিকল্পনা মাফিক সে রাতেই আলবদর বাহিনী সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর জীবিত ফিরে আসেননি। এরপর একে একে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দেশকে মেধাশূন্য করার কাজে নেমে পড়ে বদর বাহিনীর ঘাতকরা। এদিকে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা ততদিনে বুঝে গেছেন—এ দেশ আমার, শিগগিরই স্বাধীন দেশে উড়বে লাল সবুজের পতাকা।

এদিন অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় ঢুকে পড়ে। নিরস্ত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসে। সে সময় যেখানেই মুক্তাঞ্চল ঘোষিত হচ্ছে, সেখানেই যুদ্ধ আর রক্তাক্ত প্রান্তর। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে লড়ছে, মরছে—তবু প্রতিশোধের আগুন বুকে। ৩ ডিসেম্বরের পর আকাশ, জলে-স্থলে সবদিকে হানাদাররা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় জেনারেল নিয়াজি রাওয়ালপিন্ডিতে আরও সাহায্য চেয়ে আবেদন জানান।

তখন শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর একসঙ্গে লড়াই চলছে। যৌথ বাহিনী জয়দেবপুর, টঙ্গী ও সাভার হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হয়। লে. কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরায় পৌঁছায়। যৌথ বাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার ৫-৬ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সর্বপ্রথম ইউনিট হিসেবে ঢাকার শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে মুরাপাড়ায় পৌঁছায়। বাসাবো ও খিলগাঁও এলাকার চারদিকে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েও ব্যর্থ হয়। কারণ, ঢাকার আকাশ মিত্রবাহিনীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিল।

১৩ ডিসেম্বর জয় নিশ্চিত হয়ে এসেছে। যুদ্ধ জয়ের নিশ্চয়তা জেনেই বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের যেসব কর্মী, কূটনীতিক, প্রতিনিধি ও বিদেশি নাগরিক নিরাপদে সরে আসতে চান, বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে।’

এদিন শান্তি কমিটি, গভর্নর ডা. মালিক মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতাবিরোধী দালালরা তৎকালীন গভর্নর হাউজে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বৈঠক চলাকালে মিত্র বাহিনীর বিমান গভর্নর হাউজে বোমাবর্ষণ করে। এরপরই গভর্নর ডা. মালিক পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে রেডক্রসের গাড়িতে করে নিরপেক্ষ এলাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এসে আশ্রয় নেন।

এই যে স্বাধীনতা অর্জনের বিশাল ইতিহাস, তার উচ্চারণ কেবল ডিসেম্বর মাসে নয়। সবসময় চর্চা ও গবেষণার ব্যবস্থা থাকতে হবে উল্লেখ করে শহীদ সন্তান তৌহিদ রেজা নূর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা কাজের সঙ্গে আগ্রহী তরুণদের ব্যাপক হারে যুক্ত করা দরকার। যত দিন যাবে নতুন প্রজন্মের আগ্রহের ধরন বদলাবে। সেটা মেনে নিয়ে তাদের উপযোগী করে ইতিহাসকে জারি রাখার চেষ্টা থাকতে হবে। আর এসব পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে তরুণদের যুক্ত করতে হবে। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কাহিনি শোনা, লিপিবদ্ধ করা হবে তাদের মুখ্য কাজ। এই যে কবে কোথায় কী হয়েছে—সেটা যেন গল্প আকারে পারিবারিক আবহে শোনানো হয়। সেটির পরিকল্পনা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সফলতায় কিছুটা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
সর্বশেষ খবর
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস, রাতভর জ্বলবে সুন্দরবন
কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস, রাতভর জ্বলবে সুন্দরবন
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ