X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড: পালিয়ে বেঁচেছে সেই খুনি মুঈন ও আশরাফ

উদিসা ইসলাম
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৩

শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান আসিফ মুনির ১০ বছর আগে তার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শ তুলে ধরে সাক্ষ্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেখানে তিনি বলেন কীভাবে তার বাবা পাকিস্তানি বাহিনীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা পঞ্চাশের দশকে বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। যদিও পরবর্তী সময়ে রাজনীতি থেকে সরে আসেন তিনি। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী নীতি এবং কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল তার লেখনী।’

আসিফ মুনিরের মতোই শহীদদের সন্তান ও জায়াদের মুখে তাদের কাজের ধরন শুনলে বোঝা যায়, কেন তালিকা করে এদের হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের পুরো সময়টাতেই দেশজুড়ে স্বাধীন চিন্তক যারা ছিলেন, যারা ছিলেন দেশকে গঠন করার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্যে, তাদের হত্যা করা হয়। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের ঠিক আগে ১৪ ডিসেম্বর বাংলার প্রায় সব বুদ্ধিজীবীকে তালিকা করে হত্যা করা হয়। আর এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে যে দুজনকে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সেই দুই আসামি চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান বিদেশে পালিয়ে গিয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং উঠে আসে তাদের নির্মমতার ইতিহাস।

১২ ডিসেম্বর ক্যান্টনমেন্টে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদরের কমান্ডার কামারুজ্জামান ও আলশামসের কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আলবদরের  প্রধান নির্বাহী আশরাফুজ্জামান খান, অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনসহ কয়েকজনকে ডেকে পাঠান। এরপর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে তাদের হাতে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তুলে দেওয়া হয়।

চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের নেতৃত্বে দুই দিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের। যাদের মরদেহ বিজয়ের পরের দিন থেকে উদ্ধার হতে থাকে। অনেকের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কোথায় আছে সেই দুই খুনি? ট্রাইব্যুনালের প্রতিবেদন বলছে, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আর আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়—১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দেওয়ার নীলনকশা অনুযায়ী, স্বাধীনতার ঠিক আগে ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ আলবদর বাহিনীর ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান। আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’। তারা দুজনেই জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ‘সক্রিয় অবস্থান’ নেন।

জানা যায়, আশরাফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বেজড়া ভাটরা (চিলেরপাড়) গ্রামে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর। আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বাড়ি ফেনীর দাগনভুঞার চানপুরে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করেন মো. আতাউর রহমান।

বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের মামলাটিকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে ১০-১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মোট ১১টি অভিযোগ গঠন করে। তাদের বিরুদ্ধে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়। সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন।

রায়ে কী পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল? মৃত্যুদণ্ডের আদেশের এই রায়ে উল্লেখ আছে—তাদের এ ঘৃণ্য অপরাধে শুধু মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য। এ অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড না দিলে তা হবে বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতা। রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেন, জামায়াত ও পাকিস্তানি বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে এই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মিশনটি আলবদর বাহিনী সম্পন্ন করে। চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ও অপারেশন ইনচার্জ এবং আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন চিফ এক্সিকিউটিভ। ট্রাইব্যুনালের রায়ের ৭৬ ও ৭৭ অনুচ্ছেদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে আলবদর বাহিনীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়। ৮১ ও ৮২ অনুচ্ছেদে প্রত্যক্ষভাবে আলবদর বাহিনীর যুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে ৪৪৯-৪৫২ অনুচ্ছেদে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানকে ১১টি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদানের যুক্তি তুলে ধরা হয়।

গত ১০ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল যে দুই জন—চৌধুরী মাইনুদ্দিন এবং আশরাফ, তাদের দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বদা সচেষ্ট। তারা যেসব দেশে অবস্থান করছেন, সেসব দেশের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ রাখছে, যাতে তাদের ফিরিয়ে আনা যায়। সেই সঙ্গে তাদের ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় সম্ভব মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে লিপিবদ্ধ হলো’
সর্বশেষ খবর
যমুনা ইলেকট্রনিকসের ১৩ শোরুম উদ্বোধন করলেন বুবলী
যমুনা ইলেকট্রনিকসের ১৩ শোরুম উদ্বোধন করলেন বুবলী
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
ব্রাজিলে বৃষ্টি ও বন্যায় নিহত অন্তত ৩৯
ব্রাজিলে বৃষ্টি ও বন্যায় নিহত অন্তত ৩৯
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত