X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার অস্বীকার করে খুনি মুঈনউদ্দিনের ধৃষ্টতা

উদিসা ইসলাম
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:১০আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:০২

১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের একজন হিসেবে চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের বিচার হয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি-তে)। বিচারের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ২০১৩ সালেই আল জাজিরাতে তিনি বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইসিটির স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আবার তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের জঙ্গিবাদ এবং ইসলামিজম বিষয়ে একটি রিপোর্টের ‘ফুটনোটে’ রায়টির উল্লেখ করায় মানহানি ঘটেছে বলে স্বরাষ্ট্র দফতরকে আইনি নোটিশ পাঠান। দীর্ঘ চার বছর নানা পর্যায়ে শুনানির পরে বর্তমানে চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে বিষয়টি। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, শহীদ সন্তান ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই ধৃষ্টতা ক্ষমার অযোগ্য।

২০১৩ সালে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিযুক্ত মুঈনউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের ওপর তার আস্থা নেই। মুঈনউদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি তো আগে বলেছিলেন আদালতে উপস্থিত হয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন। এখন যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার মুখোমুখি কি হবেন? জবাবে তিনি ‘না’ সূচক মন্তব্য করে বলেন, কারণ, সোজা কথা হলো বাংলাদেশের ওই ট্রাইব্যুনাল একটি ‘প্রহসন’ এবং তাদের পরিচালিত বিচার ‘লজ্জাজনক’।

উল্লেখ্য, বুদ্ধিজীবী নিধনের অভিযোগে গত ২৪ জুন তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। এর আগে গত ৪ জুন বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১৬ জুন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দেওয়ার নীলনকশা অনুযায়ী স্বাধীনতার ঠিক আগে ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আলবদর বাহিনীর চিফ এক্সিকিউটর ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান। চৌধুরী মুঈনউদ্দিন ছিলেন সেই পরিকল্পনার অপারেশন ইনচার্জ।

২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর জঙ্গিবাদ এবং ইসলামিজম বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে মূলত অনলাইনে। সেখানকার একটি ‘ফুটনোটে’ চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইসিটির একটি রায়ও রয়েছে। যুক্তরাজ্যে মুঈনউদ্দিনের নিযুক্ত আইনজীবীরা দাবি করেন, রিপোর্টে তার রায়ের এই বিষয়টির এমনকি উল্লেখও নাকি তার বিরুদ্ধে মানহানির শামিল, এবং এই মর্মে তারা স্বরাষ্ট্র দফতরকে আইনি নোটিশ পাঠায়। স্বরাষ্ট্র দফতর এই লিগ্যাল নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ফুটনোটটি সরিয়েও নেয় অনলাইন থেকে। তারপরও মুঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে মানহানির মামলা দায়ের করে। তার দাবি ছিল, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং রায় দেওয়া হয়েছে, তার সবই ভিত্তিহীন।

এসবের ফলে নাকি যুক্তরাজ্যের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে মুঈনউদ্দিনের মানবাধিকার এবং সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বিপরীত পক্ষ (অর্থাৎ যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের আইনজীবীরা) পাল্টা অভিযোগ আনেন এই বলে যে অন্য একটি দেশের আদালতে ইতোমধ্যে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয় পুনরায় উত্থাপন করে মুঈনউদ্দিন যেটা করার চেষ্টা করছেন, তা হলো মূলত যুক্তরাজ্যের আইন ব্যবস্থার অপব্যবহার। সুতরাং মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের ট্রাস্টি রায়হান রশীদ শুরু থেকে মামলাটি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছেন, যুক্তরাজ্য হাইকোর্ট মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে মুঈনউদ্দিন আপিল করেন যুক্তরাজ্যের উচ্চতর আদালতে। আপিল আদালতের ৩ জন বিচারকের মধ্যে ২ জন হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে একমত হন, কিন্তু ১ জন মুঈনউদ্দিনের পক্ষে (অর্থাৎ মামলা খারিজের বিপক্ষে) রায় দেন। এই ১ বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে মুঈনউদ্দিন আবার আপিল করেন। এবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে। এটাই যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত। সেখানেও নভেম্বর মাসে শুনানি শেষ হয়ে এখন রায়ের অপেক্ষায় আছে।

পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে বলতে গিয়ে রায়হান রশীদ বলেন, আইসিটির রায়ের পরও যদি দণ্ডিত একজন অপরাধী এই রায়কে মানহানিকর বলেন, যুক্তরাজ্যের আদালতে উতরে যেতে পারেন, তাহলে ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধগুলো (যেমন-গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ) নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ধরনের গবেষণা আর লেখালেখির কাজ আর উদ্যোগগুলো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। লেখক এবং গবেষকদের তখন তাদের কাজগুলো করতে হবে প্রতি পদে মানহানি মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে।

‘বিচারে অপরাধী প্রমাণিত হওয়া যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা না নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছে তারা’ উল্লেখ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, আদালতে তার অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। সে আত্মপক্ষ সমর্থন করেনি কেন। গণহত্যা করেছে সেটা প্রমাণিত হওয়ার পরে তা মানহানির বিষয় হয় কী করে? এই মামলা যদি কোনোভাবে তার পক্ষে যায় তাহলে ট্রাইব্যুনালের ওপর আঘাত আসবে। এত সাহস করে ট্রাইব্যুনাল করা হলো, আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করবো বলে সব নিয়ম মেনে বিচার হলো। কিন্তু বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় তারা এরকম ধৃষ্টতা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে।

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় সম্ভব মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে লিপিবদ্ধ হলো’
সর্বশেষ খবর
কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
৩৫ হাজার রিকশাচালককে ছাতা দেবে ডিএনসিসি
৩৫ হাজার রিকশাচালককে ছাতা দেবে ডিএনসিসি
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
পাকিস্তানের নতুন কোচ কারস্টেন ও গিলেস্পি
পাকিস্তানের নতুন কোচ কারস্টেন ও গিলেস্পি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে