বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, তাদের দলে গণতন্ত্রই নেই, শুনছি সব নেতা পাল্টে যাচ্ছে, কোনও সম্মেলনের কথা শুনিনি। তাহলে এ দলে গণতন্ত্র কোথায়? কী পদ্ধতিতে তাদের দল পুনর্গঠিত হয় সেটা বুঝতে পারি না। তাদের জন্ম অবৈধ সেনাশাসকদের পকেট থেকে, তাদের মুখ থেকে গণতন্ত্রের কথা শুনতে আর ভালো লাগে না।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দীপু মনি এসব কথা বলেন।
প্রতি পাঁচ বছর পর একদিনের নির্বাচনের সন্তুষ্টি কি গণতন্ত্র নিশ্চিত করে? বিশেষত যারা জয়ের নিশ্চয়তা ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলে পণ করেছেন, জনগণের রায়ের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে নির্বাচন বর্জনের পথে বারবার হাঁটেন তাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করলেই কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে?
দীপু মনি বলেন, করা তো দরকার অনেক কিছু, সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপি, দুর্নীতিবাজ, মজুতদার, চোরাকারবারিদের চিহিৃত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করা। মূল্যস্ফীতি রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। করদাতার সংখ্যা আরও বাড়ানো। এ কাজগুলো করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবং সকল ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
“দ্যা কিউরিয়াস কেস অব ডেমোক্রেটিক ব্যাকস্লাইডিং ইন বাংলাদেশ: অ্যান অ্যানালাইসিস অব পিপলস ফিনানসিয়্যাল সেটিসফ্যাকশন” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নাগরিকদের সরকার ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের প্রতি ধারণাকে ইতিবাচক হিসেবে প্রভাবিত করে, এমনকি দেশে যদি নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থাকেও— এটি সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আর্থিক সুরক্ষা মানুষের গণতান্ত্রিক ইতিবাচক চর্চার প্রতি আগ্রহ বজায় রাখে। ড. শাহরিয়ার রহমান ও ড. মফিজুল ইসলামের গবেষণাটি মূলত অধ্যাপক আলী রীয়াজের ডেমোক্রেটিক ব্যাকস্লাইডিং ইন বাংলাদেশ গবেষণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। ড. রিয়াজ ও একই ঘরানার আরও কয়েকজন সাধারণত রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার বিষয়গুলোকে ইস্যু হিসাবে তুলে ধরেছেন। তাদের তথ্য ও উপাত্ত সেকেন্ডারি সোর্স থেকে নেওয়া। কিন্তু মি. রহমান ও মি. ইসলামের গবেষণাটিতে জনগণের মতামতের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যা ড. রিয়াজ ও অন্যান্যরা করেননি। তারা কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ও একমাত্রিক গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতা ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। অর্থ হলো ড. রীয়াজ ও অন্যান্যদের গবেষণাতে জনগণের আচরণ ও বাস্তবতা বিবেচনা করেননি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর জন্য গবেষণাটি করেছে।
মানুষের মৌলিক চাহিদাপূরণসহ তার উন্নততর, সচ্ছল জীবন যদি নিশ্চিত করা যায়, তার যদি চলবার, বলবার, করবার, জানবার অবাধ স্বাধীনতা থাকে, তবে কি সে একদিনের নির্বাচন ব্যবস্থার ঘাটতিকে বড় করে দেখে? নাকি সে তার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে?— সেই সন্তুষ্টিকে কি আমরা ছোট করে দেখতে পারি। এই মানুষকে কি একদিনের গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি দূর করার জন্য… তাও যে ঘাটতি নিজেরাই তৈরি করেছে এই কয়েকটি দল, সেই ঘাটতি দূর করার আশায় পাঁচবছরে যে স্বাচ্ছন্দ্য, যে সচ্ছলতা, যে সুন্দর জীবনের জলাঞ্জলি দিয়ে দেয় তাকে কি তথাকথিত আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা যায়? যায় না। তার প্রমাণ বাংলাদেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত সরকারবিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণতা যারা বিশ্বের কাছে চাউর করতে চান তাদের বলবো— গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণতা হয়নি, হচ্ছে না। বাংলাদেশে বিরোধীদের পশ্চাদপসরণতা হয়েছে, আরও হবে।