বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে যে, বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, যেমনটি অতীতেও হয়েছে। এই বক্তব্যের সমর্থনে, ঐক্য পরিষদ এই বছরের প্রথম দুই মাসে ১১টি হত্যাকাণ্ডসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মোট ৯২টি ঘটনা তালিকাভুক্ত করেছে। তবে মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে বোঝা, ঐক্য পরিষদের দাবি প্রকৃত পরিস্থিতিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে একথা জানায়।
প্রেস উইং জানায়, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, এসব ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং, এই দুঃখজনক মৃত্যুগুলো গোলমাল সৃষ্টিকারীদের হাতে ঘটেছিল যার মধ্যে আছে- পূর্ব শত্রুতা, চুরি, পারিবারিক বিবাদ এবং বেপরোয়া আচরণের মতো বিভিন্ন কারণ।
প্রেস উইং থেকে ১১টি হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সেখানে বলা হয়েছে-
গাইবান্ধায় চুরির টাকা ভাগাভাগির ঘটনায় সহযোগীদের হাতে খুন হন দিবলু সরকার।
নেত্রকোনায় দিলীপ কুমার সাহা রায় নিজ বাড়িতে একা থাকা অবস্থায় অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে খুন হন, এই সময় তার পরিবার বাড়ির বাইরে ছিল।
ব্যক্তিগত কলহের জেরে রাজীব তালুকদারকে হত্যা করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে রাস্তা পার হওয়ার সময় অজ্ঞাত মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গীতা রানী দাসের মৃত্যু হয়েছে।
বান্দরবানে ছাগল নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদের জেরে বাড়ির বাইরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা উমেপ্রু মারমাকে গুলি করে হত্যা করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অটোরিকশাচালক শ্রী পলাশের রিকশা চুরি করতে গিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলিতে করে হত্যা করেছেন।
দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে মৌলভীবাজারে খুন হন শ্রী দীপেন মুন্ডা।
পরিবারের মধ্যে ঝগড়া করে কানাই শব্দকরের মৃত্যু হয়।
রহস্যজনক পরিস্থিতিতে একটি চা বাগানে কানাই পাশির মৃতদেহ পাওয়া যায়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকার পূর্ব শত্রুতার জেরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন।
নারায়ণগঞ্জে উৎপল রায় একা থাকা অবস্থায় ঘরে ঢুকে হত্যা করে দেড় লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
প্রেস উইং জানায়, এই ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করে যে এই মৃত্যুগুলো মূলত ব্যক্তিগত বিরোধ, অপরাধমূলক কাজ বা দুর্ঘটনার ফলস্বরূপ, ঐক্য পরিষদের দাবি অনুসারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এ ধরনের ভুলভাবে প্রচার এই প্রথম নয়। বারবার তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিতর্কিত দাবি করেছে। কিন্তু, যখন ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়, তখন তারা তাদের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনগুলোকে সংশোধন করতে নারাজ থাকে।
প্রেস উইং আরও জানায়, এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা জরুরি, যাতে তথ্য বিকৃত না হয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়ন না হয়। এই ঘটনাগুলোর আসল এবং জটিল প্রকৃতিটি ব্যাপক সরলিকরণের দ্বারা ঢেকে দেওয়া উচিত নয়। যেহেতু আমরা শান্তি এবং সম্প্রীতির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সহিংসতার বিভিন্ন কারণের মধ্যে পার্থক্য করা এবং এমন এক সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করা অত্যাবশ্যক যা বিভাজনের পরিবর্তে ঐক্যকে উৎসাহিত করে।