বাজার থেকে সিন্ডিকেট-তন্ত্র দূর করা অর্থনৈতিক সংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, যেদিকে তাকাই, সেদিকেই সিন্ডিকেট। বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ না থাকায় অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিতভাবে কাজ করছে না। আইনগত কাঠামোর মধ্যেই কিছু ব্যবস্থার কারণে সিন্ডিকেট কার্যকর থাকছে, যা সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ‘এলডিসি উত্তরণ: কৃষিখাতে প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফ ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বামা) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও বক্তব্য রাখেন।
বাজারে সিন্ডিকেট ও অর্থনৈতিক সংস্কার
সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, সন্দ্বীপের ফেরি উদ্বোধনেও সিন্ডিকেটের প্রভাব দেখা গেছে। আমরা চাই, এ ধরনের সিন্ডিকেট-তন্ত্র থেকে একবারে মুক্তি পাওয়া। এটি অর্থনৈতিক সংস্কারেরই অংশ এবং আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, বাজার অর্থনীতিকে কার্যকর করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও গতিশীল করা জরুরি। সরকারি প্রশাসনের মধ্যেই ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এক মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে কাজ দীর্ঘায়িত না হয়। এ সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে কোন মন্ত্রণালয়ে কী সমস্যা রয়েছে, তা নির্ধারণ করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
‘ওয়ান বাংলাদেশ’ গড়ার আহ্বান
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আমাদের জন্য সময়সাপেক্ষ বিষয় নয়, বরং এটি একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। আমাদের এখন ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ ধারণা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সরকার, ব্যবসায়ী ও সমাজের সব স্তরের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করে প্রকৃত উন্নয়নের দিকে এগোতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু তারা চাইলে সেটি বন্ধ করতে পারে। তাই আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ সহজ করার দিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশকে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক হাব হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা ভারত বা চীন কখনও পাবে না। সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের মতো আমরা একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারি। এর জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে বৈদেশিক শ্রমবাজারে পাঠানোর পাশাপাশি প্রসেসিং সেন্টার তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে হালাল মাংস প্রক্রিয়াকরণসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন সম্ভব।
পোশাক খাতে নতুন উদ্যোগ
পোশাক খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা পোশাক ক্রেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। শীর্ষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতি মাসে বৈঠক হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে দেশের পোশাক রফতানি আয় বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইএলও-তে (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান মামলা সমাধানের জন্যও কাজ করা হচ্ছে, যাতে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বজায় রেখেই পোশাক শিল্প এগিয়ে যেতে পারে।
আগামী মাসে ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ চালু
বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে আগামী মাসের মধ্যেই ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ চালু করা হবে বলে জানান লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ইনভেস্টমেন্ট সামিট এবার একটু ভিন্ন আকারে হবে। সেখানে শুধু সেমিনার বা বক্তৃতার পরিবর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।
সরকার বাজার অর্থনীতিকে আরও কার্যকর করার পাশাপাশি এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।