নৃ-গোষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে চান পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, ভাষাগুলোকে সরকারিভাবে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়ন কাজে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মিলনায়তনে ‘প্রাথমিক স্তরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যালোচনা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা জানান।
পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। এজন্য হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে সরকারিভাবে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়ন কাজে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় গোষ্ঠীর ৪১টি ভাষা এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কেবল পাঁচটি ভাষাকে জাতীয়ভাবে মাতৃভাষা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
তিনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন কিছু সম্প্রদায় রয়েছে, যার জনগোষ্ঠী অনেক কম। তাদেরও ভাষা আছে। যেমন- লুসাই, তাদের মোট জনগোষ্ঠী আড়াই হাজার। তাদের মাতৃভাষাও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বাকি ভাষাগুলোর কথা বা ভাষাকে উদ্ধার করা ও টিকিয়ে রাখাও জরুরি বলে মনে করছি। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় মানুষের সংখ্যা অনেক কম। আমাকে এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গভীর চিন্তা করতে হয়। পার্বত্য অঞ্চলের লুসাই, চাক, বোম সম্প্রদায়ও দেশের মূলধারার সঙ্গে এক হতে চায়।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ এখন আর পিছিয়ে থাকতে চায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে চাই। আপাতত প্রি-প্রাইমারি থেকে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত শুরু করবো। পরে উপজেলা পর্যায়ে দুর্গম এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণের মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে চাই। যাতে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা থেকে ঝড়ে না পড়ে। আমাদের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের ভীতি দূর করতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রশিক্ষিত দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা আমার আরেকটি লক্ষ্য। যেহেতু আমাদের দক্ষ শিক্ষকের সংকট রয়েছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে দক্ষ শিক্ষকদের একটি উপজেলার ৮ থেকে ৯টি বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে বাই রোটেশান পাঠদান ও পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে— যাতে প্রত্যেক ছাত্র সঠিক ও আধুনিক শিক্ষা লাভ করতে পারে।
উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আমার দ্বিতীয় এজেন্ডা হলো লাইভলি হুড ডেভেলপমেন্ট। পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো। আর আমার তৃতীয় এজেন্ডা হলো, পরিবেশ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানার সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্বে) মো. মনিরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মডারেটর মাসুদ আকতার খান, এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন এনসিটিবি’র ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ মো. আব্দুল মুমিন মোছাব্বির।