X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

অটিজম: কবে সচেতন হবে বাবা-মা-সমাজ?

জাকিয়া আহমেদ
০২ এপ্রিল ২০১৬, ১৪:৫৯আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:০৩

অটিজম আক্রান্ত সন্তানের সঙ্গে এক সচেতন মা ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীতে অটিজমের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। একটা সময় বড় সমস্যা হয়ে যাবে যদি এখন থেকেই এটিকে চিহ্নিত করা না হয়। ১৯৭৫ সালে অটিজমে আক্রান্তদের সংখ্যা যা ছিল এই সংখ্যা বর্তমানে কয়েকগুণ বেশি। অটিজম কোনও লজ্জা বা ভয়ের বিষয় নয়। সচেতনতার অভাবই আমাদের দেশে পরিবারে মূল অভাব। এ থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হওয়া যাবে, অটিজমে আক্রান্ত শিশুটিকে যত তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা যাবে, ততই তার জন্য মঙ্গল বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, মা-বাবারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের নিয়ে আসেন না। তারা ঘরে বন্দি হয়ে থাকেন, আর ভাবেন- এটি মানসিক রোগ, লজ্জার বিষয়। এসব কারণে তাদের পরিচর্যা বা চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যায়। এ থেকে বেরুতে হবে। যদি কোনও লক্ষণ তারা বুঝতে পারেন তাহলে দেরি না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই অনেকটা রিকভার করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে বাবা-মা, সমাজ সবাইকে সচেতন হতে হবে। এটি কোনও লজ্জা বা ভয়ের বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে- তারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে ছিল ২ হাজার ৫০০ জনে একজন, সেখানে ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী এখন সারা পৃথিবীতে প্রতি ৬৮ জন শিশুর ভেতরে একজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এর এক জরিপে এটি বের হয়েছে। তারা প্রতি দুই বছর পর পর এ নিয়ে জরিপটি করে থাকে। এ বছরের শেষে তারা আবার জরিপ করবে।

জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অটিজমের লক্ষণগুলো দেখা দেয় তিন বছরের কাছাকাছি সময়ে। মূলত এ সময়েই প্রধানত বড় বড় লক্ষণগুলো দেখা যায়। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, চোখে চোখ রেখে না তাকানো, নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া, সমবয়সীদের সঙ্গে না মেশা, একই আচরণ বার বার করা বা অস্বাভাবিক আচরণ করা, সামাজিক যোগাযোগ করতে না পারা এবং ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে না পারা অথবা রপ্ত করতে পারলেও সেগুলো ভুলে যাওয়া। এগুলোকেই আমরা লক্ষণ বলে থাকি। কিন্তু আর্লি সাইন বলেও কিছু লক্ষণ রয়েছে সেগুলো এক বছরের মধ্যেই কিছুটা বুঝতে পারা যায় এবং সেই লক্ষণগুলো যাদের থাকে তাদের অটিজম হবেই সেটা বলা যায় না। তবে তখন থেকেই আমরা কিছুটা সতর্ক হতে পারি।

তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অটিজম নিয়ে অনেক কাজ করা দরকার বলে মনে করেন ডা. হেলাল উদ্দিন। প্রথমতই সচেতনতা তৈরি করতে হবে। অটিজম কি জিনিস এটা বুঝতেই অনেক সময় লেগে যায় বাবা মায়ের কিংবা এ ক্ষেত্রে যারা প্রফেশনাল রয়েছেন তাদেরও।

অটিজম আক্রান্ত ছেলের সঙ্গে এক সচেতন মা জানা গেছে, অটিজমের ক্ষেত্রে চিকিৎসা শব্দটি না বলে বলা হয় ম্যানেজমেন্ট। কারণ, একজন অটিস্টিক শিশুর জন্য একজন চিকিৎসকই যথেষ্ট নয়, এটি একটি টিম ওয়ার্ক। কারণ এখানে সাইক্রিয়াট্রিক, একজন পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট দরকার, একজন সাইকোলজিস্ট, পুরো সময় ধরে থেরাপিস্ট দরকার, স্পেশাল এডুকেশন দরকার। তাদেরকে পরিচর্যা করে যেতে হয়। এই পরিচর্যার মধ্যে যদি একজন অটিস্টিক শিশু থাকেন তাহলে অনেকাংশই তিনি মূল ধারায় (মেইন স্ট্রিম) আসতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ওই শিশুটিকে একটি প্রফেশনাল কেয়ারে নিয়ে আসতেই আমাদের দেশে সময় লেগে যায়। আমরা প্রথমে বুঝি না, বুঝতে পারলেও সেভাবে পদক্ষেপ নিই না, মানি না-এসব ক্ষেত্রে দেশে বিশাল একটা গ্যাপ রয়ে গেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- আমাদের দেশে এখনো এই ক্ষেত্রে প্রফেশনালদের বিশাল একটি ঘাটতি রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে সাইক্রিয়াট্রিক রয়েছেন মাত্র ২১০ জন এবং এদের মধ্যেও যে সবাই অটিজম নিয়ে কাজ করেন তাও নয়। চাইল্ড নিউরোলজিস্টের সংখ্যা হাতে গোনা একেবারেই অপ্রতুল। অপরদিকে স্পেশাল এডুকেশনের জন্য যারা রয়েছেন তাদের জন্য আলাদা টিচিং ইন্সটিটিউট নেই। এক্ষেত্রে বিশেষায়িত সেবা, বিশেষায়িত চিকিৎসা কারা দেবেন, কীভাবে দেবেন সেটাও নির্দিষ্ট নেই। স্পেশাল স্কুলগুলোর মান যাচাইয়ের ব্যবস্থাও দেশে খুব বেশি নাই। আবার বাণিজ্যিক কারণেও কিছু স্কুল তৈরি হয়েছে যেগুলো প্রকৃত সেবা দিতে পারছে না- তাই এক্ষেত্রে আমাদের সুপার ভিশনের জায়গা নেই।

নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার এবং অটিজম নিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি অ্যাকশন প্ল্যান হতে যাচ্ছে, যেখানে এ বিষয়গুলোকে নিয়ে আসতে হবে। ২০১৩ থেকে শুরু হলেও সেটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। আশা করা যায় ২০১৬ থেকে এটি শুরু হবে।

অপরদিকে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মানুষ এখন কিছুটা জানে এবং পলিসি লেভেলেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু অটিজমের সব কাজকর্ম শহরকেন্দ্রিক অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সরকারের উচিত এটাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। আরেকটি সমস্যা হলো, এক্ষেত্রে এক্সপার্ট মানুষ নেই, খুবই কম। যেকারণে অটিস্টিক শিশু এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর পার্থক্য করতে পারে না। এ জায়গাটায় রয়েছে অনেক বড় ক্রাইসিস।

যেহেতু বর্তমান সরকার বিষয়টি নিয়ে অনেক ইতিবাচক কাজ করছে, পলিসি হাতে নিয়েছে, তাদের উচিত হেল্থ কমপ্লেক্সগুলোতে অন্তত একজন বিশেষজ্ঞ তৈরি করা যিনি এই পার্থক্য বুঝতে পারবেন, আইডেন্টিফাই করতে পারবেন। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে অর্থ বরাদ্দ। কারণ এদের ইন্ডিপেনডেন্ট লাইফ তৈরি করতে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দরকার। আবার এদের জীবনযাত্রা বিভিন্ন কারণেই ব্যয়বহুল সেটিও সরকারের খেয়াল রাখা দরকার।

/এএইচ/আপ- এপিএইচ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাথার খুলিসহ গ্রেফতার ৪
কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাথার খুলিসহ গ্রেফতার ৪
শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ বললেন এনসিপি নেত্রী সামান্থা
শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ বললেন এনসিপি নেত্রী সামান্থা
মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দলকে ‘হাস্যকর’ বললেন ট্রাম্প
মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দলকে ‘হাস্যকর’ বললেন ট্রাম্প
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে ড্রাই ডক
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে ড্রাই ডক
সর্বাধিক পঠিত
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে