X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌযান শ্রমিকদের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন বেতন কাঠামো

শফিকুল ইসলাম
০৪ মে ২০১৬, ০০:২৩আপডেট : ০৪ মে ২০১৬, ০০:৩১

নৌযান অবশেষে নৌযান শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো তৈরি হচ্ছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি নতুন বেতন কাঠামো তৈরি করবে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই নৌযান শ্রমিকরা নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাবেন। এ ছাড়া অন্যান্য দাবি ও সমস্যা সমাধানের জন্য নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে চলতি মাসের ১২ তারিখ আবারও বৈঠকে বসবেন নৌযান মালিকরা।
জানা গেছে, নতুন বেতন কাঠামোর দাবিতে দেশের নৌপরিবহন সেক্টরে বিদ্যমান অস্থিরতার নিরসন হয়নি। সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকেও কোনও সমাধান হচ্ছে না। শ্রমিকদের খুশি করতে গেলে মালিকপক্ষ অখুশি হন। আবার মালিকদের খুশি করতে গেলে শ্রমিকরা অখুশি হন। এমন অবস্থায় চলছে দেশের নৌপরিবহন সেক্টর। সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল সচিবালয়ে নৌযান মালিক, নৌযান শ্রমিক এবং সরকারের পক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রমিকদের যে বেতন কাঠামো ঘোষণা দিয়েছিলেন তার প্রতিবাদে ২৬ এপ্রিল থেকে জাহাজ চলানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নৌযান মালিকরা। এর এক সপ্তাহ পর সোমবার দুপুরে নৌযান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। ওই বৈঠকে স্থায়ী কোনও সমাধান ছাড়াই নৌযান মালিকেরা সোমবার বিকেল থেকে জাহাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

জানা গেছে, বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ধর্মঘট শুরু করেছিল নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশন। এরপর ২৬ এপ্রিল নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সরকার, মালিক ও শ্রমিক—এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো ‘ক’ শ্রেণির জন্য ১০ হজার টাকা, ‘খ’ শ্রেণির জন্য ৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং ‘গ’ শ্রেণি শ্রমিককের জন্য ৯ হাজার টাকা বেতন ঘোষণা দিলে তা মেনে নিয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট তুলে নেন। কিন্তু ওই বৈঠকেই শাজাহান খান ঘোষিত নতুন মজুরি নিয়ে আপত্তি জানান মালিক পক্ষের নেতারা। এরপর তারা নৌযান না চালানোর ঘোষণা দেন।

আরও পড়তে পারেন: দায়িত্ব কমানো হলো সৈয়দ আশরাফের

বৈঠক সূত্র জানায়, বেতন কাঠামো ২০১০ সালের আদলে এবারও সরকার নৌযান শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো করেছে।  তবে ২০১০ সালের তুলনায় কত শতাংশ বাড়িয়ে বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে তা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ঠিক করা হবে।

সরকারের পক্ষে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান শতভাগ বেতন বাড়ানোর পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি সব সময় শ্রমিকের পক্ষে। আমার বিশ্বাস, মালিকরা তাদের শ্রমিকদের ভালো বেতনই দেবেন। আমি প্রয়োজন হলে মালিকদের পকেট থেকে শ্রমিকদের জন্য জোর করে টাকা আনব। আশা করছি, তার প্রয়োজন হবে না।

উল্লেখ্য, ২০১০এর বেতন কাঠামোর (ক) পরিচ্ছেদে চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গরে চলাচলকারী কোস্টার ও কোস্টার ট্যাংকার, অভ্যন্তরীণ নৌরুটে সারাবছর চলাচলকারী কার্গো, বার্জ, টাগ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছিল ৫৫ থেকে ১০০ ভাগ। এতে মূল বেতন সর্বনিম্ন তিন হাজার এবং সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৭২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এ শ্রেণির নৌযানে প্রথম শ্রেণির মাস্টার ও ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন ৯ হাজার ৬৯৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৫৫ টাকা, ২য় শ্রেণির মাস্টার সর্বনিম্ন ৮ হাজার ৩৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮৫৫টাকা, ৩য় শ্রেণির মাস্টার সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৪৪১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৭৫১টাকা, সুকানি, ইঞ্জিন টেন্ডল সর্বনিম্ন চার হাজার ৬৪৫ টাকা  থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮৪৫ টাকা, ডেক, টেন্ডল, গ্রিজার সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৩২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৭০ টাকা এবং লস্কর, বাবুর্চি, ক্লিনারদের সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
(খ) পরিচ্ছেদে শ্যালো ট্যাংকারের মাস্টার, চালক ও শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছিল ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। তাদের মজুরি সর্বনিম্ন মূল বেতন ২ হাজার ১৭৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরসঙ্গে ইনক্রিমেন্ট এবং অন্যান্য সুবিধা যোগ করা হয়েছিল।

এতে প্রথম শ্রেণির মাস্টার ও ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন ৭ হাজার ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৭৮৬টাকা, ২য় শ্রেণির মাস্টার সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৮৮৬টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৩২৬ টাকা, ৩য় শ্রেণির মাস্টার সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৬৮২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯৬৫টাকা, সুকানি, গ্রিজার, ডেক টেন্ডল, ইঞ্জিন টেন্ডল সর্বনিম্ন ২ হাজার ৩৬৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯৩৩ টাকা এবং লস্কর, বাবুর্চি, ক্লিনারদের সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭৩৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

(গ) পরিচ্ছেদে বেসরকারি যাত্রীবাহী লঞ্চ, পণ্যবাহী কার্গো, টুইন লঞ্চ ও অভ্যন্তরীণ বার্জের শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছিল ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। এতে মূল বেতন সর্বনিম্ন ১ হাজার ৯৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ২৮০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আরও পড়তে পারেন: কাঠগড়ায় অস্থির শামসুদ্দিন

এতে প্রথম শ্রেণির মাস্টার ও ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন ৭ হাজার ৭০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৮৬৫টাকা, ২য় শ্রেণির মাস্টার সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৭৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ২৮৬টাকা, ৩য় শ্রেণির মাস্টার সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৫৩২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৮০৬টাকা, সুকানি ও গ্রিজার সর্বনিম্ন ২ হাজার ৯৫৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭৪৩ টাকা এবং লস্কর, বাবুর্চি, ক্যাবিন বয়, ক্লিনারদের সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

(ঘ) পরিচ্ছেদে বালু পরিবহন ও ড্রেজিং কাজে ব্যবহৃত বেসরকারি বাল্ক হেড নৌযানের শ্রমিকদের জন্য ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩ হাজার ২০০ এবং সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ শ্রেণির নৌযানে ৩য় শ্রেণির মাস্টার এবং ড্রাইভারের বেতন সর্বনিম্ন সাত হাজার ১০০ থেকে সর্বোচ্চ নয় হাজার ৭০০ দাঁড়াবে। সুকানি গ্রিজারের সর্বনিম্ন ৬ হাজার ১৮০ সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২৬০টাকা, হুইলম্যান সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৩৩০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ১০টাকা, লস্কর, বাবুর্চি, ক্যাবিন বয়, ক্লিনাদের সর্বনিম্ন ৪ হাজার ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এছাড়া (ক) এবং (খ) পরিচ্ছেদের জন্য চিকিৎসাভাতা ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, (গ) পরিচ্ছেদে প্রান্তিকভাতা ২০০৪ এর তুলনায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি, ধোলাই ভাতা ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসবভাতা দেওয়া হয়েছিল। বেতন কাঠামোতে বলা হয়েছিল, প্রতি ৩ বছর চাকরির জন্য একটি করে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে। তবে কোনও অবস্থাতে তিনটির বেশি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে না। মজুরি কাঠামো পহেলা জুলাই ২০০৯ থেকে কার্যকর হয়েছিল পরবর্তী ৫ বছরের জন্য।

সে হিসাব অনুযায়ী ২০১৪ সালের জুলাই মাসে পরবর্তী নতুন বেতন কাঠামো অনুসারে নৌযান শ্রকিদের বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও তারা তা পাননি।

/এমএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে একসঙ্গে কাজ করবে দুই মন্ত্রণালয়
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে একসঙ্গে কাজ করবে দুই মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশে বিশ্বকাপ: রোমাঞ্চের চেয়ে টেনশন বেশি কাজ করছে নিগারের
বাংলাদেশে বিশ্বকাপ: রোমাঞ্চের চেয়ে টেনশন বেশি কাজ করছে নিগারের
১৯ বছর পর হত্যা মামলায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
১৯ বছর পর হত্যা মামলায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি