X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কাঠগড়ায় অস্থির শামসুদ্দিন

উদিসা ইসলাম
০৩ মে ২০১৬, ১৫:০২আপডেট : ০৩ মে ২০১৬, ১৫:০৬

শামসুদ্দিন আহমেদ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যাদের সঙ্গে অপরাধে লিপ্ত ছিলেন তাদের সবাই পলাতক, কাঠগড়ায় একা দাঁড়িয়ে শামসুদ্দিন। রায় ঘোষণার সময় তিনি ছিলেন অস্থির। সাধারণ শার্ট-প্যান্ট পরা শামসুদ্দিনকে যতটা নিরীহ মনে হয়, কাঠগড়ায় রায় ঘোষণার পর ততোটা অসহায় ছিলেন না। ট্রাইব্যুনাল রায়ে গুলি করে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে ওঠেন, ‘ফলস সাক্ষী, ফলস সাক্ষী।’
আদালত কক্ষে থাকা তার স্বজনরা তখন বিচার দিতে থাকেন আল্লাহর দরবারে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয় শামসুদ্দিনকে। এরপর সাড়ে ১০টায় তাকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। কাঠগড়ায় ওঠার সময় শামসু্দ্দিন স্যাণ্ডেল খুলে ভেতরে ঢোকেন। এরপর থেকে নীরব হয়ে তিনি বসেছিলেন খালি পায়ে, চিন্তিত ভঙ্গিমায়।
বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে যখন আদালতে রায়ের সারসংক্ষেপ পড়া শুরু হয়, তখন তিনি একটু সতর্ক হন। ওই পুরো সময় তার পরিবারের সদস্যরা একটু পরপর পেছনে থাকা কাঠগড়ার দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় শান্ত থাকতে বলেন। শামসুদ্দিন সেদিকে তাকিয়ে শান্ত হলেও ১২টা ৫ মিনিটে যখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ৫ জনের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে, ততক্ষণে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যান শামসুদ্দিন।
দাঁড়িয়ে কাঠগড়ায় হেলান দিয়ে তিনি শুনতে থাকেন রায়ের শেষ অংশ। এর মধ্যে একবার বসে পানি পান করেন। আর ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। শামসুদ্দিনের আইনজীবী সোহেল রানা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষীদের এনেছিল, তারা সবাই শিশু বয়সী। এমনকি শামসুদ্দিন সাহেবও ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা কোনও অভিযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।’

আরও পড়ুন: নিজামীর রিভিউ রায় ৫ মে

দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত ট্রাইব্যুনালের আদালত কক্ষ থেকে রায় শেষে তাকে নামানোর সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের খোঁজার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি নির্দোষ।’ যদিও ট্রাইব্যুনাল তাদের নৃশংসতার কথা তুলে ধরে রায়ে বলেছেন, তারা যে নৃশংশ আচরণ করেছেন তাতে সাধারণ মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেননি। তারা ত্রাস তৈরি করেছিলেন পুরো এলাকায় এবং সব কয়টি অভিযোগে শামমুদ্দিনসহ ৫ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। শামসুদ্দিন ও নুরুদ্দিন সশরীরে উপস্থিত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এমনকি তিন নম্বর অভিযোগে আয়লা উপজেলায় মো. গফুরকে অপহরণ করে ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খুদির জঙ্গল ব্রিজে হত্যা করার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন হত্যার শিকার গফুরের স্ত্রী আখতার হাফিজা খাতুন।
কোর্টরুম থেকে ফিরে শামসুদ্দিন হাজতখানায় বসেননি। তিনি দাঁড়িয়ে পরিবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে তিনি কথা বলারও চেষ্টা করেন।

উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিনকে ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে হাজির করার সময় তার পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ছেলে গোলাপ মিয়া বাদী হয়ে ২০১০ সালের ২ মে মামলাটি দায়ের করেন।

এ মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৩ সালের ৬ জুন ও শেষ হয় ২৪ নভেম্বর। মোট ১ বছর ৫ মাস ১৮ দিন তদন্ত শেষে ৪টি ভলিউমে ৪৫০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তদন্ত চলাকালে এলাকার মোট ৬০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধে শামসুদ্দিনসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ

/এসটি/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
কান উৎসব ২০২৪কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
নীরবে মামুনুল হক,  শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
নীরবে মামুনুল হক, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে