X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২
শিক্ষককে শাস্তির প্রতিবাদ সোশ্যাল মিডিয়ায়

‘সরি স্যার’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৭ মে ২০১৬, ১৩:১৭আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০২:১৮

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। ‘সরি স্যার’, 'উই আর সরি স্যার', 'কান ধরে হোক প্রতিবাদ' লেখা হ্যাশট্যাগ দিয়ে এই ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। প্রতিবাদ জানাতে কানে ধরা অবস্থায় তোলা নিজেদের ছবিও পোস্ট করেছেন অনেকে।

#sorrysir হ্যাশট্যাগে দেখা গেছে শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানে ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় অনেকেই ক্ষমা চাচ্ছেন। একজন শিক্ষককে এমন ‘ঘৃণ্য’ উপায়ে অপদস্থ করার বিষয়ে পুরো জাতির দায় স্বীকার করেছেন কেউ কেউ।  

পাশাপাশি কান ধরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর ডাক দিয়ে একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে ফেসবুকে। 'কান ধরে হোক প্রতিবাদ' নামের এই ইভেন্টে সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে যাওয়ার যাক দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (১৩ মে) দুপুরে বন্দর উপজেলার কল্যান্দি এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণধোলাই এবং পরে এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে কানে ধরে উঠবস করানো হয়। এ নিয়ে পরে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়।

জানা যায়, গত ৮ মে স্কুলের দশম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র রিফাত হোসেন ক্লাসে দুষ্টুমি করায় তাকে মারধর করেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। শুক্রবার সকালে উন্নয়ন নিয়ে স্কুল কমিটির ডাকা সভায় রিফাতের অভিযোগ আলোচনায় ওঠে। ওই সময়ে হঠাৎ করে এলাকায় একটি গ্রুপ ছড়িয়ে দেয় যে, প্রধান শিক্ষক ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। মসজিদের মাইকেও বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হলে আশেপাশের লোকজন এসে স্কুল ঘিরে ফেলে ও শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পুলিশ ও স্থানীয় রাজনীতিকসহ জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে বিকেল ৪টায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান উপস্থিত হলে তার সামনেই শত শত লোকজন বিক্ষোভ করতে থাকেন। তখন এমপির উপস্থিতিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে কান ধরে উঠবস করেন।

ওই সময়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্কুল থেকে চাকরিচ্যুত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিবকে নির্দেশ দেন সেলিম ওসমান।

তবে এই ঘটনার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে সন্দেহ করছে ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। তিনি হিন্দু হওয়ায় তাকে শায়েস্তা করতেই ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তির মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি সামনে আনা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা। কমিটি সংশ্লিষ্ট একজন জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটির পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন তারা। তবে আরও তদন্ত করা হবে। কারণ, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর।

স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে বেষ্টনীর দিতে একটি দেয়াল নির্মাণ করা হয়। এ বেষ্টনী দেওয়ার পুরো খরচই অনুদান হিসাবে দেন নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও বিকেএমইএ নেতা সেলিম ওসমান। আশেপাশের ১২টি স্কুলে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এক কোটি টাকা করে অনুদান দেন তিনি। সেই তালিকার অন্যতম স্কুল ছিল এই পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়।

জানা গেছে, এখানে অনুদানের টাকা তিনি দুই ধাপে দেন। তার কাছ থেকে সর্বশেষ পাওয়া ৫০ লাখ টাকা দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে এই স্কুলের দেয়াল নির্মাণ করে স্কুল কমিটি। এজন্য তিনটি কমিটি করা হয়। এগুলো হচ্ছে তদারকি কমিটি, উন্নয়ন কমিটি ও ব্যয় কমিটি। এগুলোর কোনওটিতেই প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না

কিন্তু, নির্মাণের সাতদিনের মধ্যেই গত ২৩ সেপ্টেম্বর ওই দেয়ালের একাংশ পাশের পুকুরে ধসে পড়ে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। আর এতেই তিনি হয়ে যান কমিটির চক্ষুশূল।

স্থানীয়রা আরও জানান, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দেয়াল নির্মাণ এবং তা ধসে পড়ার ঘটনাটি দাতা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কানে গেলে তিনিও স্কুল কমিটির ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং সাফ জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত কোনও অনুদান দেওয়া হবে না, যারা এ কাজে জড়িত তাদেরই ওই দেয়াল নতুন করে বানাতে হবে। তার নির্দেশ পেয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটি ওই দেয়াল পুনর্নিমাণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু, এর ঝাল গিয়ে পড়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর। মূলত ওই ঘটনার পর থেকেই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে চরম বিরোধ তৈরি হয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের। তাকে সরাতে কমিটির একাংশ ভীষণ তৎপর হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে সৃষ্ট ক্ষোভ রূপ নিতে থাকে চরম প্রতিহিংসায়।

শ্যামল কান্তি ভক্ত বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আমি স্কুলের শুরু থেকেই চাকরি করে আসছি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি চাচ্ছে না আমি প্রধান শিক্ষকের পদে থাকি। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বোন পারভীন আক্তারকে প্রধান শিক্ষক করতেই মূলত চেষ্টা করা হয়। এছাড়া স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির তিনজন সদস্য মতিউর রহমান, অভিভাবক সদস্য হিসেবে নির্বাচিত উপজেলা নির্বাহী অফিসের পিয়ন মিজানুর রহমান ও মোবারক হোসেন এ তিনজন মিলেই আমাকে পদচ্যুত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। পুরোটা পরিকল্পিত ও সাজানো। আমি আসলে পলিটিক্স বুঝতে পারি নাই। সে কারণেই আমার ওপর অপবাদ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মতিউর রহমানের নেতৃত্বে মিজানুর রহমান ও মোবারক হোসেন মিলেই শুক্রবার হামলা চালান এবং আমাকে মারধর করেন। সেদিন আমার প্রাণনাশের জন্য হামলা চালানো হয়েছে। মতিউর রহমান আমাকে শায়েস্তা করা হবে বলে ঘটনার একদিন আগে হুমকি দিয়েছিলেন।

শুক্রবারের ঘটনা প্রসঙ্গে শ্যামল কান্তি ভক্ত  বলেন, আমাকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে আমার স্থানে অন্য কাউকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর রেখে আমার যাবতীয় শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতার মূল সনদ এবং বিদ্যালয়ের যাবতীয় চাবি রেখে দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে স্থানীয়দের জনরোষ থেকে এমপি মহোদয় আমাকে উদ্ধার করেন। তখন আমার আসলে হিতাহিত জ্ঞান ছিল না।

আরও পড়ুন- 

‘ষড়যন্ত্র’ দেখছে তদন্ত কমিটি, আন্দোলনে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতারা

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হয় গ্রামবাসীকে

/এফএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউল্যাবে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
ইউল্যাবে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
এভিয়েশন সিকিউরিটির নতুন ইউনিফর্ম উদ্বোধন
এভিয়েশন সিকিউরিটির নতুন ইউনিফর্ম উদ্বোধন
এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ ইসলাম
এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ ইসলাম
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট