X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতি ক্ষমা চাচ্ছে সেই শিক্ষকের কাছে!

জাকিয়া আহমেদ
১৭ মে ২০১৬, ১৬:২৯আপডেট : ১৭ মে ২০১৬, ১৬:৩৯

বিএল কলেজ থিয়েটারের কর্মীরা তাকে বলা হচ্ছে, হিন্দু শিক্ষক- একজন শিক্ষকের আবার ধর্ম কী সেটাইতো বুঝতে পারছি না। আমরা কতোটা অমানুষ হয়ে গেছি যে, সেই দৃশ্য আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, মোবাইলে ভিডিও করছি। এতোটা বিকৃতি কী করে হলো আমাদের সেটাই ভাবছি গত তিনদিন ধরে। ভিডিওটা আমি দেখিনি, দেখার মতো মানসিক দৃঢ়তা আমার নেই, আমি শুধু ভাবছি, ওই মানুষটির জায়গায় যদি আমি কিংবা আমার বাবা অথবা আমার ভাই থাকতো তাহলে আমাদের মানসিক অবস্থাটা আজ কী হতো… বাংলা ট্রিবিউনকে এই কথাগুলো বলেন, শহিদুজ্জামান শিল্পী যিনি নিজেও একজন শিক্ষক।
আরও পড়ুন: সেই শিক্ষককেই সাময়িক বরখাস্ত করা হলো!
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। ‘সরি স্যার’, ‘উই আর সরি স্যার’, ‘কান ধরে হোক প্রতিবাদ’ লেখা হ্যাশট্যাগ দিয়ে এই ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। প্রতিবাদ জানাতে কানে ধরা অবস্থায় তোলা নিজেদের ছবিও পোস্ট করেছেন অনেকে।
কেন নিজের ছবি এভাবে দিচ্ছেন জানতে চাইলে একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কর্মরত মশিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছু হবে না, কিন্তু এ আমার এক ছোট্র প্রতিবাদ’।
‘ইস্ কেমন হেয়ালি দেখো... এদিকে উনি আমাকে দিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহসী- মানবিক সাংবাদিকের অভিধা, আরেকদিকে শিক্ষক শ্যামলকান্তির কানে ধরে শাস্তি পাওয়ার দৃশ্য! একটা কিনলে আরেকটা ফ্রির মতো, শ্যামল কান্তির অপরাধ হিসেবে রঙিন প্যাকেটে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ধর্মের বিরুদ্ধে কটুক্তি! এরপর কি আর শিক্ষা-শিক্ষক-শিক্ষকের মর্যাদা বা জাতির মেরুদণ্ড কোনও থিউরিতেই প্রতিবাদ এগুনো যাবে? নাকি সাহস ও দুঃসাহস হতে পারবে?’ নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন সাংবাদিক মু্ন্নী সাহা। তিনি লেখাটি শেষ করেছেন এভাবে-
‘বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লাইন ধার করে বলি--- ‘করুণাময়, তোমার হেয়ালি ফিরিয়ে নাও,
আমি সারাজীবন অক্ষমতা নিয়েছি মাথা পেতে, নিজের ধিক্কারে--

আমি সারাজীবন পাতাঝরা বৃক্ষের মত।’

ইরেশ জাকের আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম লিখেছেন, প্রবীণ শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের অপমান সত্যিই আর সইতে পারছি না। এখন পর্যন্ত কোনও সুবিচার দেখছি না। এ অপমানের ঘটনায় এবং স্বৈরাচারী এরশাদের তথাকথিত জাপার একজন সংসদ সদস্য সম্পর্কে মানুষের মনে কী ধরনের ঘৃণার জন্ম নিচ্ছে তা নিশ্চয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতক্ষণে উপলব্ধি করতে পারছেন। তাহলে কেন এতো বিলম্ব হচ্ছে?
একজন সংসদ সদস্য কী আইনের উর্ধ্বে? সংবিধানের উর্ধ্বে? সংবিধানের রক্ষক সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় কোনও বিচারপতি কী স্বপ্রণোদিত কোনও রুল জারি করতেও ভুলে গেছেন? নাকি এখনও ওপরের কোনও আদেশ পাননি? নাকি আপনারা কোনও শিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেননি? আপনাদের বিবেক কি নাড়া দেয় না? ন্যূনপক্ষে আইন ভঙ্গের অভিযোগে কী ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কিছু একটা ব্যবস্থা নেওয়া যায় না? প্লিজ! জাতিকে এই লজ্জা থেকে বাঁচান।
শ্যামল কান্তি ভক্তের অপমানের ঘটনায় আজ আমার শৈশব ও কৈশোরের কথা মনে পড়ছে। আমার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক অনিল স্যার, হাইস্কুলের দেবদাস স্যার, কোচিংয়ের দয়াল দা’ কত পরম স্নেহে আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। স্কুল থেকে ফিরে দয়াল দা’র বাসায় আমরা প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আমরা অধিকাংশ ছাত্র ছিলাম মুসলিম। দয়াল দা’র মা আমাদের নিজ সন্তানের মত আদর স্নেহ করতেন। আমরা কে কোন ধর্মের তা কখনোই বুঝিনি বা আমাদের কাছে তা কখনোই গুরুত্ব পায়নি। অথচ দুই যুগ আগের বাংলাদেশ আর এখনকার সময়ের বিস্তর পার্থক্য দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আমাদের তো এগিয়ে যাবার কথা। তাহলে কোথায় চলেছি আমরা? [ বি. দ্র.: প্রবীণ শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের নামের আগে যারা ‘হিন্দু শিক্ষক’ বলে অভিহিত করছেন তাদের উদ্দেশে আমি মনে মনে একটা গালি দিলাম। কারণ একজন শিক্ষকের ধর্মীয় কোনও পরিচয় নেই।]
এদিকে, আজ বিকেল পাঁচটায়, শাহবাগে আয়োজন করা হয়েছে গণজমায়াতের। ফেসবুকে ইভেন্টের কাভার পিকে লেখা রয়েছে, শধু একজন শিক্ষক নয়, কান ধরে উঠবস করছে বাংলাদেশ!!! এই ইভেন্টের হোস্ট এবং ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ তার অনুসারীদের স্বার্থ হাসিলে তারা গুজব সৃষ্টি করে। তারা যেভাবে একজন প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করেছে সেটা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য না। বাগেরহাটের চিতলমারী, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে যেভাবে হঠাৎ করে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে যেভাবে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে সেটা এক অশনি সংকেত দিচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে আমাদের এখানে আরও ভয়ংকর সাম্প্রাদায়িক সহিংসতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, সেলিম ওসমানসহ তার সহযোগিদের গ্রেফতার করার, বলেন বাকী বিল্লাহ।
আরও পড়ুন: ‘সরি স্যার’

এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী