বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জঙ্গিবাদ প্রচারণার বিরুদ্ধে আসছে প্রতিরোধ কমিটি। শিগগিরই কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তবে কমিটির কাজ কী হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গিবাদ প্রচারকদের কোন কোন কাজ বা কোন ধরনের আচরণ দেখে শিক্ষার্থীদের সাবধান হতে হবে সে নিয়ে কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিকনির্দেশনা তৈরি করে দিতে পারে। জঙ্গিবাদ প্রচারকরা রিক্রুটমেন্টের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যেন পাল্টা প্রশ্ন করতে পারে সেসব শেখানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিতে পারে এ ধরনের কমিটি।
জঙ্গিবাদ নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা জরুরি কেউ তাদের বন্ধু, পরিবার, স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কিনা কিংবা তার জীবনকে খুব বেশি ইসলাম-পরিপন্থী অ্যাখ্যা দিয়ে ধর্মীয় আলাপ শুরুর কাজ করছে কিনা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি তৈরির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীতে দিকনির্দেশনা বিষয়ে সেসব কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। বিভিন্ন ফোরামে কথা বলে সেটা করা হবে। কমিটি কিভাবে এবং কোন বিষয়ে কাজ করতে পারে সেসব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।
সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারা বলছেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী সমন্বিত নীতিমালা যেমন দরকার, তেমন পাবলিক প্রাইভেট উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দরকার এমন দিকনির্দেশনা যাতে শিক্ষার্থীরা সেসব পথে পা না বাড়ায়। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশটাকে পাল্টানোয় মনোযোগী হতে হবে।
পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন জঙ্গিবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তারা সেখানে এ ধরনের দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সামনে দেয়ালে পোস্টারে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরা হয়। যদি ক্যাম্পাসে কেউ এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়, তাহলে সতর্ক হয়ে যেতে বলা হয়। বাংলাদেশেও এটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে করা দরকার বলে মনে করেন ড. ওমর শেহাব। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির সহায়তায় এ প্রশ্নগুলো তাদের সামনে হাজির রাখবে পোস্টার ব্যানারসহ নানা মাধ্যমে।
প্রশ্নগুলো কী ধরনের জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্মে বিশ্বাসী কাউকে কোনও গোষ্ঠী ধর্মটি পালনের পদ্ধতি ঠিক নেই বলে আলাপ করতে আসে কি না, কোনও অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়েছে কিন্তু যাওয়ার আগে কখনও বলে না সেখানে কী হবে- এমনটি কখনও হয় কি না; নানা কৌশলে কেউ কোনও আড্ডায় আটকে রাখছে কিনা যার কারণে পারিবারিক আবহ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তাদের সংগঠনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কেউ এড়িয়ে যায় কিনা; ক্রমাগত বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করতে থাকে কিনা যে তুমি ভুল পথে আছো, তোমার বাবা-মা ভুল পথে আছে, তোমার বন্ধুরা, শিক্ষকরা, দেশের মানুষেরা সবাই ভুল পথে আছে। এসব প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে সে তখন কী উপায় নেবে তা নির্দেশনায় থাকতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি সহকারী সাধারণ সম্পাদক সিয়াম সারোয়ার জামিল মনে করেন, একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দরকার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী এমন একটা রূপরেখা চাই যেটা এ সংক্রান্ত বিষয়ে শৃঙ্খলা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকেই বড় ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি আরও বলে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের সুরক্ষায় পৃথক পৃথক নির্দেশনা দিচ্ছে, আগামীতেও দেবে। এতে করে বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা আছে।
সাবেক ছাত্রনেতা ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল মনে করেন, দিক নির্দেশনার পাশাপাশি দরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। যেখানে শিক্ষা স্বাধীন, যেখানে স্বাধীন চিন্তা করার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা সেখানে জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে কোনও ধরনের সম্পৃক্ত না হওয়ার বিষয়ে, মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতি পরিপন্থী বা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার প্রশ্নে নির্দেশনা ও প্রচারণা থাকা দরকার।
/এজে/ আপ- এপিএইচ
আরও পড়ুন:
নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকায় আছে ডাক্তার, প্রকৌশলী ও পাইলট
জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে তৈরি হয়েছে এ্যাকশন প্ল্যান: ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতা দেখানোর নির্দেশ