জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সর্তকতা দেখানোর জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে কিছু অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাকশন প্লান বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কিছু নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা পরিপালনে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেনে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন যথাযথ পরিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে ব্যাংকগুলোকে জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সর্তকতা দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। জঙ্গিরা কিভাবে অর্থ লেনদেন করছে, কারা এর মদদদাতা, ব্যাংকিং চ্যানেলে এসব অর্থ লেনদেন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য বিএফআইইউকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ৫৬ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএফআইইউ।
এরই অংশ হিসাবে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কনফারেন্স রুমে দেশের ২৮টি তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের (ক্যামেলকো) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএফআইইউ। বুধবার বাকী ২৮টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ও ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এই দুই ঘটনায় বিদেশি, পুলিশ ও হামলাকারীসহ ৩০ জনের অধিক নিহত হন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেশব্যাপী আরও জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে কেউ যেন ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে জঙ্গি অর্থায়ন করতে না পারেন সে জন্য এ সতর্কতা আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্যাংকগুলো যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে আরও সর্তকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এই নির্দেশনা মূলত দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলো বিএফআইইউ’র দেওয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন এবং জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে কি ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তা জানার জন্য ব্যাংকগুলোর এমডিদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে।সূত্র জানিয়েছে,বাংলাদেশ ব্যাংকের
নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে বছর শেষে ব্যাংকগুলোর ওপর রেটিং করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যে ব্যাংক যথাযথ পরিপালন করেছে ওই ব্যাংকের রেটিং ভালো হয়। জানা গেছে,গত বছরের রেটিংয়ে বেশির ভাগ ব্যাংকই খারাপ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। বৈঠকে বিএফআইইউর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক এ বৈঠকে বলা হয়,ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে কেউ যেন জঙ্গি বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলো সতর্ক রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সতর্কতা আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে বুঝতে না পারার কারণে অনেক শাখা থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাঠানো হয় না। এ বিষয়ে তারা আরও সতর্ক হবেন বলে আশা করা হয়।
বৈঠকে বিএফআইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে সন্দেহজনক লেনদেনের বেশি অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বিপুল অংকের অর্থ পাচার হয়ে থাকে। এর একটি অংশ আবার জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। কোনও লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে বিদ্যমান আইনে তাৎক্ষণিকভাবে বিএফআইইউকে তথ্য দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক ব্যাংক তা করে না। যে কারণে পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিদর্শনে সন্দেহজনক লেনদেনের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। সামনের দিনে কোনওভাবে যেন এধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়েছে,জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংকের এমডি ও ক্যামেলকোদের বিশেষভাবে তদারকি করতে হবে। সব ধরনের আইন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি (কেওয়াইসি) সংগ্রহ করে অ্যাকাউন্ট খোলা। কোনও গ্রাহকের কেওয়াইসি পূর্ণাঙ্গ না থাকলে তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণসহ সার্বিক বিষয়ে তথ্য যাচাই করে লেনদেন করতে বলা হয়েছে। আর পরিচালনা পর্ষদকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে শিগগিরই একটি লিখিত নির্দেশনা ব্যাংকগুলোতে পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: সন্দেহভাজন এক তরুণীসহ চারজনের ভিডিও প্রকাশ
আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িতরা চিহ্নিত, দালিলিক প্রমাণ হাতে নিয়েই গ্রেফতার
জিএম/এমএসএম/