অস্ত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি সব পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি প্রবেশের সুযোগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দ্বিপাক্ষিক এক বৈঠকে মিলিত হলে ডিউটি ও কোটা ফ্রি প্রবেশের সুযোগ চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আহ্বান করেন। ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
এসময় বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে জন কেরি বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুর্দান্ত কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন। দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, জেন কেরি জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, জ্বালানিসহ অন্য অনেক ক্ষেত্রেই আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি বলে প্রধানমন্ত্রীকে আগ্রহের কথা জানান।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য এ দেশকে উন্নত করা।
এ বিষয়ে জন কেরি বলেন, আর্থ-সামাজিক বিষয়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হয়েছি।
জঙ্গিরা তেল বিক্রি ও চাঁদাবাজি করে: কেরি
জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-অর্থ কোথায় পায়? প্রধানমন্ত্রী এমন প্রশ্ন করলে জন কেরি বলেন, তাদের দখলে থাকা তেল ক্ষেত্র থেকে তেল বিক্রি করে এবং ব্যাপক চাঁদাবাজি করে।
সন্ত্রাসে যুক্ত হওয়া তরুণদের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বিত্তবান পরিবারের সন্তানরাও এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এটা আশ্চর্যের ঘটনা। তাদের সব কিছু থাকার পরও বাবা-মা ঠিক মতো সময় না দেওয়ায় তারা এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জন কেরি বলেন, বাবা-মায়েরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন ছেলেমেয়েরা প্রচুর পরিমাণে সহিংসতাপূর্ণ ভিডিও গেমস খেলে।
’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে মর্মান্তিক ভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার কষ্ট বুঝি। এ বিষয়টি পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে।’
বঙ্গবন্ধু ভবন পরিদর্শন করে আমি অভিভূত: কেরি
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন পরিদর্শন ও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন জন কেরি। তিনি বঙ্গবন্ধু ভবন পরিদর্শনের অনুভূতি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি অভিভূত।’ এ সময় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের ইতিহাস তার কাছে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
/পিএইচসি/টিএন/
আরও পড়ুন: জঙ্গি মোকাবিলায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে লড়াই করবে: কেরি