X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচয় এখন ‘রিশাদের বাড়ি’

জাকিয়া আহমেদ
৩১ আগস্ট ২০১৬, ১৪:৩৮আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০১৬, ১৬:৪৯

পড়ার টেবিলে বই, দেয়ালে নিজের হাতে লাগানো প্লাস্টিকের প্রজাপতি, সবই আছে নেই শুধু রিশা

পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটের উল্টোদিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অফিস। তার পাশ দিয়ে চলে গেছে কাজী আলাউদ্দীন রোড। সেখানে গিয়ে কেবল রমজানের বাড়ি জিজ্ঞেস করলেই সবাই আমার বাড়ি দেখিয়ে দেবে। এ কথাগুলো বলেছিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছুরিকাঘাতে নিহত সুরাইয়া আক্তার রিশার বাবা।

কিন্তু এ প্রতিবেদক ইচ্ছে করেই আলাউদ্দীন রোডে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলো, রিশাদের বাড়ি কোনটা। প্রতিটি মানুষ দেখিয়ে দিলো রিশাদের বাড়ি। সবাই এখন ‘রিশাদের বাড়ি’ নামেই চেনে নির্ধারিত বাড়িটিকে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা পৌনে ১২টার দিকে কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনেই একটি টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খান ছুরিকাঘাত করে রিশাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে রবিবার (২৮ আগস্ট) রিশা মারা যায়।

আজ ৩০ আগস্ট পুরান ঢাকায় অবস্থিত রিশার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোরআন খতম চলছে, রিশার আত্মার শান্তি কামনায়। ছয়তলা বাড়িটির চতুর্থতলায় রিশা থাকতো বাবা মা, এক ভাই আর এক বোনকে নিয়ে। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড়।

রিশার কক্ষে ঢুকে দেখা গেল, তার পড়ার টেবিলের ওপরে গোছানো রয়েছে বই-খাতা, নোটবুকসহ যাবতীয় কিছু। টেবিলের সামনের দেওয়ালে লাগানো রয়েছে প্লাস্টিকের প্রজাপতি। ওয়ারড্রবের ওপরে সাউন্ড সিস্টেম,পাশেই টিভি। ‘আপুর খুব প্রিয় জিনিস এগুলো’ জানায় তিশার ছোটবোন রোদেলা আক্তার তিশা। এগুলো ধরলেই আপু বকা দিতো। আর কিছুর জন্য বকা খাইনি ওর কাছে, বলেই কাঁদতে শুরু করে ছোট্ট তিশা। আপুরে, তুই ফিরে আয় বলেই আর্তনাদ করতে থাকে সে। তার চিৎকারে কক্ষে ছুটে আসেন অন্যান্য আত্মীয়রা।

রিশার মেজ মামি রিতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের পুরো পরিবারের বড় মেয়ে রিশা। ও ছিল সবার অনেক আদরের। এতো হাসিখুশী মেয়েটা কোথায় চলে গেল, কোথায় রেখে এলাম আমরা ওকে। কান্না সামলে তিনি বলেন, ওর ওই হাসিটাই বোধহয় কাল হয়েছিল। বকা দিলেও হাসতো। কখনও মুখ কালো করতে দেখিনি। ও কখনও একা থাকতে পারতো না। অন্ধকার সহ্য করতে পারতো না বলে ওর বাবা আইপিএস কেনে। সেই মেয়েটা এখন অন্ধকার ঘরে একা একা থাকছে, খোদার এ কেমন বিচার বুঝি না।

রিশার বড় মামা মুন্না বলেন, পুরো এলাকা রিশার জন্য শোকে কাতর। এই এলাকাতেই ওরা ১১ বছর ধরে আছে। ছোট থেকে বড় হয়েছে এখানে। এলাকাতে এখন আমাদের পরিচয় রিশার মামা, রিশার চাচা হিসেবে। কিন্তু এই পরিচয়তো আমরা চাইনি। মেয়েটা মরে গিয়ে আমাদের পরিচিত করে গেল।

এ প্রতিবেদক উপস্থিত থাকতেই বাসায় এসে হাজির হন রিশার স্কুলের পাঁচজন শিক্ষক। সেখানে তারা রিশাকে স্মরণ করে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন।

রিশার শিক্ষক মাখন লাল দাস বলেন, ‘আমার বাড়ি গাজীপুরে, রিশার গ্রামের বাড়িও সেখানে। কোনোদিন পড়া না পারলে মুখে হাসি নিয়ে বলতো, স্যার আপনার বাড়ি আর আমার বাড়ি একই জায়গায়, এবারের মতো মাফ করে দেন। সেই মেয়েটা এভাবে চলে গেল, এটা ভাবতেই পারি না।’

 আরেক শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘একবার আমিসহ কয়েকজনকে ওর বাসায় আসতে বলেছিল। ‍কিন্তু বৃষ্টি থাকার কারণে আসা হয়নি। সেই বাসায় এলাম যখন রিশা নেই। রিশা দেখলো না, জানলো না, ওর বাসায় আমরা এসেছি।’

শিক্ষকরা যখন এসব বলছেন এরমধ্যেই খবর আসে রিশার ঘাতক ওবায়দুলের বোন আর ভগ্নিপতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু ওবায়দুলকে এখনও গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাসায় উপস্থিত সবাই।

বাসা থেকে বেরুবার সময় বাংলার শিক্ষক ফৌজিয়া আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রিশাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমরা সেখানে উপস্থিত হই। ওর পোশাক কেটে দেই ব্লেড দিয়ে, অপারেশনের পোশাক পরানোর জন্য। ও তখনও জ্ঞান হারায়নি, পুরো জ্ঞান তার ছিল। ড্রেস যখন কাটছিলাম তখনও তার লজ্জাবোধ প্রবল ছিল, আমাকে ড্রেস কাটতে বাধা দেয়। হাত ধরে ম্যাডাম বলে ডাক দেয়। ওর সেই ডাক, সেই স্পর্শ আমি ভুলতে পারছি না।’

আমার এই হাতে ওর স্পর্শ লেগে আছে বলেই আঁচলে মুখ ঢাকেন ফৌজিয়া আক্তার। 

/এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

হোটেলে নাস্তা করতে গিয়েই ধরা খেলো ওবায়দুল

 

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে