X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান: ঝুঁকির মুখে বিনিয়োগ

ওমর ফারুক
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৭:৪৪আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৭:১৪

এক মাস অভিযান চালিয়ে রাজধানীর আবাসিক এলাকার শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পাশাপাশি ১০টির বেশি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল দ্রুততম সময়ে অন্যখানে সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কর্মজীবী মানুষের বেকার হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে মোটা অংকের বিনিয়োগ।

গুলশানে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান বছরের পর বছর এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় ব্যবসা চালিয়ে আসছে। কিন্তু জুলাই মাসের প্রথম দিন গুলশান হামলার পর আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ১৭ জুলাই মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রাজউক জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে আবাসিক এলাকায় থাকা ১ হাজার ৬২৫টি অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে রাজউক। এই তালিকা ধরে ২৫ জুলাই উত্তরার আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এরপর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত গুলশান, বারিধারা, ধানমণ্ডি ও বনশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালানো হয়। সবমিলিয়ে শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এ সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, অভিযান চালিয়ে ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়কে থাকা ৯টি রেস্টুরেন্ট ও ২১টি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ২২ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৬টি স্কুল, ২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের স্থাপনা অন্যখানে সরিয়ে নেওয়ার মুচলেকা নেওয়া হয়।

অথরাইজড অফিসার শফিউল হান্নান রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে মুচলেকা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলির মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ঈদের পর আবারও অভিযান শুরু হবে।’

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর মালিক কিংবা কর্মচারীরা ভালো নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে রেস্টুরেন্ট-দোকান আবার চালু করেছেন।

রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান রবিবার যোগাযোগ করা হলে ধানমণ্ডি ৬ নম্বর সড়কের ৩০ নম্বর বাড়ির ‘রেস্টুরেন্ট কাবাব ভিলেজ’-এর মালিক মহিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বাড়িতে আমারটাসহ চারটি দোকান রয়েছে। সবাই মিলে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) আবারও দোকান চালু করেছি। তবে কাস্টমার পাচ্ছি না। এতদিন কাজ না থাকায় অনেক স্টাফ চলে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজউকের এই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে আমার আট/নয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করি। এভাবে ভেঙে দিলে করবো কী!’

২৬ জুলাই গুলশান আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সড়কের ১/বি প্লটের দোতলা ভবনে ‘জাফরান লিমিটেড’ নামের রেস্টুরেন্টটি রাজউক বন্ধ করে দেয় । এর ফলে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে দাবি করেন রেস্টুরেন্টের মালিক রাইয়ান ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘রেস্টুরেন্ট বন্ধের কারণে ৩০ জন স্টাফ বেকার হয়ে পড়েছে।’
অন্যদিকে, উত্তরার এক গেস্ট হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখন আবাসিক ভবনে গেস্ট হাউজ করলাম, তখন তো রাজউকের কেউ কিছু বললো না। সব কিছু তো তাদের সামনেই হয়েছে। গুলশান হামলার পর সব ক্ষোভ এসে পড়লো আমাদের ওপর!’

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক স্থাপনায় অননুমোদিতভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে রাজউক। গণপূর্তমন্ত্রীর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, রাজউকের পাঁচটি জোনে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৬২৫টি। এগুলোর মধ্যে ৪ নম্বর জোনে (গুলশান-বনানী-বারিধারা) অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা হয়েছে ৫৫২টি, ২ নম্বর জোনে (উত্তরা) ২১৫টি, ৩ নম্বর জোনে (মিরপুর) ৫৮০টি, ৫ নম্বর জোনে (ধানমণ্ডি-লালবাগ) ১৭৩টি এবং ৬ নম্বর জোনে (মতিঝিল-খিলগাঁও) ১০৫টি। কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড, বেকারি, ফার্মেসি, সেলুন, ক্লিনিক, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।

রাজউক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. আসমাউল হোসেন সম্প্রতি বলেন, রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান সারাবছরই চলে। তবে গুলশান হামলার পর অভিযানটা জোরালো হয়েছে। এ সময়ে হোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট, বার ইত্যাদির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকাসহ দেশের অপর নগরীগুলিতে আবাসিক প্লট থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাতে ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা। এরপর ১০ জুলাই সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকেও গুলশান-বারিধারাসহ আবাসিক এলাকায় অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

/ওএফ/এবি/এমএসএম/আপ-এমও/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কোরবানির পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
কোরবানির পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
এসি বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ, অনেক ব্রাঞ্চে ‘স্টক আউট’
এসি বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ, অনেক ব্রাঞ্চে ‘স্টক আউট’
কুমিল্লার স্কুলে স্কুলে ‘পানির ঘণ্টা’ চালুর নির্দেশ
কুমিল্লার স্কুলে স্কুলে ‘পানির ঘণ্টা’ চালুর নির্দেশ
এপি'র সাংবাদিককে গ্রেফতার করলো রাশিয়া
এপি'র সাংবাদিককে গ্রেফতার করলো রাশিয়া
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে