X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাজাপ্রাপ্ত তিন মানবতাবিরোধী অপরাধীর পরিবার সরকারের নজরদারিতে

পাভেল হায়দার চৌধুরী
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:৫৫আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:৩১

গোলম আজম, মীর কাসেম আলী ও সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী সরকারের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা। কড়া নজরদারিও রয়েছে তাদের ওপর। যেকোনও সময়ে যেকোনও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন এসব পরিবারের সদস্যরা বলে মনে করছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা এমন আভাস দিয়েছেন।
জানা গেছে, পরিবারগুলোর সদস্যদের অতীত ও বর্তমান সব তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এদের কে কোথায় লেখাপড়া করেছেন। কোথায় ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আত্মীয়-স্বজনদের কার কোথায় অবস্থান। তাদের যোগাযোগ কার সঙ্গে এবং বিদেশি কোন কোন দেশে যাতায়াত বেশী ও কী কাজে বিদেশ যাতায়াত করেন। এসব খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এসব পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু কারা এসবেরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
জানাগেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের ওপর নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।
কয়েকটি সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত এমন তিনটি পরিবারের সদস্যরা সরকারের কড়া নজরদারিতে রয়েছেন। এরমধ্যে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর কাসেম আলী এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আজমের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জনের ফাঁসি হলেও গোলাম আযম সাজা খাটা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। বাকি পরিবারগুলোকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে না।

সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, মীর কাসেম আলীর পরিবার যথেষ্ট সম্পদশালী। অর্থ-বিত্ত দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে যেকোনও ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে পারে এ পরিবারটি। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যেহেতু রাজনৈতিক পরিবারের ও পাকিস্তানপন্থী, ফলে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করতে পারে এই পরিবার, এমন আশঙ্কা রয়েছে সরকারের ভেতরে। আর গোলাম আযমের সন্তান একটি বিশেষ বাহিনীতে বড় কর্মকর্তা ছিলেন। তাই তার ‘নেটওয়ার্ক’ রয়েছে মনে করে এ পরিবারটিও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে সরকারে। ইতোমধ্যে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এ পরিবারগুলোর কিছু প্রাথমিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলেও জানান সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। তবে এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। অন্য পরিবারগুলোকে তেমন আমলে না নিলেও নজরদারিতে রয়েছেন তারাও।

সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, এসব পরিবারের সদস্যরা বসে থাকবেন না। সময় সুযোগ পেলেই তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের যেকোনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারেন। তাই তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্যও সরকারের হাতে রয়েছে জানান নীতি-নির্ধারকরা।

তারা বলেন, সালাহউদ্দিন কাদেরের পরিবার তার রায়ের আগে একটি ষড়যন্ত্র সংগঠিত করতে চেয়েছে। সরকার সতর্ক থাকায় সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতেপারেনি। তেমনি মীর কাসেম আলীও প্রচুর অর্থের বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগ করে ষড়যন্ত্রের পথে পা বাড়ান, কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তা সফল হতে দেয়নি। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যরা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, এমন কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এগুলো খতিয়ে দেখছি।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলোর সদস্যদের ওপর সরকারের নজরদারি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, তারা সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে এবং কিছু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য ইতোমধ্যে সরকারের নজরে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘শত্রু সবসময় শত্রু।’    

সভাপতিমন্ডলীর অপর  সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি নজরদারি রাখাটাই স্বাভাবিক। তারা তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এখনও পাচ্ছেন,এটা তো মিথ্যা নয়।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সন্তানদের দলের নেতা বানিয়েছে। এতে তো সব পরিষ্কার হয়ে যায়। ’

এছাড়া রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই স্বীকার করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলোর সদস্যরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরাও জানান,বিশেষ তিনটি পরিবার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও গোলাম আযমের পরিবার বিশেষ সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। এসব পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু ষড়যন্ত্রের তথ্য প্রমাণ সরকারের গোচরেও এসেছে। ’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কিছু অভিযোগ সরকারের কাছে এসেছে। এগুলোর ওপর যাচাই-বাছাই চলছে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের নজরদারিতে রাখাটাই স্বাভাবিক। ’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও গোলাম আযমের পরিবারকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী সাজাপ্রাপ্ত অন্য পরিবারগুলোর ওপরেও রয়েছে নজরদারি। তবে তিন পরিবারকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’ এর সঙ্গত কিছু কারণও রয়েছে বলে জানান তিনি।     

তিন পরিবারের নজরদারিতে  যারা

গোলাম আযম:সদ্যপ্রয়াত শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত গোলাম আযমের ছয় ছেলে। বড় সন্তান আব্দুল্লাহ হিল মামুন আল আযমী, দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমিন আল আযমী তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন, তৃতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল মোমেন আল আযমী, চতুর্থ ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় অবসরে যান। পঞ্চম ছেলে আব্দুল্লাহ হিল নোমান আল আযমী, ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ হিল সালমান আল আযমী।

মীর কাসেম আলী:সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের অর্থ যোগানদাতাদের শীর্ষনেতা ছিলেন মীর কাসেম আলী। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে মোহাম্মদ বিন কাসেম (সালমান), তিনি পাকিস্তান ডেন্টাল কলেজে পড়েছেন। আরেক ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান), তিনি লন্ডনে বার এট ল’ সম্পন্ন করেছেন। মেয়ে হাসিনা তাইয়্যেবা মাস্টার্স করেছেন হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে। অপর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া, আরেক মেয়ে তাহেরা হাসনিন।

সালাহ উদ্দীন কদের চৌধুরীর পরিবার: সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী। ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফাইয়াজ ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী। মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী। দুই বোন জোবায়দা কাদের চৌধুরী ও হাসিনা কাদের চৌধুরী। ফাইয়াজের স্ত্রী দানিয়া খন্দকার, মেয়ের জামাই জাফর খান এবং সাকার ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও  গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।

এপিএইচ/আপ-এইচকে

পড়ুন: রায় ফাঁস মামলায় সাকার স্ত্রী ও ছেলে খালাস

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
ভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
ভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
দুই মাস পর ইলিশ ধরা শুরু
দুই মাস পর ইলিশ ধরা শুরু
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি অনিক, সম্পাদক জাওহার
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি অনিক, সম্পাদক জাওহার
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস