X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
নার্গিসকে হাসপাতালে নেওয়া তরুণের কথা

মানুষ তো মানুষেরই জন্য

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ অক্টোবর ২০১৬, ২০:১৪আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৬, ২০:২৪

ইমরান কবির

সিলেট এমসি কলেজ প্রাঙ্গনে বেড়াতে এসে এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হবে, ভাবতেও পারেননি তরুণ ইমরান কবির। তখন বিকাল ৫টা প্রায়। কিছুক্ষণ আগে অনার্স পর্যায়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কলেজ প্রাঙ্গণজুড়ে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। হঠাৎ প্রচণ্ড চিৎকার শুনতে পান ইমরান। দেখতে পান, অদূরে এক নারী মাটিতে পড়ে আছে আর অমানুষিক নৃশংসতায় তাকে কুপিয়ে চলেছে এক যুবক।

পড়ে থাকা ওই তরুণী সিলেট মহিলা কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিস। চাপাতি ধরা ওই হামলাকারী বদরুল আলম। দুজনের কাউকেই চিনতেন না ইমরান। ঘটনার আকস্মিকতায় মুহূর্তের জন্যে থমকে গিয়েছিলেন। সবাই যার যার মতো দৌড়ে পালাচ্ছে, চিৎকার করছে। কী করবেন তিনি? দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে অনেকে। তাদের মতো দূর থেকেই দেখে যাবেন? হাতে ধারালো অস্ত্র ধরা বদরুলকে দেখে এগোতে কেউ সাহস করছিল না। তখন বুকে অসম সাহস নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ুতে শুরু করলেন ইমরান। প্রমাণ করলেন, শেষ পর্যন্ত মানুষ তো মানুষেরই জন্য।      

ইমরান যতক্ষণে নার্গিসের কাছে পৌঁছুলেন, ততেক্ষণে বদরুল পালাতে শুরু করেছে। ইমরান নার্গিসের মাথাটা কোলে তুলে চারপাশে তাকিয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘আসুনআপানারা! মেয়েটা মারা যাচ্ছে, হাসপাতালে নিতে হবে!’

ইমরানের ডাকে প্রথম প্রথম কেউ সাড়া দেয়নি। পালাতে থাকা বদরুলকে যখন আটকে ফেলা হয়, তখন কিছুটা ভীতিমুক্ত হয়ে এগিয়ে আসেন এমসি কলেজের ছাত্র মাহফুজসহ আরও একজন। তিনজন মিলে নার্গিসের রক্তমাখা দেহটা একটা সিএনজি অটোরিকশায় তুললেন। সারাপথ ভয়ানক যন্ত্রণায় কুঁকড়ে থাকা নার্গিস অবশেষে পৌঁছাল হাসপাতালে।

ইমরান জানান, নার্গিসের দিকে তাকানোর সাহস তার ছিল না।  ‘মাথাটা ছিল ক্ষতবিক্ষত। ওদিকে তাকানোর মতো অবস্থা আমার ছিল না। অঝোরে রক্ত ঝরছিল। জামাকাপড় ভিজে একাকার। কোনওভাবেই রক্তপড়া বন্ধ হচ্ছিল না। সিএনজিতে ওঠানোর পরই তার চোখ দুটো উল্টে গেল। আমরা আল্লাহর কাছে আপুর প্রাণ রক্ষার জন্যে প্রার্থনা করছিলাম। উনি হাত মোচড়াচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল সব রগ বুঝি এক হয়ে যাচ্ছে। হাত পা শক্ত করে ধরে রাখছিলাম। মনে হচ্ছিল তিনি মারা যাচ্ছেন।’

হাসপাতালে পৌঁছেই চিৎকার করে বলতে শুরু করেন ইমরান, ‘আপুকে বাঁচান, আপুকে বাঁচান, তিনি মারা যাচ্ছেন!’ প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। দরকার ছিল অনেক রক্তের। নার্গিসের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। কাকতালীয়ভাবে ইমরানেরও তাই। ক্লান্ত ইমরান হাসপাতালেই নার্গিসকে ভর্তি করিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে পড়লেন রক্ত দেওয়ার জন্য। এসময় অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন তিনি নিজেও।

সেদিন রাত ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলেন ইমরান। এরপর নার্গিসকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নার্গিসকে ঢাকার পথে বিদায় দিয়ে বাসায় ফেরেন ইমরান। রাতে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বক্তব্য দেন তিনি। জানান, মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। নার্গিসের রক্তমাখা মাথার ছবিটা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।  এটুকু শুধু বলেন, ‘আপু জীবন ফিরে পেলে খুশি হবো। এ প্রার্থনার অনুরোধ গোটা দেশবাসীর কাছে রাখছি।’

২০১৫ সালে এইএসসি পাশ করার পর ভালো সাবজেক্ট না পাওয়া কোথাও ভর্তি হননি ইমরান কবির। এ বছর অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে ভালো কিছু পাওয়ার আশায় আবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ঢালারপাড় গ্রামের এই তরুণ।

দুই ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ইমরান। বড় ভাই ব্যবসা করছেন। আর বোনটিও ভর্তি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোম্পানীগঞ্জের ঢালারপাড় গ্রামের ঢালারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তারের ছোট ছেলে ইমরান কবির। দেশের রাজনীতির প্রতি তিনি সন্তুষ্ট নন বলে জানান। 

সোমবার (৩ অক্টোবর) শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সিলেট এমসি  কলেজের পুকুর পাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। প্রথমে তাকে সিলেটে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) ভোরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। এদিন দুপুরে স্কয়ার হাসপাতালে  অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার ৭২ ঘণ্টা শেষ হবে।

হাসলাকারী বদরুলের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরিমা ইউনিয়নের মনিরগাতি গ্রামে। ইউপি সদস্য সুহেল আহমদসহ স্থানীয় লোকজন জানান, হাউশা গ্রামে নার্গিসদের বাড়িতে লজিং থেকে বদরুল শাবিতে লেখাপড়া করতো। তখন থেকেই সে নার্গিসকে উত্ত্যক্ত করতো। তার কুপ্রস্তাব নার্গিস প্রত্যাখ্যান করে এবং বাড়িতে জানিয়ে দেয়। তখন ওই বাড়ি থেকে বদরুলকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে গত সাত বছর ধরে সে নার্গিসের পেছনে লেগে ছিলো। এর মধ্যে কয়েকবার সে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে। কিন্তু গায়ে ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে সে। 

/এইচকে/

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
সাত দিনে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদফতর
সাত দিনে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদফতর
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার