X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক সম্পর্কও চায় চীন

শেখ শাহরিয়ার জামান
১৬ অক্টোবর ২০১৬, ০৪:১৫আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৬, ০৪:১৮

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি গভীর রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী বেইজিং। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দু’দিনের সফরের সময়ে সেই বার্তাই দিয়েছে চীন।

সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চীন বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করার বিষয়ে জোর দিয়েছে। এ সফর উপলক্ষে যৌথ বিবৃতির প্রথম তিনটি প্যারায় কেবল রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরির ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ১৯৩টি দেশের প্রায় সবার সঙ্গেই চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। কিন্তু  প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফর ইঙ্গিত দেয়, তারা বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি চায়।যৌথ বিবৃতির তৃতীয় প্যারায় বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একমাত্র চীনের সঙ্গেই বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপিত হলো এবং এটি একটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’

বিবৃতির চতুর্থ প্যারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ওয়ান চায়না নীতি অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং চীন এজন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সাবভৌমত্ব রক্ষা এবং এর জাতীয় স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে অবদানের জন্য ঢাকা বেইজিংকে প্রশংসা করে।

পঞ্চম প্যারায় দুদেশের মধ্যে আরও উচ্চ পর্যায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের সফর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এছাড়া, দুদেশের জনগণের মধ্যেও যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা

সরকারের  উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তা  বলেন, দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশের ‘সোনার বাংলা’ ও চীনের ‘চাইনিজ ড্রিম’ সমার্থক। বঙ্গবন্ধুর নাম একাধিকবার স্মরণ করে শি জিনপিং তার চীন সফরের কথাও উল্লেখ করেন।

১৯৫৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই-এর পাকিস্তান সফরের সময়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়টিও শি জিনপিং বৈঠকে উল্লেখ করেন।

প্রকল্প সহায়তা

বাংলাদেশের ২৭টি প্রকল্পে চীন ১৯.৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দেবে।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে স্ট্রেন্দেনিং প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি বিষয়ক এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এছাড়া, আরও নতুন ২২টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলো ভবিষ্যতে চীনের সহযোগিতার জন্য আলোচনা করা হবে।

এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় ‘বিদ্যুত, তথ্য প্রযুক্তি, নদী ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২২টি প্রকল্পে চীনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ এবং বেইজিং তাদের এন্টারপ্রাইজদের এ প্রকল্পগুলোতে সহযোগিতার জন্য উৎসাহিত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ২২টি প্রকল্পের বেশিরভাগই বেসরকারি খাতের এবং আমরা আলোচনার জন্য পর্যায়ক্রমে চীনের দূতাবাসের কাছে প্রকল্প প্রস্তাবগুলো দেবো।’

আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা এবং এটি  বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও।’

চুক্তি স্বাক্ষর

চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ে মোট ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুত ও জ্বালানি, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামো, সড়ক-সেতু, রেল যোগাযোগ ও জলপথ যোগাযোগ, সুমদ্র সম্পদ, দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এরমধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। এগুলো হচ্ছে- বেল্ট ও রোড উদ্যোগ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক বিষয়ক সমঝোতা স্মারক ও মেরিটাইম সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।

এছাড়া, রোড ও টানেল কাঠামো চুক্তি, ইকোনমিক ও টেকনিক্যাল সহযোগিতা চুক্তি, দাসেরকান্দি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ কাঠামো চুক্তি, সিল্ক রুট ইনফরমেশন কানেক্টিভিটি সমঝোতা স্মারক, বিদ্যুত ও জ্বালানি বিষয়ক চুক্তি, ২০১৭ সালের জন্য ৮০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান চুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমঝোতা স্মারক, ব্রিজ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, তথ্য প্রযুক্তি সমঝোতা স্মারক, সন্ত্রাববাদ দমন বিষয়ক সমঝোতা স্মারক ও প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি সংক্রান্ত কাঠামো চুক্তি উল্লেখযোগ্য।

তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়ন

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ঢাকা বেইজিং এর কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল চেয়েছে এবং এ বিষয়ে তারা ঢাকাকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।

শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড় একটি ব্রেকথ্রু হয়েছে এবং বড় আকারের একটি কাঠামো চুক্তি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে এ খাতে বড় ধরনের ও বড় অংকের বিনিয়োগ হবে।’

যৌথ বিবৃতি

যৌথ বিবৃতিতে দুদেশের সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যত রূপরেখা দেওয়া হয়।

বেল্ট ও রোড উদ্যোগ, দ্বিপক্ষীয় সফর, ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাস, বাস্তব সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রকল্প অর্থায়ন, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন, সুমদ্র সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা কাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা সহযোগিতা ও স্কলারশিপ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, সংস্কৃতি, উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ দ্বিপক্ষীয় সকল বিষয়ে ভবিষ্যত সম্পর্কের রূপরেখা বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়।

প্রসঙ্গত, শি জিনপিং দু’দিনের (১৪ ও ১৫ অক্টোবর) সফরে শুক্রবার ঢাকা আসেন এবং একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন।

এসএসজেড/এপিএইচ/

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ