X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

সহকর্মীদের রোষানলের শিকার হয়ে ‘সাময়িক বহিষ্কার’ ঢাবি শিক্ষক রিয়াজ!

উদিসা ইসলাম
০৭ মার্চ ২০১৭, ১৯:২১আপডেট : ০৭ মার্চ ২০১৭, ২৩:৫৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেণিকক্ষে ‘আপত্তিকর’ বিষয় পড়ানো নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ রিয়াজুল হককে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সেটি নিয়ম মেনে হয়নি বলে মনে করছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এমনকি বিভাগ থেকে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে যে সব পদ্ধতি অবলম্বন করার কথা, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ সেটাও ভেঙেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিভাগীয় সূত্র মতে, শিক্ষকদের রেষারেষির ‘শিকার’ হয়েছেন রিয়াজুল হক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে কোনও রকম সতর্কবার্তা এবং অবহিতকরণ চিঠি না দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কাছে সব তথ্য পাঠানো হয়। ড. রিয়াজের বিরুদ্ধে ‘প্রায় পর্নোগ্রাফি’ দেখানোর অভিযোগ উত্থাপনের ক্ষেত্রে বিভাগের সহকর্মীদের মধ্যকার টানাপোড়েনকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। যদিও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আবু ইউসুফ দাবি করছেন, সব পদ্ধতি মানা হয়েছে। তবে লিখিত কোনও সতর্কবার্তা তাকে দেওয়া হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।  

ড. রিয়াজের বিরুদ্ধে ক্লাস রুমে ‘অশ্লীল চিত্র’ দেখানোর অভিযোগ আনা হলেও শিক্ষার্থীরা কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। ক্লাস রুমে দেখানো যে স্লাইডগুলো নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে, সেই কোর্স গত ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে গেছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ‘আপত্তিকর’ কিছু দেখানো হলে সেটি কোর্স-পরীক্ষা-ফল সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কেন উত্থাপিত হলো?

এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউসুফ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের কোর্স মূল্যায়নপত্রে আপত্তি তোলায় আমরা তাকে বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে দিতে বলি।’ ড. রিয়াজকে সেটি  লিখিত ও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একাডেমিক সভা থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করে কনটেন্ট বদলে দিতে বলা হয়েছে। তিনি কোর্সটি তখন ছেড়ে দিয়েছেন।’ এটাই সতর্ক করা নাকি লিখিত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশ্নে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘না, একাডেমিক কমিটির সভা থেকে ফোনে কথা হয়েছে।’

যে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আপত্তিকর বিষয় উপস্থাপন নিয়ে অভিযোগ করেছেন বলে বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, তাদের কোর্স গত ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ড. রিয়াজকে কেন সাময়িক বহিষ্কার করার প্রয়োজন হলো তার সদুত্তর দিতে পারেননি ড. ইউসুফ। তিনি শুধু বলেন, ‘এর আগেও নম্বর কম-বেশি দেওয়া নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। সেটাও আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

উল্লেখ্য, শ্রেণিকক্ষে ‘অশ্লীল চিত্রের’ মাধ্যমে পাঠদানের অভিযোগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মো. রিয়াজুল হককে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠার কথা বলা হলেও আসলে সেটা ছিল সান্ধ্যকালীন কোর্সের কিছু শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত মূল্যায়ন। অভিযুক্ত ড. রিয়াজ জানান, তিনি এই কোর্সটি একাধিক ব্যাচে পড়িয়েছেন এবং প্রত্যেকের পরীক্ষার খাতা দেখাও শেষ করেছেন। তার দাবি, বিভাগের দ্বন্দ্বের বিষয়ে উপাচার্যকে আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। তারপরও শাস্তি পেয়ে তিনি বিস্মিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রক্টর এম আমজাদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও অভিযোগের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট চাইলে যে কোনও শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করতে পারে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে অভিযুক্ত শিক্ষককে দায়িত্বে রেখেই তদন্ত শুরু হতে পারে। এতে কোনও সমস্যা নেই।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযোগটা এসেছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সেটা জানানো হলে সিন্ডিকেট অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে।’ 

এদিকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকরা পাশে থাকলে কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা এত সহজ না।’ ড. রিয়াজের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে তার নানা জটিলতার কথা সকলেরই জানা, কিন্তু কেউ তা আপনাকে জানাবে না।’

বিভাগের একাডেমিক কমিটি থেকে সতর্ক করা হয়েছে বলে তার সহকর্মীরা দাবি করলেও ড. রিয়াজ বলেন, ‘বিভাগীয় কমিটির সভা থেকে একবার কল করে আগামীতে কোর্স পড়ানোর জন্য স্লাইডে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার বলে জানালে আমি জানিয়ে দেই, সেটা সম্ভব না। তখন তারা আমাকে জানান, পরবর্তীতে অন্য কাউকে দিয়ে এই কোর্স পড়ানো হবে। এর বাইরে আগে-পরে কোনও সতর্কীকরণের বিষয় ঘটেনি।’ তিনি আরও বলেন, “বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক চিঠিও আমাকে দেওয়া হয়নি। বিভাগে খোঁজ নিলে তারা ‘আসেনি’ বলে জানিয়েছে। আমার শঙ্কা, হয়তো এ চিঠিও আমার কাছে পৌঁছাবে না।”

/ইউআই/এএআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
বিমানযাত্রীর পকেট থেকে জ্যান্ত সাপ উদ্ধার
বিমানযাত্রীর পকেট থেকে জ্যান্ত সাপ উদ্ধার
ডু প্লেসি ঝড়ে গুজরাটকে পাত্তা দিলো না বেঙ্গালুরু
ডু প্লেসি ঝড়ে গুজরাটকে পাত্তা দিলো না বেঙ্গালুরু
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ