X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণ করা নারীদের গল্প

চৌধুরী আকবর হোসেন
০৮ মার্চ ২০১৭, ০৭:৫৯আপডেট : ০৮ মার্চ ২০১৭, ১৪:০৬

নারী পাইলটরা

নারী হলেও তাদের স্বপ্নটা ছিল আকাশ ছোঁয়ার। নীল আকাশের বুকে মেঘের ভেলার মতো উড়ে বেড়ানোর। শত প্রতিকূলতার পরও সেই স্বপ্নটা পূরণ করেছেন তারা। পাইলট হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছেন আকাশের বুকে। আর এর মাধ্যমে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা অন্য নারীদের স্বপ্ন পূরণেরও পথিকৃৎ হয়েছেন। তারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের নয় নারী পাইলট।
যেকোনও চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও এখন পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলেছেন আমাদের দেশের নারীরা। এয়ারলাইন্সের পাইলট পদেও তাই এখন পদচারণা বাড়ছে নারীদের। একটা সময় পর্যন্ত দেশে নারী পাইলটের দেখা না মিললেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৪০ জন পাইলটের মধ্যে এখন নারী পাইলটের সংখ্যা নয় জন। পুরুষদের মতোই তারাও সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন পেশাগত দায়িত্ব।
বাংলাদেশ বিমানের এই নয় জন নারী পাইলট হলেন— ক্যাপ্টেন তাসমিন, তানিয়া রেজা, আলিয়া, শাহানা, ফার্স্ট অফিসার আনিতা রহমান, মুনজারিন রাইয়ান, শুমায়লা সিদ্দিকা হোসেন, ফারিয়েল রহমান, ও অন্তরা। বাংলা ট্রিবিউনকে তারা জানিয়েছেন নিজেদের স্বপ্ন পূরণের গল্প।
বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, আজ ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজে এই ফ্লাইটের পাইলট থেকে কেবিন ক্রু— সব দায়িত্বে থাকবেন নারীরা। ফ্লাইটটি পরিচালনা করবেন ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা এবং ফার্স্ট অফিসার অন্তরা। এছাড়াও, এই ফ্লাইটের দুই জন ককপিট ক্রু ও ছয় জন কেবিন ক্রু’র দায়িত্বেও থাকছেন নারীরা।

ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা বিমানের নয় নারী পাইলটের মধ্যে ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা বিমানে যোগ দিয়েছেন ২০০০ সালে। এফ ২৮, ডিসি-১০, এয়ারবাস ৩১০, বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ চালিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করছেন।
পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরুটা কিভাবে— জানতে চাইলে তানিয়া বলেন, ‘মামাদের অনেকেই বিমান বাহিনীতে কাজ করতেন। ছোটবেলায় তাদের দেখে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। ১৯৯৩ সালে ফ্লাই একাডেমিতে ভর্তি হই। এরপর আমেরিকায় গিয়ে কোর্স সম্পন্ন করি। এরপর ২০০০ সালে দেশে এসে বিমানে যোগ দিয়েছি। যে মামাদের দেখে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, তাদের অনেকের সঙ্গেই ফ্লাই করার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার বড় একটি সৌভাগ্য।’
পাইলট হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে তানিয়া বলেন, ‘প্রথম ফ্লাইটের অনুভূতিটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। এখনও বিমান চালাতে রোমাঞ্চ বোধ করি। বিমানের দীর্ঘ সময়ের যাত্রায় নারী বলে কখনও প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। পরিবারের সবার সমর্থন পেয়েছি বলেই ফ্লাইটে উঠে ১১ বছর ও ৬ বছরের দুই মেয়ে রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি।’
দেশের অনেক নারীই পাইলট হতে চাইলেও তাদের এই লক্ষ্য পূরণের উপায় জানা নেই বলে মনে করেন তানিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেকে পাইলট হতে চাইলেও জানেন না কিভাবে এই পেশায় আসতে হয়। তাদের সামনে সেই পথের কথা তুলে ধরতে হবে। আর সবার আগে প্রয়োজন নিজের দৃঢ় ইচ্ছা। এর সঙ্গে পরিবারের সমর্থন পেলেই এই পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়বে।’
ফার্স্ট অফিসার মুনজারিন রাইয়ান একজন পাইলট হওয়ার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি ১৫০ ঘণ্টা ফ্লাইংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। কমার্শিয়াল ফ্লাইটে উঠতে গেলে এরপর বসতে হয় লাইন্সেস পাওয়ার পরীক্ষায়। এসব ধাপ পার হতে গিয়ে অনেকেই ছিটকে পড়েন। তবে স্বপ্ন পূরণের সবগুলো ধাপ পার করেছেন মুনজারিন রাইয়ান। ১৫শ ঘণ্টা আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা মুনজারিন রাইয়ানের। কাজ করছেন বিমানের বোংয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে। মুনজারিন বলেন, ‘বাবা পাইলট ছিলেন বলে তার কাছ থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছি। আমি বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার সময় বাবা সেখানে প্রশিক্ষক ছিলেন। প্রশিক্ষণ বিমানেও তার সঙ্গেই প্রথম ফ্লাই করেছি।’

২০১১ সালে বিমানে যোগ দেওয়া মুনজারিন বলেন, ‘এ পেশায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ। একটি ফ্লাইটের নিরাপত্তাসহ সবকিছু দেখভাল করতে হয়। তবে এই পেশায় প্রতিদিনই নতুন কিছু শেখার থাকে। এজন্য বেশি ভালো লাগে। আর যখন আমরা ইউনিফর্ম পড়ি, তখন আমরা নারী বা পুরুষ নই, তখন আমরা ক্রু। ফলে নারী বলে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। দক্ষতা দেখাতে পারলে কোনও এগিয়ে যেতে কোনও বাধা নেই।’
ফার্স্ট অফিসার আনিতা রহমান দেশের পতাকাবাহী উড়োজাহাজ চালানোর স্বপ্ন ছিল আনিতা রহমানের। নিজের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি। ২০১১ সালে বিমানে যোগ দিয়ে ফ্লাইং শুরু করেন ২০১৫ সালে। নিজের স্বপ্নে কথা তুলে ধরে আনিতা বলেন, ‘বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে পড়ার পর আমেরিকায় ফ্লাইং কোর্স সম্পন্ন করি। আমি চাইলে আমেরিকার কোনও এয়ারলাইন্সে কাজ করতে পারতাম। কিন্তু তাদের ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে কাজ করতে পারতাম না। বাবা বিমানের ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল দেশের পতাকাবাহী উড়োজাহাজের পাইলট হওয়ার। সেই স্বপ্নটা পূরণ করেছি বিমানে যোগ দিয়ে।’
আনিতা রহমানও বললেন, নারী পাইলট হিসেবে কোনও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় না তার। আর পরিবারের সমর্থন পাচ্ছেন বলে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। বর্তমানে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কাজ করা আনিতা এর আগে জিএমজি এয়ালাইন্সেও এক বছর কাজ করেছেন।
শুমায়লা সিদ্দিকা হোসেন ভিন্ন মডেলের উড়োজাহাজ পরিচালনার আগ্রহী শুমায়লা সিদ্দিকা হোসেনের। ২০১০ সালে বিমানে যোগ দেন তিনি। এফ ২৮ উড়োজাহাজে পরিচালনার মধ্য দিয়ে শুরু করেন ক্যারিয়ার। বর্তমানে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত। নিজের কথা বলতে গিয়ে শুমায়লা বলেন, ‘২০০৪ সালে ভর্তি হই ফ্লাইং একাডেমিতে। বিমানে চড়ার সময়ই ইচ্ছা হতো পাইলট হওয়ার। আম্মু বিমানে চাকরি করতেন। তার কাছেও উৎসাহ পেয়েছি।’
শুমায়লা সিদ্দিকা বলেন, ‘বাংলাদেশে এভিয়েশন খাতে নারীদের অনেক সুযোগ আছে। তবে পরিবারের সহায়তা প্রয়োজন। পরিবারের সর্মথন থাকলে পথ চলা সহজ হয়। পাইলট হওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অদ্যম ইচ্ছা থাকাটা জরুরি।’

আরও পড়ুন-

নারী দিবসে বাংলা ট্রিবিউনের নেতৃত্বে আবারও নারীরা

পলিসি বাস্তবায়ন: নারীর অবস্থান হতাশাজনক

আজ নারী দিবস: নারীর চোখে বিশ্ব ভাবুন

ভালো নেই নারী কাউন্সিলররা

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট