X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যা দিবস: এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অপেক্ষা

উদিসা ইসলাম
১২ মার্চ ২০১৭, ২০:৩০আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৭, ২৩:১৪

একাত্তরের গণহত্যা (ছবি: সংগৃহীত) ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড স্মরণ করতে দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। তবে এটাকে কেবল একটা ‘অধ্যায়’ হিসেবে দেখছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, শহীদ পরিবার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এটি অর্জন হয়েছে। এখন পরের অধ্যায়ের কাজ, দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা চালায় পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী। ওই গণহত্যার খবর ও সচিত্র প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে বিশ্ববাসী জানতে পারে সেই রাতে কী ভয়াবহ, বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল।

২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল সংশ্লিষ্ট মহল। অবশেষে তাদের দাবি পূরণ হয়েছে গত শনিবার। প্রায় ৬ ঘণ্টা আলোচনার পর জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘ এ আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ সহ ৫৬ জন সাংসদ।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে মানব ইতিহাসের কলঙ্কতম এক অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিললো। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল, তা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ব্যাপী প্রলম্বিত হয় এবং ক্রমশই তা আরও তীব্রতর হয়। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশ নামের দেশ সৃষ্টির মূলে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, তা জাতীয়ভাবে পালন করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট দিবস ছিল না।

তিনি আরও বলেন, এই ঘোষণার ফলে তিরিশ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত একটি দেশের সব নাগরিক এই দিবস পালনের মাধ্যমে এদেশে সংঘটিত নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করবে ও বিশ্ববাসীর সামনে মানবতার বার্তা পৌঁছে দিতে পারবে। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য একজন শহীদ সন্তান হিসেবে আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের সকল সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন পরবর্তী কাজের শুরু হিসেবে সরকার যেন এই গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে, সেই প্রত্যাশা রইল। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা গণহত্যার তদন্ত সঠিকভাবে করার কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধে গণহত্যার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এই দিবসটি স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশ ইতিহাসের দায়মুক্তির পথে আরেক ধাপ এগোলো। তিনি আরও বলেন, যারা এই গণহত্যা ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তির আওতায় নেওয়ার প্রক্রিয়া গত বছর শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের আমরা বিচারের আওতায় আনার তদন্ত করছি। তবে এটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয় হওয়ায় অনেক ভেবেচিন্তে এগোতে হবে। আমরা এই দিবসটি পেয়েছি। এটি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত করে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের ব্যবস্থা করা জরুরি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করতে পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে তারা কোনও গণহত্যা ঘটায়নি। এখনও যে ষড়যন্ত্র চলছে, তার প্রতিরোধে এই দিবস ঘোষণা জরুরি ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা এবং গণহত্যাকে অস্বীকার করার যে নানা কৌশল এখনও খোঁজা হচ্ছে, সেটিকে রুখে দাঁড়াতে এখন আন্তর্জাতিকভাবে দিনটিকে দেখার সুযোগ করে দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের ঘোষণা আমাদের বহুদিনের দাবি। আমরা চেয়েছি আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটির স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক মহলে এটা নিয়ে তৎপর হতে পারিনি, কেননা দীর্ঘ দিন ধরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি দেশ পরিচালনা করেছে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আর্মেনিয়ানরা পেয়েছেন। আমরা বলতে পারি, জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে একধাপ অগ্রগামী হলাম। ১৯৭১ সালে বছর জুড়ে গণহত্যা ঘটেছে। তারপরও একটি দিবস স্মরণ জরুরি। কেননা গণহত্যা দিবস যখন পালন করছি, তখন এই প্রজন্মের মনে গণহত্যার যে স্মৃতি, তা জাগরুক রাখতে পারছি। 

/ইউআই/এএআর/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা