‘আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছে। কিছুদিন আমার সঙ্গে একটি মাদ্রাসায় গেস্ট টিচার হিসাবে শিক্ষকতা করেছে। এরপর সে চাকরি ছেড়ে বিসিএস দেওয়ার জন্য কনফিডেন্সে কোচিং করে। নরসিংদীতে থেকে সে টিউশনি করে। সে বলছিল ঢাকায় তার ভালো লাগে না। আমার ছেলে জঙ্গি না। শুক্রবারও সে বাড়িতে গেছে। আমি গতকাল (শনিবার) রাতে খবর পেয়ে এখানে এসেছি। ফোনে তার সঙ্গে কথা বলেছি। র্যাব আমাকে বলেছে তারা বিষয়টি দেখবে।’ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিনের বাবা। নরসিংদীর গাবতলীতে যে বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা হয়েছিল সেটি এই সালাউদ্দিনের (২৮) নামেই ভাড়া নেওয়া হয়। তাকেও রবিবার সকালে ওই বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে নরসিংদী শহরতলীর গাবতলী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নির্মাণাধীন একটি দুই তলা বাড়ি ঘিরে ফেলে র্যাব-১১ এর একটি দল। ভেতরে ৫/৬ জন জঙ্গি রয়েছে এই দাবি করে বাড়িটি ঘেরাও করেন তারা। রবিবার সকালে ওই বাড়ি থেকে পাঁচ জনকে বের করে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে নাশকতামূলক কিছু পাওয়া যায়নি জানিয়ে তালা দিয়ে চলে যান র্যাবের সদস্যরা।
উল্লেখ্য মাদ্রাসা শিক্ষক পরিচয়ে এ মাসেই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন। বাড়িটির মালিক লিবিয়া প্রবাসী মাঈনউদ্দিন। তবে তার পরিবারের কেউ সেখানে থাকেন না।
রবিবার এই বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনের আরেকজন বাসেকুল ইসলাম (২৩)। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার ভাই শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাফর, বাসেকুল ও সালাহউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার বিভিন্ন বাসায় থাকছেন। এদের মধ্যে জাফর এখানকার বিভিন্ন জায়গায় টিউশনি করায়। কিছুদিন আগে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে আরেকটি বাসায় ছিল। সেই বাসায় বাসেকুল ও সালাহউদ্দিনও থাকতো। দুই মাস আগে জাফর তার স্ত্রীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এমাসেই তারা এই নতুন বাসায় ওঠে।’ শনিবার বিকালে মশিউর নামের একজন প্রাণ আরএফএলে পরীক্ষা দিতে ওই বাসায় এসেছিল বলেও জানান তিনি। আজ রবিবার তার পরীক্ষা ছিল।
শফিকুল আরও বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) বিকালে এই বাসার বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাসেকুল রাতে সাড়ে ৭টায় ফোন করে এই খবর জানায়। তারা বাসা থেকে বের হতে পারছে না বলে জানায়। আমি রাত ১০টার দিকে পাইকার চর থেকে এখানে আসি। তবে র্যাবের লোকজন ধমক দিয়ে আমাকে সরিয়ে দেয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে আমরা দূরে চলে যাই। রাতে কয়েকবার বাসেকুলের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি জানান, ‘সকাল ৮টার দিকে শুনতে পাই ওদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেবে। তারপর এখানে আসি। ৯টার দিকে র্যাবের এক কর্মকর্তা আমাদের বাসাটির কাছে নিয়ে যায়। অপর একটি বাসায় আমাদের সবাইকে বসিয়ে রাখে। বলে ‘আমাদের স্যার পরে আপনাদের সঙ্গে কথা বলবে’। অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন জিজ্ঞেস করি, ‘দেখা করতে দেবেন না? আপনারা ভয় পেলে আমাদের যেতে দিন।’ তখন র্যাব জানায় অভিযান চলছে। কিছুক্ষণ পর জানায় সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তখন আমরা জিজ্ঞেস করি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো কিভাবে, তাদের গ্রেফতার করলেন কেন। তখন আমাদের বলা হয়, ‘আপনাদের যোগাযোগ করার দরকার নেই। আমরাই যোগাযোগ করবো।’ এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। আমার ভাইকে আমরা চিনি। সে অত্যন্ত ভদ্র। সে নিয়মিত বাড়িতে যেতো, যোগাযোগ করতো।’
এই বাড়ি থেকে গ্রেফতার জাফর মিয়ার ছোট ভাই মো. আবদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাফর আমার বড়। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজে গণিত বিষেয়ে মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। তার পরীক্ষা চলছে। আজও (রবিবার) পরীক্ষা ছিল। আমরা গরীব। আমি কাজ করি। ভাই টিউশনি করে লেখাপড়া করে। আড়াই হাজারের সম্ভুপুর এলাকায় আগুয়ানদি গ্রামে আমাদের বাড়ি। এসএসসির পর থেকে জাফর ভাই এই এলাকায় থাকে। দুই বছর আগে বিয়ে করেছে। টিউশনি করে পড়ালেখা করে। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। স্ত্রীও লেখাপড়া করে। রাত ৯টায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ফোন করে জানায় বাইরে থেকে ভাইদের আটকে রাখা হয়েছে। এরপর ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। সেও একই কথা জানায়। আমি রবিবার সকালে এসেছি। র্যাবকে বলি, আমার ভাই জঙ্গিটঙ্গি না। আমরা যেতে দেন, আমরা গিয়ে তাদের বের করে নিয়ে আসি। তবে আমাদেরকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। আমার ভাই কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না। সে কষ্ট করে লেখাপড়া করে।’
/এআরআর/এফএস/
আরও পড়ুন-
তালা মেরে ‘জঙ্গি আস্তানা’ ছেড়েছে র্যাব