বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশান ২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১৫৯ নম্বর বাড়িটি আপাতত সিলগালা অবস্থায় পুলিশ পাহারায় থাকছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে রাজউকের আইন অনুযায়ী বাড়িটি নিলামে বিক্রি করে দেওয়া, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দান, প্লট বা ফ্ল্যাট তৈরি করে বরাদ্দ অথবা রাজউকের দখলেও রাখা হতে পারে। রাজউক নিজের কাজেও বাড়িটি ব্যবহার করতে পারে। রাজউকের ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছে।
এ বাড়ি নিয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) আসমাউল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপাতত বাড়িটি সিলগালা অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে থাকবে। আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আসলে আমরাও এখনও বাড়িটির বিষয়ে বিস্তারিত জানি না।’
এদিকে, আদালতের রায়ে বুধবার (৮ জুন) গুলশান-২ এর ওই বাড়িটিতে উচ্ছেদ চালিয়ে দখলে নেয় রাজউক। এরপর থেকে সেখানে কয়েকজন পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। সেখানে রাজউক থেকে স্থায়ীভাবে আনসার সদস্য মোতায়েনের প্রক্রিয়াও চলছে। আনসার মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়িতে যাতে সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হয় সে বিষয়ে ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে রাজউক। বুধবার রাতে ওই চিঠিটি পাঠানো হয়।
রাজউক সচিব সুশান্ত চাকমা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল আপিল নং-৮১/২০১৪ ও ৮৩/২০১৪ এর রায়ের আলোকে রাজউকের মালিকানাধীন গুলশান আবাসিক এলাকার প্লট নং-৬, ব্লক নং-এনডব্লিউ (এইচ), ১৫৯ গুলশান এভিনিউস্থ প্লটের দখল গ্রহণ করেছে। উক্ত প্লটে প্রহরার নিমিত্তে আনসার নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আনসার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশের অনুরোধ করা হলো।’
এদিকে বাড়িটি ফেরৎ চেয়ে বুধবারই ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা করেন মওদুদ আহমেদ। আদালত এ বিষয়ে সরকার ও রাজউককে জবাব দেওয়ার জন্য আগামী ১৯ জুলাই দিন সময় বেঁধে দেন। মামলায় মওদুদ আহমদ নিজে বাড়িটির অধিকার ও দখল চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন। পাশাপাশি বাড়িটিতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারিরও আবেদন করেন তিনি।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মওদুদ আহমেদের সহকারী আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল যা ঘটেছে রাজউকের সে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে একটি রিট ফাইল করেছি। দুপুর দুইটার পর এ বিষয়ে শুনানি হবে।’
এর আগে বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বাড়ি ফেরৎ চেয়ে একটি (দেওয়ানি মামলা নং ৫৬১/১৭) মামলা করেন তিনি। আদালত এ বিষয়ে সরকার ও রাজউককে জবাব দেওয়ার জন্য আগামী ১৯ জুলাই দিন ধার্য করেন। তিনি বলেন, ‘মামলাটি চলমান অবস্থায় রাজউক বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে।’
এ বিষয়ে রাজউকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও আদালতের কোনও আদেশ আসেনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানতে পেরেছি নিম্ন আদালত থেকে আমাদের এ বিষয়ে জবাব দিতে একটা আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত জবাব চাইলে আমরা জবাব দিয়ে দেবো। তার সঙ্গে বাড়ি দখলে নেওয়ার কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমাদের মনে হয় না।’
রাজউকের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলশান-২ এর ওই বাড়িটির মতো অনেক বাড়ি রয়েছে রাউজকের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক পাকিস্তানি মালিক তাদের বাড়িঘর ছেয়ে পালিয়ে গেছেন। পরবর্তীতে সেসব বাড়ি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দখলে নেয় রাজউক। এরপর রাজউকের আইন আনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে বাড়িগুলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দান, নিলামে বিক্রি, প্লট/ফ্ল্যাট তৈরি করে বরাদ্দ অথবা রাজউকের দখলে রাখা হয়েছে। মওদুদ আহমেদের দখলে থাকা বাড়িটিও তার মতো হতে পারে। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব বিষয়গুলোও তোলা হবে। মূলত বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
/এসএস/এফএস/
আরও পড়ুন- উচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মওদুদের রিট