X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর নয়, সাগরের ইলিশে বাজার সয়লাব

শফিকুল ইসলাম
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:০৫আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:৫২

 

সাগরের ইলিশে বাজার সয়লাব নদীর নয়, সাগরের ইলিশে সয়লাব দেশের বাজার। রাজধানীর বাজার, মাঠ-ঘাট, অলিতে-গলিতে এখন মিলছে নানা সাইজের ইলিশ। আর দামে সস্তা হওয়ায় ইচ্ছা মতো মাছ কিনছেন নগরবাসী। তবে সাগরের ইলিশের স্বাদ কম হওয়ায় সন্তুষ্ট নন অনেকে। রাজধানীতে আকার ভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০০-৭০০ টাকায়। আর জাটকা বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি বছর ইলিশের সরবরাহ গত বছরের তুলনায় বেশি না হলেও কম নয়। বাজারে ছোট সাইজের ইলিশই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এগুলো মিয়ানমারের ইলিশ।

জেলেরা জানিয়েছেন, সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পদ্মা, মেঘনা বা ভোলার তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ বেশি ধরা পড়ে। চলতি বছরের এ সময়ে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়েনি। আশা করা হয়েছিল,  শ্রাবণের ভরা পূর্ণিমায় ধরা পড়বে নদীর ইলিশ। কিন্তু তাও হয়নি। শ্রাবণের পূর্ণিমার পর ভরা জোয়ার চলে গেছে, শেষ হয়েছে ভাদ্র মাসও। এখন চলছে আশ্বিন মাস। সেভাবে নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি।

বরগুনা, চাঁদপুর ও বরিশালের আড়তদাররা জানিয়েছেন, ইলিশ সাগরের লোনা পানির মাছ। ডিম ছাড়ার সময় হলে ইলিশ দলবেঁধে নদীতে আসে। ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নদীতে ডিম ছাড়তে এসে জেলেদের জালে ধারা পড়ে এসব ইলিশ। কিন্তু এবছর ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। অসংখ্য ডুবো চরে বাধা পেয়ে নদীতে আসতে পারেনি ইলিশ। সাগর মোহনায় ঘোরাফেরা করে সাগরেই ফিরে গেছে এসব ইলিশ। তাই নদীতে কম ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সাগরে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

সাগরের ইলিশ দাম কম হলেও স্বাদ কম ইলিশের স্বর্গরাজ্য বলে খ্যাত ভোলার তেঁতুলিয়া, পটুয়াখালীর পায়রা, পিরোজপুরের বলেশ্বর ও সন্ধ্যা এবং চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না।

বরিশালে আড়তদার আফজাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। সেই ইলিশ যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের আড়তে। সেখান থেকে নেওয়া হচ্ছে বরগুনা ও বরিশালে। আর সেখান থেকেই ট্রলার, নৌকা, লঞ্চ ও ট্রাকে করে সারাদেশের বাজারগুলোয় ইলিশ যাচ্ছে।’

চাঁদপুরের ইলিশ ব্যাবসায়ী সেকেন্দার আলী বলেন, ‘নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় চাঁদপুরের আড়তে সাগরের ইলিশই বেশি আসছে।’

এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইলিশ লোনা পানির মাছ। জলবায়ুর প্রভাব, নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও আবহাওয়ার পালাবদলে এবছর ইলিশ নদীতে আসেনি। তাই সাগর মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে।’

কাওরান বাজারের পাইকারী মাছ ব্যবসায়ী হোসেন আলী রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আড়তে আগের তুলনায় অনেক ইলিশ আসছে। দামও কম। আগে ইলিশের যে লট (২০ পিস) ১০ হাজার টাকায় কিনেছি। এখন তা কিনছি ৬/৭ হাজার টাকায়। আকার ছোট হলে (এক কেজির নিচে) দাম আরও কম।’

আড়তে আগের তুলনায় অনেক ইলিশ আসছে রাজধানীর তোপখানা রোডে হেঁটে হেঁটে ইলিশ বিক্রি করেন লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘আমি ২৬ বছর ধরে এ এলাকার পাড়া মহল্লায় ইলিশ বিক্রি করছি। এ বছর ক্রেতাদের অভিযোগ, ইলিশের স্বাদ কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাগরের তুলনায় নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি হওয়ায় দামও কিছুটা বেশি থাকে। কিন্তু এবার যে মাছ আমরা বিক্রি করছি সেগুলো পদ্মা, মেঘানা, তেঁতুলিয়া বা অন্য কোনও নদীর মাছ নয়। তাই দাম কম, স্বাদও কম।’   

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দেশের ১২৫টি উপজেলার নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘আর কয়েকদিন পরেই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হবে। ২০১১ সালে সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরা হয় আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগের তিন দিন ও পরের ১১ দিনসহ মোট ১৫ দিন। তবে এ বছর ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। কারণ নিষেধাজ্ঞার সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও অনেক মা ইলিশ সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার পথে ধরা পড়ে। এ জন্যই এ বছরের নিষেধাজ্ঞার সময় ৭ দিন বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। একটি মা-ইলিশ সর্বনিম্ন দেড় লাখ ও সর্বোচ্চ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর দেশে ৪ লাখ মেট্রিক টন ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরও ৪ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়। আশা করা হচ্ছে, ২০১৭ সালের শেষে দিকে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। মূলত মা ইলিশ সুরক্ষা ও ডিম ছাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করায় এ সফলতা এসেছে। মা ইলিশ রক্ষায় দেশের ১৫টি জেলায় ২ লাখ ২৪ হাজার ১০২টি জেলে পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ ভাগ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের নদ নদীতে ধরা মাছের ১২ শতাংশই ইলিশ। যা দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) এক শতাংশ অবদান রাখছে। তবে এক মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় নদীর পরিবেশ, জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম নিশ্চিত করতে পারলে বছরে ইলিশের বাণিজ্য হতো কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এ সময়ে  ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধিত জেলেদের ৪০ কোজি চাল দেওয়া হয়। দেশের ১৬টি জেলার প্রায় ২ লাখ ২৪ হাজার ১০২টি জেলে পরিবার এ খাদ্য সহায়তা পায়।




/এসআই/এসএনএইচ/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মুরগি, কমেছে ডিম ও মাংসের উৎপাদন
তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মুরগি, কমেছে ডিম ও মাংসের উৎপাদন
ব্রিটেনের সর্বপ্রথম ক‌নিষ্ঠ কাউন্সিলর বাংলাদেশি ইসমাইল
ব্রিটেনের সর্বপ্রথম ক‌নিষ্ঠ কাউন্সিলর বাংলাদেশি ইসমাইল
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু
মেসির ৫ অ্যাসিস্ট আর সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে বড় জয় মায়ামির
মেসির ৫ অ্যাসিস্ট আর সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে বড় জয় মায়ামির
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি