X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফরেনসিক মেডিসিন শিক্ষার বেহাল দশা!

জাকিয়া আহমেদ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৩আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৩

ঢামেক ফরেনসিক বিভাগ

‘১০ দিনের শিক্ষা কী আমাদের প্রকৃত শিক্ষাটা দিতে পারে, নাকি এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে ঠিকমতো শিক্ষা নেওয়া যায়? যেখানে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ফরেনসিক মেডিসিনের ময়নাতদন্ত বিষয়ে সময় পাচ্ছে দেড় থেকে দুই বছর,সেখানে আমরা পাচ্ছি মাত্র ১০ দিন। এই কয়দিনে কী প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেওয়া যায়,নাকি দেওয়া যায়?’ এসব প্রশ্ন রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজছাত্রীর।

নিজের নাম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে অন্য হাসপাতালে আসতে হবে জানলে মেডিক্যালেই ভর্তি হতাম না। একটা কক্ষের ভেতরে ময়নাতদন্ত শিখতে হচ্ছে, বসার জায়গা নেই। যে কক্ষে ময়নাতদন্ত হচ্ছে সেখানে ভ্যাপসা গরম। এভাবে কী এত স্পর্শকাতর বিষয়ে শেখা যায়?’ পাশ থেকে আরেক ছাত্রী বলেন, ‘এখানে যেদিন আমাদের ক্লাস থাকে, সেদিন আরও অনেক মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস থাকে। একইদিনে কয়েকটি কলেজের ক্লাস থাকে বলে শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,বাংলাদেশে মোট সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৩১টি। এর মধ্যে কেবল ১৩টি কলেজে ময়নাতদন্ত করা হয়। ফলে অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা এই ১৩টি কলেজে এসে ১০ দিনের জন্য হাতে-কলমে ময়নাতদন্ত বিষয়ের ওপর শিক্ষা নিয়ে থাকেন।

এদিকে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে ফরেনসিক মেডিসিনের পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) বিষয়ের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ঢাকায় ময়নাতদন্ত হয় কেবল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সম্প্রতি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের অনুমতি পেলেও সেখানে এখনও কাজ শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে যদি পাঁচ জন করেও (একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক এবং দু’জন প্রভাষক) শিক্ষক দরকার হয়, তাহলে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৫ জন। কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে, সারাদেশে ফরেনসিক মেডিসিনে ডিগ্রিধারী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩১ জন। ফরেনসিক মেডিসিনে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেক মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে যেখানে ডিগ্রিধারী কোনও চিকিৎসক-শিক্ষক নেই। নেই কোনও অভিজ্ঞ চিকিৎসক। অথচ ‘স্বাস্থ্যনীতি ২০১১’ তে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে নন-ক্লিনিক্যাল বিষয়ের শিক্ষক এবং তাদের নন-প্র্যাকটিসিংয়ের বিষয়ে ভাতা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হলেও, এখনও সে বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আ ম সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১২ বছর পর আমরা মর্গ পেলেও এখনও সেখানে কাজ শুরু হয়নি।  দেরিতে হলেও মর্গে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসেই এ বিষয়ে   হাতে-কলমে শিক্ষা নিতে পারবে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান এবং দ্য মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর মহাসচিব ডা.সোহেল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের সরকারি ৩১টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে মাত্র ১৩টিতে ময়নাতদন্ত হয়। শিক্ষার্থীরা ঢাকার ভেতরে দু’টি কলেজে এসে ১০ দিনের জন্য হাতে-কলমে এ বিষয়ে শিক্ষা পেয়ে থাকে।’

তবে ১০ দিন মোটেও পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘মোটামুটি একটি আইডিয়াদেওয়া হয় বটে। কিন্তু একেবারে উপযুক্ত শিক্ষাটা যে তারা পায়- এটা বলা একেবারেই অনুচিত। কিছু প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান হয়তো তাদের হয়, কিন্তু পোস্ট গ্রাজুয়েট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া সম্ভব হয় না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ- ফরেনসিক মেসিডিনের প্রতি যেন চিকিৎসকরা আগ্রহী হন,সেজন্য কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে। কারণ, ফরেনসিক মেডিসিন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি সেক্টর।চিকিৎসকদের আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিতে হয়। বিভিন্ন মামলার প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে হয় তাদের। এতে করে তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা সম্ভব হয় না। সরকারি চাকরির পাশাপাশি প্র্যাকটিস করে আর্থিক স্বচ্ছ্লতা আনা সম্ভব হয় না।’

সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যেহেতু ময়নাতদন্তের ভিত্তিতে অনেক মামলার রায় হয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই প্রতিবেদন যাদের বিপক্ষে যায়, তারা অনেক সময় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করে।যে কারণে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা হুমকির মধ্যে থাকেন।  এসব কারণে সরকারের উচিত এই বিভাগের চিকিৎসকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা।  তাহলে অনেক চিকিৎসক এই বিভাগে আসতে আগ্রহী হবেন এবং তখনি এই বিভাগ উন্নত হবে।’

সরকার যদি এই বিভাগের জন্য কিছু করে, তাহলেই সব মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ সমৃদ্ধ হবে বলেও জানান ডা. সোহেল মাহমুদ।

এ বিষয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. নাহিদুজ্জামান রিমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফরেনসিক মেডিসিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এভাবে কমতে থাকলে এবং এখনকার সিনিয়ররা অবসরে গেলে আগামীতে এই সেক্টরে শূণ্যতার সৃষ্টি হবে। আগামী কয়েক বছরে এ বিষয়ে শিক্ষক পাওয়াও হয়তো দুষ্কর হয়ে যাবে। তাই ফরেনসিক মেডিসিনে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

আরও পড়ুন: 


প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগ যাচাই ছাড়াই শিক্ষার্থীকে হলছাড়া করলো কর্তৃপক্ষ!

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!