মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ পুলিশ সদস্যরাই গড়ে তুলেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। তাই জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে রাজারবাগের শহীদ পুলিশ সদস্যদের স্মরণ করে।’
রবিবার (২৫ মার্চ) রাতে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ কালরাতে আমি প্রত্যক্ষভাবে অনেক কিছুই দেখেছি। ওই রাত আমি রাস্তায় কাটিয়েছি, অনেক মানুষের মৃত্যু দেখেছি, অনেক লাশ দেখেছি।’
পরে রাত সাড়ে ১২টায় মোমবাতি প্রজ্বালন করে স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন করা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশে ফিরে এসেছিলেন, সেদিন পুলিশের উদ্দেশে বলেছিলেন- ‘তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। তোমাদের জনগণের বন্ধু হতে হবে।’ সেই পুলিশ আজ জনগণের বন্ধু হতে পেরেছে। তারা জনগণেরর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করছে, সহযোগিতা করছে।’’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক-সাহিত্যিক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে একরাতে এত মানুষ হত্যার আর কোনও নজির নেই। অপারেশন সার্চলাইটের নামে মানুষকে হত্যা করে বাঙালির স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।’
গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না; ওরা সেটা পারেওনি। তবে আমাদের একটা দুর্ভাগ্য, স্বাধীন দেশে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। তারা এখনও আমাদের দেশে আছে। স্বাধীনতার এই প্রথম প্রহরে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে- স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে আমরা প্রতিহত করব।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এতে প্রাণ দিয়েছিলেন হাজার হাজার নিরীহ বাঙালি।
এর আগে, জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশ এক মিনিট অন্ধকারাছন্ন করে রাখা হয়। গণহত্যার শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে যার যার অবস্থান থেকে এ সময় নিভিয়ে দেওয়া হয় সব ধরনের আলো।
স্বাধীনতার প্রথম প্রহরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ বেতারের কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর প্রমুখ।
আরও পড়ুন-
লাল-সবুজে রাজধানী
‘কালরাত’ স্মরণে একমিনিট নেভানো ছিল সব বাতি
আজ আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের